এবার গারো পাহাড়ে বন্যহাতির পশাপাশি নতুন করে বাঘ আতঙ্ক বিরাজ করছে। গত ১০ দিন ধরে অজানা এক হিংস্র বন্যপ্রাণীর আক্রমণে এক শিশুকে আহত করাসহ পাহাড়ী কয়েকটি গ্রামের কৃষকদের ১৫টি ছাগল কামড়ে আহত ও মেরে ফেলার ঘটনার পর থেকে মানুষদের মধ্যে এ আতঙ্ক শুরু হয়। এ অবস্থায় পাহাড়ী এলাকায় গবাদি পশু চরাতে ভয় পাচ্ছেন স্থানীয়রা।
এ ঘটনায় ঝিনাইগাতী উপজেলা প্রশাসন, বনবিভাগ ও কাংশা ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে প্রচারের (মাইকিং) ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান রাংটিয়া রেঞ্জের গজনী বিট কর্মকর্তা মো. মকরুল ইসলাম আকন্দ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের বাকাকুড়া, বাকাকুড়া নয়াপাড়া, গান্ধিগাঁও, হালচাটি, ছোটগজনী এলাকায় গত ১০দিন ধরে অজানা এক হিংস্র বন্যপ্রাণীর আক্রমণে ১৫টি ছাগল আহত ও মারা গেছে। বাঘের আক্রমণের ভয়ে পাহাড়ী এলাকায় গবাদি পশু চরাতে, খড়ি সংগ্রহকারীরা ও গ্রামের শিশুরাও বিদ্যালয়ে যেতে ভয় পাচ্ছে।
কাংশা ইউনিয়নের গান্ধিগাঁও গ্রামের মো. শাহা আলী বলেন, পাহাড়ে আগে ছিল বন্যহাতির আতঙ্ক, এখন নতুন করে শুরু হয়েছে বাঘের আতঙ্ক। গত ৪-৫ দিন আগে রাতের বেলায় তিনি পাহাড়ের আমজাদ মরা নামক স্থানে বাঘের মতো একটি বন্যপ্রাণী দেখেছেন। ওই বন্যপ্রাণীটি লম্বায় প্রায় ৪ ফুট ও উচ্চতা প্রায় ৩ ফুট হতে পারে ।
বাকাকুড়া নয়াপাড়া এলাকার মো. আইন উদ্দিন বলেন, গত রবিবার রাত নয়টা থেকে দশটার মধ্যে আমার দোকানে কয়েজন টিভি দেখতে ছিলাম। এ সময় ওই বাড়ির একটি শিশু তার বাবার খোঁজে দোকানের কাছা-কাছি এসে টর্চ লাইট ধরলে একটি হিংস্র বন্যপ্রাণী শিশুটিকে কামড় দেওয়ার চেষ্টা করে। পরে শিশুর চিৎকারে সবাই দোকান থেকে বের হয়ে একটি ছোট বাঘ দেখতে পাই। আমরা সবাই চিল্লাচিল্লি শুরু করলে বাঘটি বনের মধ্যে ঢুকে পড়ে।
বাকাকুড়া ঢাকাইয়া মোড় এলাকার গোলেছা বেগম বলেন, আমরা পাহাড় থেকে খড়ি সংগ্রহ করে সংসার চালাই। কয়দিন ধরে বনের মধ্যে বাঘ আসছে, এমন সংবাদ শোনার পর ভয়ে আছি। আমার বাড়ির সামনে গেগোল সাংমার দুইটি ছাগলকে কামড়ে মেরে ফেলেছে এক হিংস্র বন্যপ্রাণী।
এদিকে বৃহস্পতিবার ৬ অক্টোবর দুপুরে ঝিনাইগাতী উপজেলা পরিষদের সভাকক্ষে মানুষ ও বন্যপ্রাণী (হাতি ও বাঘ) দ্বন্ধ নিরসন ও ক্ষয়ক্ষতি প্রশমনের জন্য এক সচেতনতামূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা প্রশাসন ও ময়মনসিংহ বনবিভাগের রাংটিয়া রেঞ্জ আয়োজিত সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক আল মাসুদ। সভায় বন বিভাগের রাংটিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা সহকারি বন সংরক্ষক (প্রবি) মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, আমরা স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পারি পাহাড়ে বাঘের আগমন ঘটেছে। এ পাহাড়ে ঘন বন রয়েছে, এটি যেকোনো বন্যপ্রাণীর জন্য নিরাপদ আবাসস্থল হতে পারে। তবে স্থানীয়দের বর্ণনা অনুযায়ী, এটি বাঘ হওয়ার কথা নয়। এটি অন্য কোনো হিংস্র বন্যপ্রাণী হতে পারে। তবে আমরা প্রাণীটি শনাক্ত করার জন্য কাজ করছি। পাশাপাশি জনগণকে এ বিষয়ে সচেতন করা হচ্ছে।
কাংশা ইউপি চেয়ারম্যান মো. আতাউর রহমান বলেন, আমি ঘটনাটি শোনার পর থেকে গ্রাম পুলিশদের মাধ্যমে এ বিষয়ে প্রচারণা চালাচ্ছি। তবে প্রাণীটি বাঘ কিনা, এটি কেউ শনাক্ত করতে পারেননি ।
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক আল মাসুদ বলেন, পাহাড়ে একটি অজানা বন্যপ্রাণীর দেখা মিলেছে বলে স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। তবে বন্যপ্রাণীটি মানুষের যেন ক্ষতি করতে না পারে, আবার প্রাণীটিকে মানুষ যেন হত্যা করতে না পারে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য কাংশা ইউপি চেয়ারম্যান ও বনবিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।