অনিয়ন্ত্রিত লোডশেডিং এ দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে মিরসরাই উপজেলার জনসাধারণের জনজীবন। প্রচণ্ড দাবদাহে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। বিদ্যুৎ বিভ্রাট নিয়ে ক্ষুব্ধ গ্রাহকদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। চরম বিরক্তি নিয়ে অনেকেই সরকারের সমালোচনা করছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ফেসবুক পোস্টের জের ধরেই কথা হয় একজন ক্ষুব্ধ গ্রাহকের সঙ্গে। আলাপচারিতার পুরোটা জুড়েই ছিলো পল্লীবিদ্যুতের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ। আরাফাত রনি নামে এ গ্রাহক জানান, করোনার কারণে বাচ্চাদের পড়াশোনার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। বর্তমানে সে পরিস্থিতি কাটিয়ে নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হলেও সন্ধ্যার পর থেকে বাচ্চাদের পড়াশোনার সময়টিতে থাকেনা বিদ্যুৎ। অভিযোগ নম্বরে ফোন দিলে তারা শুনিয়ে দেন মুখস্ত বুলি। নানা অযুহাত তৈরি থাকে ঠোঁটের আগায়।
এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিলো তার কোনো কিছুই মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ এক ঘণ্টা পরপর লোডশেডিং এর যে সময়সূচি প্রকাশ করেছিলো তার সঙ্গেও লোডশেডিংয়ের কোনো মিল থাকছে না। এদিকে প্রচণ্ড গরমে বিদ্যুতহীন চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে জনসাধারণের। গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিশুরা। ঘেমে জ্বর-কাশিসহ ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে তারা। বাদ যাচ্ছেন না বয়স্করাও।
দীর্ঘ ছুটির পর গতকাল মঙ্গলবার শুরু হয় নিয়মিত শ্রেণি কার্যক্রম। শ্রেণি কার্যক্রমের প্রথম দিনেই উপজেলার বেশ কিছু অঞ্চলে সকাল থেকেই বন্ধ ছিলো বিদ্যুৎ সরবরাহ। যা ব্যাঘাত ঘটায় পাঠদানে।
রেসিডেন্সিয়াল মডেল হাইস্কুলের শিক্ষক খায়রুল আনাম মামুন জানান, সকাল থেকেই বিদ্যুৎ নেই। ছাত্ররা যেমন ঘেমে-নেয়ে একাকার, শিক্ষকদের অবস্থাও ভিন্ন নয়। ক্লাসরুমে পাঠদানের উপযুক্ত পরিবেশ নেই। কোনো ধরনের পূর্ব নোটিশ ব্যাতিত এভাবে সারাদিন বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা পল্লীবিদ্যুতের অনিয়ম ও খামখেয়ালীপনা নয় কেন বলে যৌক্তিক প্রশ্ন তুলেন এ শিক্ষক।
আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাসফিয়া চৌধুরী বলেন, সামনে আমাদের প্রি-টেস্ট পরীক্ষা। স্কুল চলাকালীন সময়ের লোডশেডিং এ কোনো মতে ক্লাস করা সম্ভব হলেও, ঘন ঘন ও টানা লোডশেডিং এর কারণে সন্ধ্যার পর বাড়ির কাজ ও ক্লাসের পড়া শেখা সম্ভব হয়না। পরীক্ষা হলে কাঙ্খিত ফলাফল নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।
অনিয়ন্ত্রিত এ লোডশেডিং ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও। বিশেষ করে টেইলার্স ব্যবসায়ীরা পড়েছেন ভয়াবহ ক্ষতির মুখে। বর্তমানে প্রায় সবগুলো টেইলার্সে বৈদ্যুতিক সেলাই মেশিন হওয়ায় বিদ্যুৎ ছাড়া বন্ধ থাকে সেলাই কাজ।
উপজেলার ঐতিহ্যবাহী আবুতোরাব বাজারের এলিগেনস টেইলার্সের স্বত্বাধিকারি শ্যামল নাথ বলেন, বিদ্যুতের এমন বিপর্যয়ে করোনার চাইতেও ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে আমাদের ব্যবসায়। সারাদিন কোনো কাজ করতে পারিনা। গ্রাহক ডেলিভারি নিতে বসে থাকে, সেলাইকাজ বন্ধ থাকায় ডেলিভারি দিতে পারিনা। এভাবে চলতে থাকলে প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা ছাড়া কোনো উপায় দেখছিনা।
উপজেলার মিঠাছড়া বাজারের দরবার ক্লথ স্টোরের ম্যানেজার মেহেদী হাসান জানান, বিদ্যুৎ যে সময় থাকেনা তখন কাস্টমার তাদের পছন্দমত পোষাক বাছাই করতে সময় নিয়ে বসতে পারেন না। দু-এক মিনিটেই গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠে চলে যান। বিদ্যুৎ বিভ্রাট বেচা-বিক্রিতে মারাত্বক প্রভাব ফেলছে।
চট্টগ্রাম পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-৩ এর মিরসরাই জোনাল অফিসের ডিজিএম (ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার) সাইফুল আহমেদ বলেন, মিরসরাই উপজেলায় বর্তমানে বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ৩২ মেঘাওয়াট। তবে, উৎপাদন ঘাটতিজনিত কারণে আমরা পাচ্ছি মাত্র ১৫ মেঘাওয়াট বা তার চেয়েও কম। চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ না পাওয়ায় বাধ্যতামূলক লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। সামনে শীতকাল আসলে বিদ্যুতের চাহিদা কিছুটা কমে যাবে। তখন অনেকটা নিরবিচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে।