ঢাকা | রবিবার
১৩ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২৮শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খেজুর গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত গাছিরা

খেজুর গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত গাছিরা

দিনের বেলায় এখনো ভ্যাপসা গরমের ভাব কাটেনি। তবে মাঝে মধ্যেই হালকা থেকে ভারি বৃষ্টি হচ্ছে। ভোরের দিকে হালকা ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। এমনই আবহাওয়া জানান দিচ্ছে শীত আসছে। এমন সময়ে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয়েছে মধুবৃক্ষ খেজুরগাছ থেকে রস আহরণের প্রস্তুতি।

যারা খেজুরের রস সংগ্রহের উদ্দেশ্যে গাছ কাটায় পারদর্শী স্থানীয় ভাষায় তাদেরকে ‘গাছি’ বলা হয়। গাছিরা বর্তমানে খেজুর গাছের ডেগো পরিস্কার, দা তৈরি, দড়ি কেনা ও ভাড় (কলস) কেনা, রস জ্বালানোর তাওয়া কেনা, চুলা তৈরিকরাসহ রস সংগ্রহ ও খেজুরগুড় তৈরির নানা আয়োজনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কয়েক সপ্তাহ পর থেকেই গ্রামবাংলার গৌরব আর ঐতিহ্যের প্রতীক মধুবৃক্ষকে ঘিরে গ্রামীণ জনপদে শুরু হবে এক উৎসব মুখর পরিবেশ। মধুবৃক্ষ থেকে গাছিরা রস সংগ্রহ করবে। এ সুমিষ্ট খেজুর রস জ্বালিয়ে তৈরি হবে গুড় ও পাটালি। আর হেমন্তের নতুন ধান ওঠার সঙ্গে সঙ্গে উপজেলার প্রতিটি গ্রামীণ জনপদে শুরু হবে চালের আটা আর নলেন গুড় ও রসের তৈরি নানারকম পিঠা-পায়েসের উৎসব। আর গ্রামবাংলায় এ উৎসবের আমেজ চলবে পুরো হেমন্ত ও শীতকাল জুড়ে।

রস থেকে গুড় তৈরির পর্ব শুরু হয়ে চলবে প্রায় মাঘ ফালগুন মাস পর্যন্ত। হেমন্তের প্রথমে বাজারগুলোতে উঠতে শুরু করবে সুস্বাদু খেজুরের পাটালি ও গুড়। অবহেলায় বেড়ে ওঠা খেজুরের গাছের কদর এখন অনেক বেশি। এছাড়া খেজুর গাছের রস হতে উৎপাদিত গুড় দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে

জানা যায়, এক সময় দামুড়হুদা উপজেলা খেজুরের রস, গুড় ও পাটালি উৎপাদনে জেলায় প্রসিদ্ধ ছিল। এখনও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলতো বটেই তাছাড়াও দেশের বাইরে এর বেশ কদর রয়েছে। তবে বর্তমানে নানা প্রতিকুলতায় খেজুর গুড়ের এ ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। গ্রাম বাংলার সম্ভাবনাময় অর্থনৈতিক এ খাতে সরকারি কোন পৃষ্টপোষকতা না থাকায় বর্তামানে আগের মত আর রস, গুড় উৎপাদন হয় না। উপজেলার নির্দিষ্ট কয়েকটি গ্রাম ছাড়া সুঘ্রাণ নলেন গুড় পাওয়া যায় না।

গত কয়েক বছর বাজারে গুড়ের চেয়ে চিনির দাম কম থাকায় বেশি লাভের আসায় অনেক অসাধু গাছি খেজুর রস থেকে গুড় তৈরির সময় তাতে চিনি মিশিয়ে ভেজাল করে গুড় তৈরি করে বাজারে বিক্রি করে। ফলে অনেকেই এ ভেজাল গুড় কিনে আসল গুড়ের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। সেইসাথে বেশি দামে এসব ভেজাল গুড় কিনে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন আর্থিকভাবেও।  

উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের গাছিরা জানান, এখন চলছে খেজুর গাছ ঝোড়া ও চাছা-ছোলার কাজ। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে আর মাত্র কয়েক দিন পরই গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা শুরু হবে। তবে খেজুর গুড় তৈরি করে আগের মত আর লাভ হয় না। তবুও বাড়তি উপার্জনের আশায় অন্যান্য কাজের ফাঁকে একাজ করেন।

দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, দামুড়হুদায় প্রচুর পরিমাণ খেজুর গাছ আছে। তাছাড় বিভিন্ন সংস্থা খেজুর গাছ লাগানোর ফলে দিন দিন খেজুর গাছ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গাছিরা খেজুর রস সংগ্রহ করে পাটালি ও গুড় তৈরি করে বাজারে বিক্রির মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন গাছিরা।

সংবাদটি শেয়ার করুন