যান্ত্রিক শহরে বিনোদনের স্থান দিনে দিনে কমে যাচ্ছে। আগে শহরের বিভিন্ন জায়গায় খেলার মাঠসহ বিভিন্ন বিনোদনের স্থান থাকতো। কিন্তু এখন বিনোদন পিপাসু মানুষ বা শিশুরা কোথাও খেলাধূলা করতে এমন জায়গা পাওয়া দায়। কংক্রিট গিলে খাচ্ছে মাটি। শিশুরাও হয়ে পড়ছে ঘর বন্দি। এতে করে শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ নষ্ট হচ্ছে। দম বন্ধ হয়ে আশা শহরে জীবন থেকে শিশুদের একটু খেলাধুলার সুযোগ করে দিতেই শিশু উদ্যান গড়ে তুলেছেন রফিকুল ইসলাম চৌধুরী (প্রিন্স)।
জয়পুরহাট শহর থেকে এক কিলোমিটার উত্তর পশ্চিম কোনে বুলু পাড়ায় অবস্থিত। রিসোর্ট এর পাশাপাশি এখানে আছে শিশুদের জন্য একটি শিশু উদ্যান। জয়পুরহাট শহরে এত সুন্দর একটা শিশু পার্ক আছে না দেখলে বুঝা যাবে না। শুধু শিশুরাই নয় বয়স্ক মানুষও আসে এখানে বিনোদনের।
শিশু ও বয়স্কদের মনে নির্মল বিনোদন দেওয়ায় উদ্দেশ্যেই এ শিশু উদ্যোন তৈরি করেছেন রফিকুল ইসলাম চৌধুরী (প্রিন্স)। পুরো জয়পুর হাট শহর জুড়ে এই একটি বিনোদন কেন্দ্র। ৬০ বিঘা জমির উপর গড়ে তুলেছেন এই পার্কটি। শিশু উদ্যানটিতে সময় কাটানোর বেশ ভালো ব্যবস্থা রয়েছে। সুন্দর সাজানো গোছানো এই শিশু উদ্যানে রয়েছে বিশাল আকৃতির দুটি লেক, এতে প্যাডেল বোটে ঘুরে বেড়াতে পারেন দর্শনার্থীরা।
সেখানে আদিম যুগের মানুষের বসবাস সম্পর্কে ধারণা দেয়ার জন্য ভাস্কর্য তৈরি করা হয়েছে। যা আপনাকে মুগ্ধ করবে। শুধু তাই নয়, কৃত্রিম হাতি, ঘোড়া, বাঘ, ভালুক, জলহস্তিসহ বিভিন্ন প্রাণি শিশুদের তো বটেই, বড়দেরও কৌতুহল মেটাবে। উদ্যানে ছোট পরিসরে একটি আমবাগান রয়েছে। এখানে সাজিয়ে রাখা আছে স্বনামখ্যাত বিভিন্ন কবি, সাহিত্যিকদের ভাস্কর্য।
জয়পুরহাট শহরে প্রফেসার পাড়া এলাকায় শিশু সুমাইয়া (৭)। মাসে দুই থেকে তিনবার মা জহুরার সঙ্গে শিশু উদ্যোনে ঘুরতে আসে। গত মঙ্গলবার ঘুরতে এসেছিল উদ্যোনে। শিশু সুমাইয়া জানান, এখানে আসতে তার বেশ ভালো লাগে। আশেপাশের খেলার কোনো জায়গা না থাকায় সে বারবার এখানে আসে। উদ্যোনের ভেতর ঘুরে বেড়ানোর পাশাপাশি মায়ের সঙ্গে ফুচকা খেতে ভালোবাসে সুমাইয়া।
শিশুদের মনোহারি খেলনার জন্য রয়েছে নাগড়দোলা, চড়কি, টয়ট্রেন, সুইমিং পুল ও দোলনাসহ বিভিন্ন রাইড। এছাড়াও রয়েছে ক্লান্ত পথিকের জন্য খড়ের তৈরি ছোট ছোট ঘর, বাংলার চিরাচরিত বর্শি কিংবা পলুই দিয়ে মাছ ধরার দৃশ্য।
এখানে আসা বিনোদন প্রেমীদের ভিড় লক্ষ্য করা যায় প্রচণ্ড রোদে ফেটে যাওয়া ধানের ক্ষেতে জাত দিয়ে পানি দেওয়ার অপরূপ দৃশ্য এবং ভোর বেলা লাঙ্গল-জোয়াল কাঁধে নিয়ে কর্ম ব্যস্ত কৃষকের মাঠে যাওয়ার দৃশ্যের স্থাপনার সামনে।
উদ্যানে ঘুরতে আসা আকবর হোসেন (৭০) জানান, উদ্যানটি বেশ বড়। সবুজে ঘেরা। মাঝে মাঝে তিনি এখানে আসেন। ৬০ বিঘার পুরো জায়গা ঘুরে বেড়াতে ক্লান্ত লাগে। মাঝে মাঝে চা কিংবা কফি পানের সুবিধাও আছে এখানে।
শিশু উদ্যোনে প্রবেশ ফি বড়দের জন্য ১০০ টাকা। ছোটদের জন্য ৫০ টাকা। দর্শনার্থীদের কয়েকজন জানান, শিশু উদ্যোনে প্রবেশ ফিটা একটু বেশি। অনেকে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও বারবার আসতে পারে না। যারা নিয়মিত আসতে চায় তাদের জন্য বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা করলে অনেকেই উপকৃত হতো।