- তুষারধসে ১০ পর্বতারোহী নিহত, নিখোঁজ ২৮
- বৈশ্বিক উষ্ণতায় হিমালয়ের হিমবাহে ধস
‘ইট মারলে পাটকেল খেতে হয়’ এ কথাটি মনে হয় আমরা ভুলেই গিয়েছি। তবে ইট মেরে পাটকেল খাওয়ার কথাটি আমরা ভুলে গেলেও পাটকেল আমাদের পিছু ছাড়ে নাই। ইটের বদল হিসেবে নিয়মিত পাটকেল আমরা পেয়েই যাচ্ছি। এ পাওয়ার সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। জলবায়ু বিপর্যয়ের কারণে প্রতিনিয়ত পড়তে হচ্ছে হুমকির মুখে, সম্মুখীন হতে হচ্ছে নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের।
এরই ফলস্বরূপ ভারতের উত্তরাঞ্চলে হিমালয়ে তুষারধস। গত মঙ্গলবার সকালে উত্তরাখণ্ডে হিমালয়ের একটি সুউচ্চ পর্বতশৃঙ্গে ৪১ সদস্যের একটি পবর্তারোহী দল তুষারধসের কবলে পড়ে। ভয়াবহ এ তুষারধসে অন্তত ১০ পর্বতারোহী মারা গেছেন। নিখোঁজ রয়েছেন আরও ২৮ জন। বার্তা সংস্থা পিটিআই’র বরাতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য প্রিন্ট এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে গাড়ওয়াল হিমালয়ের গঙ্গোত্রী রেঞ্জে প্রায় ১৭ হাজার ফুট উঁচুতে অবস্থিত একটি শৃঙ্গে তুষারধসের কবলে পড়ে ভারতীয় পবর্তারোহীদের একটি দল। এই দলে ছিলেন উত্তরকাশী-ভিত্তিক নেহরু ইনস্টিটিউট অব মাউন্টেনিয়ারিং (এনআইএম)-এর প্রশিক্ষণার্থী ও প্রশিক্ষকরা। উন্নত প্রশিক্ষণ কোর্সের অংশ হিসেবে চূড়ায় আরোহণের পরে ফিরে আসার পথে তুষারধসের কবলে পড়েন তারা।
এনআইএমের অধ্যক্ষ কর্নেল অমিত বিষ্ট জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত দুর্ঘটনাস্থলে ১০ জনের মরদেহ দেখা গেছে, যার মধ্যে চারটি উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার সকালে উত্তরকাশী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা দেবেন্দ্র পাটওয়ালের বরাত দিয়ে পিটিআই জানিয়েছে, দুর্ঘটনাস্থল থেকে আট পর্বতারোহীকে উদ্ধার করা হয়েছে।
তুষারধসের ঘটনায় নিখোঁজ ২৮ জনের নামের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে উত্তরাখণ্ড পুলিশ। এদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ, দিল্লি, তেলেঙ্গানা, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, আসাম, হরিয়ানা, গুজরাট, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড ও উত্তর প্রদেশের প্রশিক্ষণার্থীদের নাম রয়েছে।
এ ঘটনায় গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার বরাত দিয়ে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, এটি দুঃখজনক যে, এনআইএমের পর্বতারোহণ অভিযানে আমরা বেশ কিছু মূল্যবান প্রাণ হারিয়েছি। শোকাহত পরিবারগুলোর প্রতি সমবেদনা। উদ্ধার অভিযান চলছে এবং কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি তাদের ধারণার চাইতেও উদ্বেগজনক মাত্রায় গলিয়ে ফেলছে হিমালয়ের হিমবাহগুলোকে। অথচ পৃথিবীর জলবায়ু ব্যবস্থার সাথে নাজুক ও পরস্পর সম্পর্কিত রয়েছে এগুলোর। হিমবাহ গলায় জলবায়ু ব্যবস্থার ভারসাম্যও নষ্ট হচ্ছে, হয়ে উঠছে আরো অস্থিতিশীল। ব্যাহত হচ্ছে হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসা জলচক্র।
মূলত, চলতি বছরের গ্রীষ্মে, পুরো পৃথিবী জুড়েই তাণ্ডবলীলা চালিয়েছে দাবদাহ। ফলে ইউরোপের আল্পস থেকে শুরু করে হিমালয় পর্বতশ্রেণি সবখানেই অতীতের সব নজির ছাড়ায় বরফের গলন। উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর বাইরে সবচেয়ে বেশি স্বাদু পানি জমা আছে হিমালয় পর্বতশ্রেণি ও এর শাখা পর্বতশ্রেণিতে।