সবার স্বাস্থ্য ভালো রাখার দায়িত্ব যার, সেখানে তারই স্বাস্থ্য যায় যায় অবস্থা। হাসপাতালে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সেবা নিতে হয় রোগিদের। রোগ সারাতে এসে রোগবহন করে নিয়ে যাচ্ছেন কিনা, সেটাই এখন বিরাট প্রশ্ন। হাসপাতালে প্রবেশ করতেই রাস্তার দু’পাশে বাজারের ময়লা-আবর্জনার স্তুপ, একটু ভিতরে প্রবেশ করলেই দেখা যায় স্যাঁত-স্যাঁতে ময়লার স্তর। ভিতরের পরিবেশও নোংরা। দৃশ্যটি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা (উত্তর) ইউনিয়ন উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের।
ঐতিহ্যবাহী রূপসার এ উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি ভৌগোলিক কারণে অনেক গুরুত্ব বহন করে। এ কেন্দ্রটিতে ৭নং পাইকপাড়া উত্তর, ৮নং পাইকপাড়া দক্ষিণ, ৬নং গুপ্টি এবং ১৫নং রূপসা ইউনিয়নের বৃহৎ জনগোষ্ঠি এখানে সেবা নিতে আসে। আর এ গুরুত্বের কথা ভেবেই সরকার হাসপাতালটিকে ১০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে রূপান্তরের কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন বলে জানা যায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বাজারের গণশৌচাগারের ময়লা হাসপাতাল চত্বরে ফেলা হচ্ছে। বাজার ব্যবসায়ীরাও ফেলছেন ময়লা। এ নিয়ে হতাশ সাধারণ মানুষ। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, কোনো প্রকার অনুমতি ছাড়াই বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সভাপতি আজিম ও স্থানীয় চেয়ারম্যান কামরুল হাসানের সিদ্ধান্তে বাজারের পাবলিক টয়লেটের ময়লা ফেলা হচ্ছে হাসাপাতাল চত্ত্বরে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শুক্রবার বাজারের পাবলিক টয়লেটের ময়লা হাসাপাতাল এলাকায় গর্ত করে সেখানে ময়লা ফেলছে। ময়লার গন্ধে পরিবেশ দূষণসহ হাসপাতালের বাতাস হচ্ছে ভারি হয়ে উঠছে।
এদিকে দায়িত্বরত ডাক্তাররা ইচ্ছা মাফিক হাসপাতালে আসেন। তার উপর হাসপাতালকে সম্পূর্ণ অরক্ষিত অবস্থায় রেখে দায়িত্বরত ব্যক্তিরা বাসায় বসে থাকেন। রোগিদের অনেক সময় ফিরতে হয় কোনো ধরনের সেবা ছাড়াই। স্থানীয় কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, এখানে তেমন একটা সেবা পাওয়া যায় না। প্রায় সময়ই বন্ধ থাকে। ৩০ সেপ্টেম্বর একটি শিশু পানিতে পড়ে যায়। প্রথমে এখানে আনা হয়। তবে, হাসাপাতাল বন্ধ পেয়ে চতুরায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে মারা যায়।
এদিকে মুঠোফোনে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানালে তিনি তাৎক্ষনিক সেখানে প্রতিনিধি দল পাঠান। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ডা. কামরুল হাসান এবং মেডিকেল অফিসার (রোগ নিয়ন্ত্রক) ডা.মামুনুর রশিদ সেখানে গিয়ে বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সভাপতি ও চেয়ারম্যানকে তলব করেন। ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. কামরুল হাসান আসলেও রহস্যজনক কারণে বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সভাপতি আজিম শেষ পর্যন্ত আসেননি।
এ বিষয়ে রূপসা বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম সুমন বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক। যেখানে সবাই মিলে হাসপাতালের পরিবেশকে সুন্দর করবো কিন্তু আমরা সেটা না করে উল্টো সেখানে আরোময়লা ফেলে পরিবেশ দূষণ করছি।
রূপসা আহমদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, প্রথমে আমাদের স্কুল চত্ত্বরে ময়লা ফেলতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি তাৎক্ষনিক বিষয়টা জানতে পেরে ম্যানেজিং কমিটিকে জানাই। তারা এসে বাধা দিলে; সেখানে না ফেলে হাসপাতালের জায়গায় ফেলেছে।
এ বিষয়ে ১৫নং রূপসা উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, বাজারে আর কোনো জায়গা ছিলো না বিধায় বাধ্য হয়ে এখানে ( হাসপাতাল চত্ত্বর) ফেলেছি। তবে আমরা সতর্ক আছি যাতে পরিবেশ দূষণ না হয়। ব্লিচিং পাউডার, কেরোসিন তেল দিয়ে মাটি চাপা দেওয়া হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আশরাফ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, আমি সেখানে আমার লোক পাঠাচ্ছি। তারা এসে আমাকে রিপোর্ট দেওয়ার পর ঘটনার সত্যতা বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থ্যা নিবো।