শেরপুরের সীমান্তবর্তী এলাকায় হাজার হাজার একর জমি পানি সংকটের কারনে বোর মৌসুমে চাষাবাদ করা যায় না। পানি সংকটের কারনে বোরচাষ আবাদ না করতে পারায় কৃষকরা জমি থাকতেও উৎপাদন থেকে বঞ্চিত। জমি থাকতেও ধান উৎপাদন করতে না পারায় খাদ্য সংকট বাড়ছে। অপরদিকে দেশের খাদ্য উৎপাদনে ব্যহত হচ্ছে। তাই সীমান্ত অঞ্চলে ভারত থেকে নেমে আসা জলাধার সেমেশ্বরী নদীতে রাবারড্যাম নির্মাণ করা হলে হাজার হাজার একর জমি চাষের আওতায় আসবে। এতে কৃষকরা লাভবান হবে।
জানা যায়, ঝিনাইগাতীতে সোমেশ্বরী নদীর তাওয়াকুচা এলাকায় একটি রাবারড্যাম নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। সীমান্তবর্তী পাহাড়ি অঞ্চলের প্রান্তিক চাষিরা বোর চাষের জন্য এ দাবি জানিয়ে আসছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, সোমেশ^রী নদীর উপর একটি রাবারড্যাম নির্মাণের দাবি এখন সীমান্তবর্তী দুই উপজেলার কৃষকদের প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন সময় আশ্বাসও পাওয়া যায় জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে। তবে, আজও তা বাস্তবায়ন হয়নি। এতে প্রতি বছর বোরো মৌসুমে সেচ সংকটে পড়তে হয় ঝিনাইগাতী উপজেলার তাওয়াকুচা, গুরুচরণ দুধনই, পানবর, জুকাকুড়া, আয়নাপুর, দুপুরিয়া, কারাগাঁও, বাগেরভিটা, দাঁড়িয়ারপাড়, কান্দুলী, জড়াকুড়া, কালিনগর, ধলি, গজারমারিসহ ১৫টি গ্রামের কৃষক।
উল্লেখ্য, ভারত থেকে নেমে আসা সোমেশ্বরী নদীটি শ্রীবরদী উপজেলার খাড়ামুড়া ও বালিজুড়ী হয়ে ঝিনাইগাতী উপজেলার মধ্যে প্রবেশ করে। নদীটির প্রবেশপথ শ্রীবরদীতে হলেও পুরো নদীটি বিস্তৃত ঝিনাইগাতী উপজেলায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ নদীর পানি সেচ কাজে ব্যবহার করে ঝিনাইগাতী উপজেলার প্রায় ৫ হাজার কৃষক, প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করে থাকে। অপরদিকে ওই নদীর পানি দিয়ে শ্রীবরদী উপজেলার ৬শ’ একর জমিতে আবাদ হয়। আর এ ৬শ’ একর জমির বোরো আবাদ করতে প্রতিবছর শুস্ক মৌসুমে সোমেশ্বরী নদীর উজানে বালিজুরি এলাকায় বাঁধ নির্মাণ করে নদীর গতিপথ বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে সেচ সংকটে পড়ে ভাটি অঞ্চলের ১৫ গ্রামের কৃষকের প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও কৃষকরা জানান, সোমেশ্বরী নদীর উজানে তাওয়াকুচা একটি রাবারড্যাম নির্মাণ করা হলে দু’উপজেলার কৃষকদের সেচ সংকট সমাধান হবে। এছাড়া স্বল্পমূল্যে রাবারড্যামের পানি সেচ কাজে ব্যবহার করে দুই উপজেলার কৃষকরা অধিকহারে বোরো আবাদ করতে সক্ষম হবে।
রানিশিমুল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ সোহাগ ও কাংশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন, নদীতে একটি রাবারড্যাম নির্মাণ হলে দুই উপজেলার সেচসংকট সমাধান হবে। এতে প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমি বোরো চাষের আওতায় চলে আসবে।
ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন দিলদার বলেন, সোমেশ্বরী নদীতে রাবারড্যাম নির্মাণ করা হলে উভয় উপজেলার কৃষকদের সেচ সংকটের সমাধান হবে এবং ব্যাপক আকারে চাষাবাদ হবে। এতে কৃষি ক্ষেত্রে ঘটবে বিপ্লব।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডি’র শেরপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কৃষকদের দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৫ সালে সোমেশ্বরী নদীর উপর রাবারড্যাম নির্মাণের জন্য প্রকল্প প্রণয়ন করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হয়। বরাদ্দ পাওয়া গেলেই রাবারড্যাম নির্মাণ করা হবে।