সারাদেশের পর্যটন স্পটে ডিএসএলআর ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলে আয় করছেন তরুণরা
সৌখিনতায় তরুণদের আয়ের উৎস ডিএসএলআর ক্যামেরা। আপনি চাইলে প্রতিনিয়ত ৫শ’ থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন। চাইলে সৌখিন ফটোগ্রাফারও হতে পারেন। শখের চলে চলবে আয়, হবেন আধুনিকতার আদলে ফটোগ্রাফার। সারাদেশে সেটাই দেখা যাচ্ছে। উঠতি তরুণরা প্রতি মাসে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা আয় করছে। দেশের দর্শনীয় স্থান কক্সবাজার, কুমিল্লা বোদ্ধবিহার, শালবন, বিভিন্ন পার্ক, সিলেটের জাফলং, রাঙামাটি, বান্দরবান, কুয়াকাটা, সুন্দরবন সমুদ্র সৈকতের মত দর্শনীয় স্থানে দর্শনার্থীদের ছবি তুলতে ডিএসএলআর ক্যামেরাসহ তরুদের দেখা যাচ্ছে।
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার মেঘনা নদীর পাড়। নদী ভাঙন রক্ষায় এখানে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। দূর-দূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীদের ভিড়ে স্থানটি পর্যটন স্পটে পরিণত হয়েছে। স্থানটি দেখতে সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের মত। গত কয়েক বছর দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা এখানে আসছেন।
পর্যটকদের স্মৃতি ধরে রাখতে ফটোগ্রাফারের কাজ করছে স্থানীয় কিছু উঠতি বয়সি তরুণ। তারা মাত্র ৫ টাকার বিনিময়ে তুলে দিচ্ছেন এক কপি ছবি। আর তরুণদের আয়ের উৎস তৈরি করছেন। ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলে জীবিকানির্বাহ করেণ রাকিব। ২০১৪ সালে তার বাবা মারা যায়। তখন সে ৫ম শ্রেণিতে পড়ে। অভাবের সংসার, এক ভাই, চার বোন, মা রয়েছে। কোনোমতে ভাইয়ের আয় দিয়ে চলছে সংসার। তিন বোনের বিয়ে হয়েছে। বাবা মারা যাওয়ার কিছুদিন পর পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। বাবা ভ্যান গাড়ি চালাতেন। বাবা মারা যাওয়ার পর দু’বোন সহ তিনজন লেখাপড়া করতেন। তখন বোনদের লেখাপাড়া এবং সংসার চালাতে খুব কষ্ট হতো। সংসারের হাল ধরতে কেউ ছিল না। ভাই ছিল ছোট, কোন কিছু করতেন না। পরে অটো-সিএনজি চালাতে শুরু করে। এবং সংসারের হাল ধরেন।
বর্তমানে রাকিবের বয়স ১৮ বছর। গত দেড় বছর ধরে মেঘনার পাড়ে পর্যটক ও ঘুরতে আসা ভ্রমণ প্রেমিদের ছবি তুলে দিচ্ছে সে। এতে তার প্রতিদিন আয় ৫শ থেকে ৮শ টাকা। প্রতিদিনের আয় দিয়ে পরিবার এবং নিজের খরচ খুব সুন্দর ভাবে চলছে। ক্যামেরা তার জীবনের হতাশা আর কষ্ট দুর করে দিয়েছে। সে এখন অনেক খুশি।
রাকিব আরও জানায়, বাবা মারা যাওয়ার পর অভাবে লেখাপড়া বন্ধ হলে খুব হতাশ ছিলাম। কি করবো, কোথায় যাবো..পরে দেখলাম একটা ক্যামেরা হলে আয় করা যায়। এবং বড় ভাই’র কাছ থেকে বাকিতে ক্যামেরা নিয়ে ছবি তুলে আয় শুরু করি। প্রতিটি ছবির মূল্য ৫ টাকা।
আরেক যুবক বাদশা। নামটা রাজা ও বাদশার মতই। তবে গল্পটা ভিন্ন। বাদশার বাবার চায়ের দোকান করতেন। ভাইয়ের সঙ্গে চা দোকানে সময় দিতেন। সে পড়ে একাদশ শ্রেণিতে। হঠাৎ মাথায় বুদ্ধি আসলে অন্যের ডিএসএলআর ক্যামেরা নিয়ে সমুদ্রের পাশে উৎসুক ভ্রমণকারীদের ছবি তুলতে শুরু করেন। বেশ আয় হচ্ছে। প্রতিদিন ৫শ থেকে ৯শ’ টাকা আয় হচ্ছে। নিজের এবং পরিবারের কিছু বেশ আয় হচ্ছে। বাদশা জানায়, পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না। কোনোমতে দিন চলছে। চায়ের দোকান করে তো সবার পেট চলে না। তাই কি করমু চিন্তা করতে করতে মাথায় বুদ্ধি আসলো এবং শুরু করে দিলাম ছবি তোলা। গত দেড় বছর ছবি তুলে আয় করতেছি। এখন মনে হচ্ছে নিজের আয়ে চলছি। বেকার না। খুব ভালো লাগছে। নিজের আয়ে নিজে চলছে অনেক আনন্দ পাচ্ছি। ছোট একটা কাজের ব্যবস্থা হলো।
প্রতিদিন সমুদ্র পাড়ে প্রায় ৩০ জন উঠতি বয়সি ছেলেরা পর্যটকদের ছবি তুলে আয় করছে। কিশোর বয়সে ছেলেরা যখন বিভিন্ন মাদকে নষ্ট হচ্ছে সেই বয়সে এরা ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলে আয় করছে। বেকারত্ব দুর করছে। পরিবারকে বেকারত্ব থেকে মুক্তি দিচ্ছে। এদের দেখলে সত্যি স্বপ্ন জাগে।