ঢাকা | সোমবার
৭ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২২শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দালালদের দখলে জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন

দালালদের দখলে জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন

হাসপাতালের লোকদের টাকা দিলে ভ্যাকসিন পাওয়া যায়। আমরা গরিব মানুষ কি টাকার অভাবে ঔষধ না পেয়ে মারা যাবো। আমাদের কি বেঁচে থাকার অধিকার নাই। সরকার এত বড় হাসপাতাল দিয়ে কি খালি জনগণের সঙ্গে তামাসা শুরু করছে

গতকয়েকদিন থেকে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে নেই জলাতঙ্ক রোগীদের অ্যান্টি র‌্যাবিট ভ্যাকসিন টিকা। দালাল আর হাসপাতালের লোকদের কাছ থেকে বেশি দামে  কিনতে হয় ভ্যাকসিন। অন্যদিকে টিকা দিতে আসা রোগিদের পড়তে হয় বিড়ম্বনায়। গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট ডা. মাহবুব হোসেন জানান, ভ্যাকসিন নাই। তবে চাহিদার কথা বলা হয়েছে ঢাকায়।

গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে সরেজমিনে দেখা যায়, গাইবান্ধা সাত উপজেলার , সুন্দরগঞ্জ, সাদুল্লাপুর, পলাশবাড়ী, ফুলছড়ি, সাঘাটা, সদর উপজেলাসহ প্রায় প্রতিদিন গড়ে ৭০ জন রোগি আসে টিকা নিতে। আর সেই টিকা না পেয়ে চলে যেতে হয় তাদের। এই অবস্থা দুই সপ্তাহের বেশি। ভ্যাকসিন নিয়ে চিন্তা পড়েছে অনেক রোগির পরিবার ও রোগিরা। ঢাকার মহাখালীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) থেকে আনতে হয় এ ভ্যাকসিন।

গাইবান্ধার জেনারেল হাসপালে নেই। বিনামূল্যে প্রদানের জন্য জলাতঙ্ক রোগের অ্যান্টি র‌্যাবিক্স ভ্যাকসিন (টিকা) গত ১২ দিন ধরে নেই গাইবান্ধায়। ফলে নিজের টাকা ব্যয় করে দোকান থেকে কিনে আনা ভ্যাকসিন দিতে হচ্ছে রোগিদের। ভ্যাকসিন না থাকার বিষয়টি যেসব রোগি জানতেন না, তাদের অনেকেই ভ্যাকসিন নিতে গিয়ে টাকা কম থাকায় বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। বাড়ি ফিরে গিয়ে টাকা এনে আবার ভ্যাকসিন দিতে গিয়ে ভুগতে হচ্ছে মারাত্মক এ রোগের রোগিদের।

শনিবার সকালে হাসপাতালের গেটে দেখা মেলে রেশমা নামে এক রোগীকে  দুই বছরের ছেলেকে ভ্যাকসিন দিতে আসা সুন্দরগঞ্জ  উপজেলার কাপাসিয়া  ইউনিয়নের মাস্টারপাড়া  গ্রামে আসা তিনি বলেন, আমি  জানতাম না যে ভ্যাকসিন সাপ্লাই নেই হাসপাতালে। সঙ্গে বেশি করে টাকা নিয়েও আসিনি। যে টাকা এনেছি তা হাসপাতালে আসতে ও ভ্যাকসিন দিতেই শেষ। এখন বাড়িতে যাবো কিভাবে। তাই বসে আছি গেটের সামনে বাড়ির কেউ চেনাজানা লোক পাইলে টাকা নিয়ে চলে যাবো বাড়িতে।

গাইবান্ধা সদর উপজেলার গিদারী ইউনিয়নের আইজল মিয়া বলেন, আজকে রাতে কুকুরের কামড় খেয়ে এ হাসপাতালে আসলাম। তবে, টিকিট কাটার পরে দেখি ভ্যাকসিন নাই হাসপাতালে। নগদ ১৫০ টাকা দিয়ে হাসপাতালের লোকদের কাছ থেকে  ভ্যাকসিন কিনে নিতে হয়। এখন নাকি পাঁচটা টিকা কিনতে হবে ৫শ’ টাকা দিয়ে। আমার পরিবারের আট জন সদস্য তাদের চাল কিনবো নাকি এ ভ্যাকসিন কিনবো কোনোটাই বুঝতে পারছি না আমি।

অন্যদিকে আলতাফ মিয়া বলেন, গতকয়েদিন থেকে হাসপাতালে আছি আর চলে যাই কিন্তু ভ্যাকসিন কিনতে পারছি না যে চার জন মিলে ভ্যাকসিন কিনে নিয়ে যাই। তার লোক পাই না। পরে দেখি হাসপাতালে লোকদের টাকা দিলে ভ্যাকসিন পাওয়া যায়। আমরা গরিব মানুষ কি টাকা অভাবে ঔষধ না পেয়ে মারা যাবো। আমাদের কি বেঁচে থাকার অধিকার নাই। সরকার এত বড় হাসপাতাল দিয়ে কি খালি জনগণের সঙ্গে তামাসা শুরু করছে।

জলাতঙ্ক রোগের টিকা প্রদানের দায়িত্বে থাকা হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স শরিফুল ইসলাম  বলেন, গত ৩ সেপ্টেম্বর  ভ্যাকসিনের চাহিদা দিয়েছি জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে। তবে, এখন পর্যন্ত পাইনি। মূলত ভ্যাকসিন আনতে যাওয়ার লোকের অভাবেই এ সংকট দেখা দিয়েছে।

গাইবান্ধা জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মাহবুব রহমান বলেন, ঢাকায় লোক পাঠাতে হবে। আর আমাদের চাহিদার কথা বলে দিছি।

সংবাদটি শেয়ার করুন