ঢাকা | বৃহস্পতিবার
১লা মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
১৮ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন-বনবিভাগ মুখোমুখি

চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন-বনবিভাগ মুখোমুখি

৬০ লাখের নিলামে বিক্রি হলো ১০ লাখে

কক্সবাজারের চকরিয়ায় জব্দকৃত ৬০ লাখ টাকার বালু ১০ লাখ টাকায় গোপনে নিলামে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। নিলাম যিনি পেয়েছেন তিনি বন বিভাগের দায়ের করা ৪ মামলার আসামি। গত মঙ্গলবার তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।

জানা যায়, চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারার রংমহল দাঙ্গার বিল ও পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে জব্দ করা ‘৬৫ লাখ টাকা মূল্যের’ প্রায় সাড়ে ৯ লাখ ঘনফুট বালু  ১০ লাখ টাকায় নিলামে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার জেপি দেওয়ানের বিরুদ্ধে।

ওই বালুর ক্রেতা সাইফুল ইসলাম বন ও পরিবেশ বিভাগের দায়ের করা একাধীক মামলার আসামি। আদালত সূত্র জানায়, সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে সংরক্ষিত বনভূমি থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে চারটি মামলা রয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে বন বিভাগের একটি মামলায় সাইফুল ইসলাম এবং তাঁর সহযোগী মামলার আসামি সাহাব উদ্দিন কক্সবাজার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। আদালতের বিচারক ও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আলমগীর মোহাম্মদ ফারুকী জামিন নামঞ্জুর করে দুজনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

জানা যায়, জব্দ করা সাড়ে ৯ লাখ ঘনফুট বালুর মধ্যে সাইফুলের ৮৪ হাজার ২১২ ঘনফুট বালু রয়েছে। রংমহল গ্রামের নিকটবর্তী জলাধার, টিলা, কৃষিজমি, সাফারি পার্ক এবং সংরক্ষিত বনভূমি রক্ষার স্বার্থে ইউনিয়নের পাগলীর বিল, ফাঁসিয়াখালী ছড়া বালুমহালকে অবৈধ ঘোষণা করে গত ২৬ এপ্রিল বালু উত্তোলন বন্ধের আদেশ দেন হাইকোর্ট।

গত ১৭ ও ১৮ জুলাই বন বিভাগ যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে ঘটনাস্থল থেকে ৬টি বালু ভর্তি ট্রাক, বালু উত্তোলনের ৬১টি নিষিদ্ধ ড্রেজারসহ সাড়ে ৯ লাখ  ঘনফুট বালু জব্দ করে। এ ঘটনায় সাইফুল ইসলামসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করে বন বিভাগ। ওই মামলায় উত্তোলিত বালুর মূল্য দেখানো হয় ৬০ লাখ টাকা।

কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) আনোয়ার হোসেন সরকার বলেন, ২১ সেপ্টেম্বর যৌথ বাহিনীর জব্দ করা বালু নিলাম দেখিয়ে মাত্র ১০ লাখ টাকায় সাইফুল ইসলামের কাছে বিক্রি করে দেন ইউএনও জেপি দেওয়ান। বন বিভাগের কর্মকর্তাদের অভিযোগ, প্রকাশ্যে নিলামের মাধ্যমে বালু বিক্রির নিয়ম থাকলেও জব্দ করা বালু বিক্রির ক্ষেত্রে সেটা মানা হয়নি। সাইফুলকে সর্বোচ্চ দরদাতা দেখিয়ে বালু বিক্রি করা হয়েছে। অথচ বন বিভাগকে নিলামের বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।

সহকারি বন সংরক্ষক প্রান্তোষ চন্দ্র রায় বলেন, রংমহলের দাঙ্গার বিলে বনভূমি থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ঘটনায় দেড় বছরে ২৪টি বন মামলা দায়ের করা হয়। সাইফুল আদালত থেকে নেমে জেলে যাবার আগে বলেন, এসব মামলার বিরুদ্ধে তিনি হাইকোর্টে রিট করবেন। ওই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের নির্দেশনার আলোকে ১০ লাখ টাকার রাজস্ব পরিশোধ করার পর জব্দ করা বালু তাঁর কাছে বিক্রি করেন ইউএনও।

এবিষয়ে জানতে চাইলে চকরিয়ার ইউএনও বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী তিনি নিলাম দিয়েছেন। সর্বোচ্চ দরদাতা হিসাবে সাইফুল ইসলামই পান বালু। বালু সরিয়ে নিতে গিয়ে ২৬ সেপ্টেম্বর সোমবার বনকর্মীদের সঙ্গে ঝামেলা সৃষ্টি হলে ইউএনও বনবিভাগের জমি ও খাসজমি চিহ্নিত করে দেন। নিলামে বালু সরকারি খাস জমিতেই রাখা হয়। অথচ বালু ডাককারীরা বন বিভাগের জমি থেকে বালু সরাতে গেলে বনকর্মীরা প্রবলভাবে বাঁধা দেন। এসময় সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে বনকর্মীদের উপর হামলা চালায়। এসিএফ প্রান্তোষের গাড়ি লক্ষ করে ভাংচুরের চেষ্টা চালায়। দুই জন রেঞ্জ কর্মকর্তাকে আহত করে। বনকর্মীদের উপর সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়ে করেন নাজেহাল। নিরাপত্তা জনিত কারণে বনকর্মীরা ইউপি চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলামের সহায়তায় ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলাম বলেন, রংমহল, দাংগারবিল, পাগলির বিল এলাকা থেকে বালু উত্তোলনের কারণে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছিল। হাইকোর্টের নির্দেশনায় বালু উত্তোলন বন্ধ হয়েছে। জব্ধ করা হয় বিপুল পরিমাণ বালু। এখন বালু বিক্রি নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে বন বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসন।

উল্লেখ্য, এ এলাকায় পাহাড়ি টিলা, ছড়া, খাল ও বন ভূমি থেকে বালু উত্তোলনের পর পার্শ্ববর্তী বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের দেয়াল ধ্বংসে পড়েছে। মাদারট্রি থেকে বিশাল বনাঞ্চল নিচিহ্ন হয়ে গেছে। বিস্তীর্ণ বনভূমি হাত ছাড়া হয়ে গেছে বন বিভাগের।

কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন সরকার এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন বন মামলার আসামির হাতে বালু উত্তোলনের দায়িত্ব দেয়া হলে সেখানে বনের চিহ্ন ও থাকবে না। চরমভাবে নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়বে বনকর্মীরা। এ অবস্থায় নামে মাত্রমূল্যে গোপন লিজ বাতিল করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আবেদন করেছেন স্থানীয় সচেতন মহল।

সংবাদটি শেয়ার করুন