বৃহস্পতিবার, ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শেষই হচ্ছে না সেতু নির্মাণ!

শেষই হচ্ছে না সেতু নির্মাণ!
  • দুর্ভোগ চরমে
  • শ্রেণিকক্ষে নির্মাণ সামগ্রী
  • বিকল্প যাতায়াতের ব্যবস্থা না করেই সেতু নির্মাণ

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের সুলতানাবাদ ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা-সংলগ্ন দক্ষিণ পাশে খালের ওপর নির্মাণাধীন সেতু। যাতায়াতের বিকল্প ব্যবস্থা না করেই চলতি বছরের মার্চের শেষ দিকে সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সেতুর নির্মাণ সামগ্রী রাখা হয়েছে শ্রেণিকক্ষে। এদিকে গেল সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে বন্ধ রয়েছে সেতুর নির্মাণ কাজ। বিকল্প যাতায়াতের ব্যবস্থা না থাকায় লোহার বিমের ওপর দিয়ে পারাপার হচ্ছে মানুষ। এভাবে গত ৭ মাস ধরে শিক্ষার্থী, রিকশা ও অটোচালকসহ সংশ্লিষ্ট এলাকার এক সহাস্রাধিক মানুষ চরম ভোগান্তিতে পোহাচ্ছেন। অপরদিকে পাঠদান কক্ষে সেতুর নির্মাণ সামগ্রী রাখায় পাঠদান বিঘিœত হচ্ছে। এছাড়াও দরপত্র অনুযায়ী নির্মাণ কাজ না করার অভিযোগ রয়েছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের বিরুদ্ধে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থ বছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আওতায় সুলতানাবাদ ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা-সংলগ্ন দক্ষিণ পাশে খালের ওপর ১৫ মিটার লম্বা সেতুটি নির্মিত হচ্ছে। এতে নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৬ লাখ ৬৪ হাজার ৪০৯ টাকা। দরপত্রের মাধ্যমে নির্মাণ কাজের দায়িত্ব পায় ঠিকাদারি জামাল হোসেন। তবে শ্রমিক দিয়ে নির্মাণ কাজটি করাচ্ছেন বাউফল উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শাহজাহান সিরাজ।

বুধবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, সেতুটির ওপরের অংশে ঢালাইয়ের জন্য রড বাঁধা রয়েছে। রডে মরিচা পড়েছে। রডের নিচে সাটারিংয়ে লোহার প্লেট ও খুটি ব্যবহার করার কথা থাকলেও কাঠের টুকরা ও বাঁশ ব্যবহার করা হয়েছে। নির্মাণ সামগ্রী রাখা হয়েছে মাদ্রাসাটির শ্রেণিকক্ষে ও পাশের কমিউনিটি ক্লিনিকের সামনে। বিকল্প যাতায়াতের ব্যবস্থা করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। স্থানীয় লোকজন লোহার বিম ফেলে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। ঝুঁকিপূর্ণ ওই বিমের ওপর দিয়ে এক যুবককে মোটরসাইকেল নিয়ে পার হতে দেখা গেছে।

আরও পড়ুনঃ  লিচুগাছের সেই আম ছিঁড়ে নিলেন মেম্বার

সুলতানাবাদ ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা মোশারেফ হোসেন বলেন, কোনো প্রকার অনুমতি ছাড়াই মাদ্রাসার দুটি শ্রেণিকক্ষ দখল করে সেতুটির নির্মাণ সামগ্রী রাখা হয়েছে এবং ওই কক্ষে শ্রমিক থাকার কারণে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির পাঠদান বিঘিœত হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, বিকল্প যাতায়াতের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী রেদোয়ান ঝুঁকিপূর্ণ লোহার বিমের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় খালের মধ্যে পড়ে আহত হয়েছে। এর আগে অন্তত ২০ শিক্ষার্থী খালে পড়ে আহত হয়েছে। যাতায়াতের ব্যবস্থা না থাকায় অনেক শিশু শিক্ষার্থীরা মাদ্রাসায় আসা বন্ধ করে দিয়েছে। তিনি যাতায়াতের বিকল্প ব্যবস্থা করাসহ দ্রুত সেতু নির্মাণের দাবি জানান।

রিকশা চালক সুমন বলেন, গত প্রায় সাত মাস ধরে একপাশ থেকে আরেক পাশে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ কারণে দুই কিলোমিটার পথ ঘুরে বাড়ি ফিরতে হয়। যাতায়াতের বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় যাত্রীদের নিয়ে এপার থেকে ওপারে যেতে পারছেন না তারা। আগে প্রতিদিন রিকশা চালিয়ে পাঁচশ থেকে ছয়শ টাকা পেতেন, এখন আড়াইশ টাকার বেশি আয় করতে পারছেন না। এ কারণে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’ এরকম কষ্টে জীবন-যাপন করছেন ওই এলাকার অন্তত অর্ধশত রিকশা ও অটোগাড়ি চালকের পরিবার।

যুবলীগ নেতা শাহজাহান সিরাজ মুঠোফোনে বলেন, পিআইও সাহেব না থাকায় ঢালাই দেওয়া হয়নি। খুব শিগগির ঢালাই দেওয়া হবে। যাতায়াতের বিকল্প ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ভেঙে গেছে, ফের করে দেওয়া হয়েছে। পাঠদানের একটি কক্ষে মামলামাল রেখেছি। আশা করছি খুব কম সময়ের মধ্যে ঢালাই দিতে পারবো। লোহার প্লেট ও খুটির সাটারিংয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, কথা থাকলেও সবাই কাঠের সাটারিং ব্যবহার করেন, তিনিও কাঠের সাটারিং ব্যবহার করেছি।

আরও পড়ুনঃ  ফুল দিয়ে বাড়ি যাওয়ার অনুরোধ সেনাবাহিনীর

তবে, পিআইও রাজিব বিশ্বাস বলেন, তার কারণে ঢালাই না দেওয়ার কথা সঠিক না। লোহার প্লেট ও লোহার খুটির সাটারিং ব্যবহার না করার কারণে ঢালাই দিতে নিষেধ করা হয়েছে। সঠিকভাবে লোহার প্লেট ও লোহার খুটির সাটারিং করার পরে ঢালাই দিতে বলায় কাজ বন্ধ রেখেছে। আশা করছি খুব শিগগির দরপত্র অনুযায়ী সেতুটির নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল আমিন বলেন, শ্রেণিকক্ষের মধ্যে নির্মাণ সামগ্রী রাখার কোনো সুযোগ নাই। অবশ্যই বিকল্প যাতায়াতের ব্যবস্থা করতে হবে। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন