ইউক্রেনের চারটি অঞ্চল তথা দোনেৎস্ক, খেরসন, লুহানস্ক ও জাপোরিঝঝিয়াতে গণভোটের মধ্য দিয়ে রুশ ফেডারেশনে অন্তর্ভুক্ত করে মস্কো। এসব গণভোট ও অন্তর্ভুক্তকরণকে অবৈধ উল্লেখ করে ইউরোপের দেশ আলবেনিয়ার উদ্যোগে জাতিসংঘের (ইউএন) সাধারণ পরিষদে একটি নিন্দা প্রস্তাব আনা হলে বাংলাদেশসহ ১৪৩টি দেশ রাশিয়ার বিপক্ষে ভোট দিয়েছে।
ভারত, চীন, পাকিস্তানসহ ৩৫টি দেশ ভোটদানে ছিল বিরত। রাশিয়াসহ এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে বেলারুশ, উত্তর কোরিয়া, সিরিয়া ও নিকারাগুয়া।
এই প্রস্তাবে রাশিয়ার বিপক্ষে ভোট দেয়ায় বাংলাদেশের সঙ্গে রাশিয়ার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোন প্রভাব পড়বে কিনা এ বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, জাতিসংঘে এ প্রস্তাবটি এনেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এখানে ইউএন চার্টারের রেফারেন্স দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ইউএন চার্টারের প্রতি সবসময় সম্মান প্রদর্শন করে থাকে। ইউএন চার্টারের চ্যাপ্টার ১ এর আর্টিকেল ২ অনুচ্ছেদের ৪ নং ধারায় বলা আছে সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি সম্মান, সমস্ত বিরোধের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি, জাতিসংঘ সনদ এবং অন্যান্য মৌলিক নীতি বিবেচনায় আমরা সমর্থন করি। সেক্ষেত্রে অন্যের ভূমি দখল আমরা সমর্থন করি না। দুটি দেশের মধ্যে যুদ্ধ কাম্য নয় তথাপি যুদ্ধ যদি হয় অন্যের ভূমি দখল সেটিও সমর্থনযোগ্য নয়। এটি ইউএন চার্টারের আইনের লঙ্ঘন। সেই অনুযায়ীই নিন্দা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে বাংলাদেশ।
মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, আমরা ভোটদানের পর ব্যাখ্যায় বলেছি, ইউএন চার্টারের প্রতি আমরা আনুগত্যশীল। পৃথিবীর সব দেশেই এই বিষয়ে বাংলাদেশের চিন্তা এক। ইসরাঈল ও অন্যান্য আরব দেশ বিষয়ে একই মনোভাব পোষণ করি। আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় তা বন্ধে কূটনৈতিক বিষয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পক্ষে আমরা। আশা করি এখানেই সবকিছু বলা আছে। বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) সকালে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। তবে প্রতিমন্ত্রী দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে কোন প্রভাব পড়বে কিনা সে বিষয়ে কোন কথা বলেননি।
বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) রাজধানী ঢাকার সেগুনবাগিচাস্থ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালরে আনক্লোস হলে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের নির্বাচনে বাংলাদেশের বিজয় ও রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে ইউক্রেনের পক্ষে ভোট প্রদান ও মার্কিন ডেপুটি সেক্রেটারি অব স্টেট ওয়েন্ডি আর শেরম্যানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনটির আয়োজন করা হয়। সাংবাদিক সম্মেলনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সেক্টরের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
শুরুতে লিখিত বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, বাংলাদেশ সময় বুধবার ১২ অক্টোবর জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের নির্বাচনে ১৮৯টি ভোটের মধ্যে ১৬০ ভোট পেয়ে ২০২৩-২৫ সালের জন্য সদস্য নির্বাচিত হয়েছে। এটি পঞ্চমবারের মতো বিজয়। এর আগে ২০০৬, ২০০৯ ২০১৪ ও ২০১৮ সালে মানবাধিকার পরিষদে দায়িত্ব পালন করে বাংলাদেশ। আর ১৯৯৮ সাল থেকে সবচেয়ে বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন ছিল এটি। এতে বিশে^ মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করবে বাংলাদেশ। কেননা মানবাধিকার ক্যানভাস অনেক বড়। ভালো থাকাও যে মানবাধিকারের বড় বিষয় সেটি জাতিসংঘে তুলে ধরেছে বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, ১২ অক্টোর রাতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিষয়ে রেজুলেশনের পক্ষে বাংলাদেশ ভোট দিয়েছে। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি সম্মন ও সার্বভৌত্বকে সমর্থন করে থাকে।
ওয়েন্ডি আর শেরম্যানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে বৈঠক হয়েছে। তিনি ২০১৫ সালে বাংলাদেশে সফর করেছিলেন। ৭৫ মিলিয়নের বেশি টিকা দিয়ে সহায়তা দেয়ায় তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা হয়। জলবায়ু সম্মেলনের আউটকামগুলো নিয়ে তিনিও অগ্রগতি দেখতে আগ্রহী। জন কেরি ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সফর করলে জলবায়ু ইস্যুতে সামনে তুলে ধরা হয়েছিল তা উল্লেখ করা হয়।
গ্লোবাল মিথেন প্লেসে যোগ দিতে মার্কিনীরা আহ্বান জানিয়েছে। তা ছাড়া র্যাব ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে এলডব্লিউটিএর সেসব সুযোগ পাওয়া দরকার তা অব্যাহত রাখতে আহ্বান জানিয়েছি। আর বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিকে ফিরিয়ে দিতে বহির্সমর্পণ চুক্তির বিষয়ে কথা হয়।
তিনি আমাদের দেশে নির্বাচন ফ্রি এন্ড ফেয়ার প্রত্যাশা করেন। সে প্রশ্নের আলোকে বলেছি রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটির মাধ্যমে ইসি নিয়োগ দিয়েছেন। কে নির্বাচনে আসবে আর কে আসবে না তা নিজেদের ব্যাপার।
দেশের নির্বাচন নিয়ে সাংবাদিকদের ভিন্নদেশের লোক কথা বলতে মানা করা হয়েছে এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন নিয়ে কারো মুখ বন্ধ করতে পারবো না। ওয়েন্ডি আর শেরম্যান কথা তুলেছে কিছু কথা তো বলতেই হয়। আর নির্বাচন সুষ্ঠু করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যা কাজ তা আমরা করবো।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ যত দ্রুত সময়ে উন্নত রাষ্ট্রের দিকে গেছে পৃথিবীর কোন রাষ্ট্রই এতো দ্রুত উন্নতির দিকে আসেনি। যদিও ৩২ বছর সেনা সাশনে ছিল। সেখানে আওয়ামী লীগের মাত্র ১৮ বছর। ১৯৩টি দেশের মধ্যে খুব কম রাষ্ট্রই এই স্থানে আসতে পেরেছে।
তিনি বলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বুধবার চট্টগ্রামের জনসভায় বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে বিশে^র নেতৃবৃন্দের প্রতি যে আহ্বান জানিয়েছে তা দেশবিরোধী (রাষ্ট্রদ্রোহিতার সমান) কাজ করেছেন। বরং তারেক রহমান যে ভুল করেছে সেজন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তাদের মাফ চাওয়া দরকার।
আনন্দবাজার/কআ