ঢাকা | শুক্রবার
২৯শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১৪ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পর্যটন নগরী সাজাতে বড় প্রকল্প

পর্যটন নগরী সাজাতে বড় প্রকল্প

প্রকৃতি, পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষা করে পর্যটন শিল্পকে আরও দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয় করতে কক্সবাজারে ৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে বনায়ন ও অবকাঠামো নির্মাণ কাজ চলছে। নতুন রূপে সাজবে হিমছড়ি মেধাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যানসহ মহেশখালী ও পর্যটন নগরী কক্সবাজার। চলমান সবুজ বেষ্টনী প্রকল্প   কার্যক্রমের অগ্রগতি ৮০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন বন বিভাগ। এ প্রকল্পের অবকাঠামোসহ সামগ্রিক উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হতে সর্বশেষ সময় নির্ধারণ করা হয়েছে জুন ২০২৫।

একই সঙ্গে চলছে ইকো-ট্যুরিজমের কাজ। চির যৌবনে নতুন রূপে সাজবে হিমছড়ি ও মেদাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যান। চলছে  বৃক্ষরোপণ, কক্সবাজার সদর, রামু, উখিয়া টেকনাফ, চকোরিয়া, কুতুবদিয়া, পেকুয়া ও মহেশখালীতে। ৪২ কোটি ১৬ লাখ ৫৬ হাজার টাকার এ  প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বন অধিদপ্তর। এর মধ্যে বনায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪ কোটি ৬৮ লাখ ৮৭ হাজার টাকা।

বনায়ন সামনে রেখে প্রকল্প নেওয়া হলেও বরাদ্দ অর্থের বড় অংশ চলে যাবে অবকাঠামো ও যানবাহন কেনাকাটায়। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। এছাড়া ভাতাদি-প্রশাসনিক ব্যয় খাতে ৩ কোটি, প্রশিক্ষণ খাতে ৫৬ লাখ, মেরামত ও সংরক্ষণ কাজে ১ কোটি ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকছে।

কক্সবাজার জেলায় সবুজ বেষ্টনি সৃজন, প্রতিবেশ পুনরুদ্ধার ও ইকোট্যুরিজম উন্নয়ন প্রকল্পের (১ম সংশোধিত) আওতায় এমন উদ্যোগ। এরই মধ্যে প্রকল্পটি সংশোধন করেছে পরিকল্পনা কমিশন। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বন অধিদপ্তর। জুলাই ২০১৯ থেকে জুন ২০২৪ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পের মোট ব্যয় ছিল ৩৭ কোটি ৬১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। নতুন করে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ছে জুন ২০২৫ সাল নাগাদ। মোট ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৪২ কোটি ১৬ লাখ ৫৬ হাজার টাকা।

বন অধিদপ্তর জানায়, বনায়নে কক্সবাজার সদরে ২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা, রামুতে ৬ কোটি ৭৭ লাখ, উখিয়ায় ৪ কোটি ১৯ লাখ, টেকনাফে ৩ কোটি ৪৯ লাখ ও চকোরিয়ায় ৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা খরচ হবে। এছাড়া কুতুবদিয়ায় ৯৮ লাখ টাকা, পেকুয়ায় ৯৩ লাখ এবং মহেশখালীতে খরচ করা হবে ২ কোটি ৩ লাখ টাকা।

বনায়ন প্রকল্পে অবকাঠামোখাতে বেশি ব্যয় প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম অঞ্চলের বন সংরক্ষক ও প্রকল্পের পরিচালক বিপুল কৃষ্ণ দাস বলেন, প্রকল্পে বনায়নের পাশাপাশি অবকাঠামো উন্নয়নের কাজও আছে। তাছাড়া আমি প্রকল্পে নতুন যুক্ত হয়েছি। আমি তো প্রকল্প বাস্তবায়ন করি না। প্রকল্পে ৯ থেকে ১০ মাস কাজ করছি। আর শুরু হয়েছে ২০১৯ সালে।

সময়-ব্যয় বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, করোনার জন্য এক বছর কাজ হয়নি। তাছাড়া বনায়নের রেট বেড়েছে। এজন্য সময়-ব্যয় বেড়েছে। বনায়নের রেট ও মেইনটেন্যান্স খরচ বাড়ায় প্রকল্প সংশোধন করা হয়।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য নতুন ঝাউ বাগান সৃজন ৮০ হেক্টর, বিদ্যমান ঝাউ বাগানের শূন্যস্থান পূরণে ১ লাখ চারা, ১০ হাজার তাল গাছ, ৫ হেক্টর উপকূলীয় বাগান এবং ১০ কিলোমিটার গোলপাতা বাগান সৃজন করা। বনায়ন ও নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে ২ হাজার ৭৫০ হেক্টর প্রাকৃতিক বনের প্রতিবেশ পুনরুদ্ধার করা, বননির্ভর স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ২ হাজার ৫০০টি পরিবারের দারিদ্র্য নিরসন ও বনের ওপর তাদের নির্ভরতা কমানো, পর্যটকদের চিত্ত-বিনোদনের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে ইকো ট্যুরিজম উন্নয়ন করা হবে প্রকল্পের আওতায়। হিমছড়ি ও মেদাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যানে পর্যটকের সংখ্যা ১০ শতাংশ বাড়ানো অন্যতম উদ্দেশ্য।

প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বন অধিদপ্তর। হিমছড়ি জাতীয় উদ্যানের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ ৬০০ বর্গমিটার, অর্কিড হাউজ নির্মাণ ৫০ বর্গমিটার, ক্যাকটাস হাউজ নির্মাণ ৫০ বর্গমিটার, প্রাকৃতিক ডিজাইনের ১৪টি আরসিসি বেঞ্চ নির্মাণ, পশুপাখি ডিজাইনের ডাস্টবিন তৈরি ১০টি, আরসিসি পিলারের ওপর ছাতা এবং নিচে গোলাকার বেঞ্চ নির্মাণ তিনটি। এছাড়া এসএস পাইপ দিয়ে রেলিং ও প্ল্যাটফর্ম তৈরি (হিমছড়ি ঝরনার পাশে দর্শানার্থীদের নিরাপত্তার জন্য), বোট শেডসহ সিঁড়ি একটি, লেক খনন ৪৪ হাজার ঘন মিটার, লেকের চারপাশে ওয়ার্কিং ওয়ে ২ হাজার ৫০ রানিং মিটার, চারটি ওয়াশরুমসহ শৌচাগার নির্মাণ, হিমছড়ি পার্কে সিঁড়ি নির্মাণ দুই হাজার বর্গমিটার ও কার পার্কিং দুটি।

প্রকল্পের আওতায় ৫০০ রানিং মিটার রাস্তা, অ্যাপ্রোচ রোড-পানি সরবরাহ ব্যবস্থাও থাকবে। মূল প্রকল্পের কাজ জুলাই ২০১৯ থেকে জুন ২০২৪ মেয়াদে শুরু হয়। এই সময়ে মোট ব্যয় ছিল ৩৭ কোটি ৬১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ জুন ২০২৫ নাগাদ বাড়ছে। পাশাপাশি ব্যয় বাড়ছে ১২ শতাংশ।

কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন  সরকার বলেন, বনায়নের ৯০%  কাজ শেষ অবকাঠামো কাজ বাকী রয়েছে। পুরো প্রক্রিয়া শেষ হলে খুটাখালী মেধা কচ্ছপিয়া হবে কক্সবাজারে ভ্রমন পিপাসুদের অনন্য তীর্থস্থান। কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মোহাম্মদ  সরওয়ার কামাল বলেন, হিমছড়ির প্রাণ প্রকৃতি ও ঝর্ণা ধারা ফিরিয়ে  আনার জন্য অবকাঠামো উন্নয়ন করা হচ্ছে। সাগর পাহাড়ের মিলনমেলায় নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অবয়ব হিমছড়ি হতে যাচ্ছে দেশের অন্যতম পর্যটন স্পট। এ জন্য অপেক্ষা করতে হবে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত।

সংবাদটি শেয়ার করুন