- দেশে তৈরি প্লাস্টিক কাঁচামাল যাচ্ছে ভারত-নেপালে
গত ২০২১-২২ অর্থবছরে প্লাস্টিকপণ্য প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো তিন লাখ ২৬ হাজার টন পিভিসি আমদানি করেছে। এতে ব্যয় হয়েছে ৪৭ কোটি ডলার। আর পেট রেজিন আমদানি হয়েছে দুই লাখ ২৯ হাজার টন। এতে ব্যয় হয়েছে ২৭ কোটি ডলার। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যমতে, দেশে প্লাস্টিকপণ্য উৎপাদনে নীরব বিপ্লব ঘটেছে। এ পণ্যের কাঁচামাল ছিল সম্পূর্ণ আমদানিনির্ভর। এতে উৎপাদন কিছুটা হলেও বাধাগ্রস্ত হতো। এবার ভাঙছে সেই অচলায়তন। এখন থেকে দেশেই তৈরি হবে প্লাস্টিকপণ্য উৎপাদনের কাঁচামাল।
প্লাস্টিকপণ্যের এ কাঁচামালের ক্ষেত্রে নীরব বিপ্লব সৃষ্টি করেছে বৃহৎ শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ (এমজিআই)। দেশেই প্লাস্টিক কাঁচামাল তৈরি করতে বড় বিনিয়োগ করছে প্রতিষ্ঠানটি। তথ্যমতে, নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাটে মেঘনা অর্থনৈতিক অঞ্চলে কারখানা স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে প্রায় ৭০০ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। প্ল্যান্ট বসেছে, উৎপাদনও শুরু হয়েছে। উৎপাদিত রেজিন দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও রপ্তানি শুরু হয়েছে।
এ কারখানায় বিনিয়োগ করা হয়েছে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা। এ প্রকল্পে বড় অংকের ঋণসুবিধা দিয়েছে নেদারল্যান্ডসের আইএনজি ব্যাংক। গ্রুপটির কারখানা থেকে প্লাস্টিকের মূল কাঁচামাল পিভিসি ও পেট রেজিন উৎপাদন হবে, যা আগে ছিল সম্পূর্ণ আমদানিনির্ভর।
মেঘনা গ্রুপের কর্মকর্তারা বলছেন, কারখানাটি শতভাগ আমদানিনির্ভর পণ্য উৎপাদন করবে। কারখানায় পিভিসি ও পেট রেজন উৎপাদন হবে। এ দুটি আইটেম পুরোটাই আগে আমদানি হতো। কোনো ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্টও আগে ছিল না। এগুলো আগে চীন থেকে আমদানি করতে হতো। বর্তমানে কারখানায় উৎপাদনের ফলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।
কারখানা সূত্রমতে, পিভিসি রেজিনের বার্ষিক চাহিদা চার লাখ টনের বেশি। যেখানে মেঘনা গ্রুপের ক্যাপাসিটি দেড় লাখ টন। কারখানাটি ৪০ শতাংশের মতো চাহিদাপূরণ করতে পারবে। এ রেজিন দিয়ে পিভিসি পাইপ, ফার্নিচার, প্লাস্টিক শিট- এ ধরনের পণ্য তৈরি করা যাবে। পেট রেজিনের ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশ চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হবে মেঘনা গ্রুপ।
সূত্রমতে, ২০১৭ সালে প্লাস্টিকপণ্য উৎপাদনের জন্য যে কাঁচামাল লাগে, তা তৈরিতে কারখানার নির্মাণকাজ শুরু হয়। মহামারি করোনাভাইরাসে কারণে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে কারখানা স্থাপনের কাজে কিছুটা ধীরগতি ছিল। তবে চলতি বছর থেকে কারখানাটি উৎপাদনে আসে। মেঘনা ইকোনমিক জোনে কারখানা স্থাপন হয়েছে। যেখানে প্রায় ৭০০ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে।
উদ্যোক্তারা দেশের চাহিদা মিটিয়ে ২০৩০ সালে ১০ বিলিয়ন টাকার প্লাস্টিক পণ্যসামগ্রী রপ্তানির স্বপ্ন দেখছেন। সেক্ষেত্রে মেঘনা গ্রুপের এ কারখানা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলেও মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল বলেন, প্লাস্টিকপণ্যের কাঁচামালের চাহিদা বাড়ছেই। এজন্য এ শিল্পে বিনিয়োগ করেছি। নতুন কারখানায় বছরে যে পরিমাণ কাঁচামাল তৈরি হবে, তাতে দেশীয় চাহিদার অর্ধেকের বেশি মেটানো সম্ভব হবে।