নড়াইলের কালিয়া উপজেলার নবগঙ্গা নদীর মহাজন-বড়দিয়া ঘাটে প্রায় এক বছর আগে দুটি ফেরি আনা হলেও ফেরি চলাচল শুরু হয়নি। অলস পড়ে আছে ফেরি দুটি। স্থানীয়দের জিজ্ঞাসা কবে চালু হবে ফেরি দুটি। অভিযোগ সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের উদাসীনতার কারণে ফেরি চালু হচ্ছে না। অপরদিকে সওজের কর্মকর্তারা বলছেন, জনবল সংকটের কারণে ফেরি চালু করা সম্ভব হচ্ছে না।
নবগঙ্গা নদীর পশ্চিম পারে মহাজন বাজার, লোহাগড়া উপজেলা ও নড়াইল জেলা সদর এবং পূর্ব পারে বড়দিয়া বাজার, নড়াগাতী থানা ও কালিয়া উপজেলা। বড়দিয়া বাজার এক সময় বিখ্যাত নৌবন্দর ছিল। এখানে আছে নৌ পুলিশ ফাঁড়ি। বড়দিয়া ও মহাজন বাজারে দুটি জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় টিন বিক্রির বড় মোকাম অবস্থিত।
বড়দিয়া ও মহাজন বাজারে কয়েকটি ব্যাংক, এনজিওর কার্যালয় ও বড় খাদ্যগুদাম রয়েছে। এর আশপাশে রয়েছে মুন্সি মানিক মিয়া ডিগ্রি কলেজ, বড়দিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মাধ্যমিক বিদ্যালয়, টুনা ইসলামিয়া মাদ্রাসা ও মহাজন মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ অন্তত ২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
স্থানীয় সূত্র জানায়, এ ঘাটে কোনো গাড়ি পারাপার করা যায় না। নৌকায় পারাপারের ব্যবস্থা বিদ্যমান। গাড়ি পার করতে হলে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার পথ ঘুরে গোপালগঞ্জের চাপাইল সেতু বা কালিয়ার বারইপাড়া ফেরি পার হয়ে আসতে হয়। কোন অসুস্থ রোগী দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সে গোপালগঞ্জ, খুলনা, নড়াইল অথবা ঢাকায় নিতে হলে অনেক পথ ঘুরে যেতে হয়। মহাজন ঘাট পর্যন্ত দূরপাল্লার বাসসহ অন্যান্য যাত্রীবাহী বাস চলাচল করে। ফেরি চালু হলে নড়াগাতী ও কালিয়ায় বাস চলাচল সহজতর হবে।
এ বিষয়ে কথা হলে বড়দিয়া বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জগদীশ চন্দ্র সরকার বলেন, বড়দিয়া ও মহাজন ঐতিহ্যবাহী পুরোনো বড় বাজার। ফেরি চালু না হওয়ার কারনে পণ্য পরিবহনের জন্য কাভার্ড ভ্যান, ট্রাক, পিকআপ, ট্রলি, ভ্যান, নছিমন চলতে পারছেনা। এ জন্য এ দুটো ঘাটে এসে কুলি দিয়ে পণ্য নামিয়ে নৌকায় ওঠাতে হয়। এতে ভোগান্তি এবং খরচ দুটোই বাড়ে। এ ছাড়া উভয় পাড়ের নৌকার ঘাট সমতল নয়। তাই নৌকায় ওঠা-নামা করতে সাধারন মানুষের অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
মহাজন-বড়দিয়া খেয়াঘাটের একশত ফুট উত্তরে উভয় পাড়ে পন্টুন ও সংযোগ সড়ক প্রস্তুত করা হয়েছে। মহাজন পাড়ে পন্টুনের সঙ্গে দুটি ফেরি বাঁধা রয়েছে। তবে ফেরি দুটি চালু না হওয়ায় ভোগান্তিতে রয়েছে দুই পাড়ের মানুষ। তাই পারাপারের জন্যে এখনও নৌকাই সাধারণ মানুষের শেষ ভরসা। দ্রুত ফেরি চালুর আশা এলাকাবাসির।
নড়াইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামান বলেন, এক বছর আগে এখানে ফেরি আনা হলেও পন্টুন ও সংযোগ সড়ক প্রস্তুত ছিল না। সম্প্রতি তা প্রস্তুত করা হয়েছে। এখন লোকবল সংকটের কারণে ফেরি চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। লোহাগড়া উপজেলার কালনা সেতু চালু হলে সেখানকার লোকবল দিয়ে এ ফেরি দুটি চালু করা হবে বলে তিনি এ প্রতিনিধিকে জানান।
কালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম বলেন, ফেরি চালু না হওয়ায় জনগণের ভোগান্তি হচ্ছে এটা সত্য। বিষয়টি নিয়ে সওজ বিভাগের সঙ্গে কথা হয়েছে। জেলা প্রশাসনকে বিষয়টি জানাব। আশা করছি দ্রুত ফেরি চলাচল শুরু হবে।
আনন্দবাজার/শহক