ঢাকা | মঙ্গলবার
২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গ্রামে সি-সেকশন বেড়েছে ২৭ শতাংশ: গবেষণা

গ্রামে সি-সেকশন বেড়েছে ২৭ শতাংশ গবেষণা

শহরের সাথে পাল্লা দিয়ে গত ১৪ বছরে গ্রামেও সন্তান প্রসবে অপ্রয়োজনীয় সি-সেকশনের বেড়েছে। একে ’অস্বাভাবিক’ বলছে একটি দেশীয় গবেষণা। একই সাথে বেড়েছে সি-সেকশন করার খরচও।

`ম্যাসিভ বুম অব সিজারিয়ান ডেলিভারি ইন বাংলাদেশ: এ হাউজহোল্ড লেভেল এনালাইসিস’ শীর্ষক গবেষণায় ২০০৪ থেকে ২০১৮ সালের উপাত্ত বিশ্লেষণে এসব চিত্র উঠে এসেছে।

বিআইডিএসের মিলনায়তনে এক সেমিনারে বুধবার এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রায়ত্ব বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)।

বিআইডিএসের গবেষক ড. আব্দুর রাজ্জাক সেমিনারে এ গবেষণা উপস্থাপন করেন।

গ্রামে সি-সেকশনের হার বেড়ে যাওয়া ’উদ্বেগজনক’ বলছে বিআইডিএস। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘‘২০০৪ সালে গ্রামে যেখানে সিজারের মাধ্যমে সন্তান প্রসবের হার ছিল ২ শতাংশ, ২০১৮ সাল শেষে তা ২৯ শতাংশে পৌঁছেছে।”

দুই দশকে অপ্রয়োজনীয় সি-সেকশন ৮গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয় দেশে এই হার ২০০৪ সালে ৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ হলেও ২০১৮ সালে সি-সেকশনের হার বেড়ে হয় ৩৩ দশমিক ২২ শতাংশ।

তবে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বাস্থ্য নির্দেশনা অনুসারে, সি-সেকশনের গ্রহণযোগ্য হার হচ্ছে ১৫ শতাংশ। স্বাভাবিক প্রসবে স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে বা এড়ানো অসম্ভব এ ক্ষেত্রেই সি-সেকশনের পরামর্শ দেওয়া যায়।

দেশে বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে সি-সেকশন বাড়ছে। গবেষণার বরাতে প্রতিটি সি-সেকশনে পরিবারের খরচ বেড়ে যাওয়ার পরিসংখ্যানও তুলে ধরা হয়।

যেখানে বেসরকারি হাসপাতালে প্রতি সি-সেকশনে গড় ব্যয় করতে হচ্ছে ২১ হাজার ৫০০ টাকা। সেখানে সরকারি হাসপাতালে খরচ হচ্ছে ১৩ হাজার ৬২২ টাকা। আর এনজিও মধ্যস্থতায় হাসপাতালগুলোর ব্যয় হচ্ছে ১৬ হাজার ৮৬০ টাকা।

দেশে ধাত্রী বা মিডওয়াইফের সংখ্যা কমে যাওয়াকে সি-সেকশনের হার বেড়ে যাওয়ার একটি কারণ হিসেবে বলছে বিআইডিএসের গবেষণা।

প্রতিবেদনের পরিসংখ্যানে ২০১৮ সাল পর্যন্ত চিত্র উঠে আসলেও বর্তমান চিত্র আরও বেশি হতে পারে বলে সেমিনারে বলা হয়।

“নারীর শারিরিক জটিলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তার কর্মক্ষমতা কমছে, দীর্ঘ ও স্বল্প মেয়াদী সমস্যায় ভুগছেন। তাদের ব্যয় বাড়ছে। সিজারের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ হচ্ছে কি না, তা গবেষণা করা প্রয়োজন।”

ভারতে সিজারের হার ২২ শতাংশ, পাকিস্তানে ২২ শতাংশ, নেপালে ১৬ ও মিয়ানমারে তা ১৭ শতাংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয় ২০০৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ২৭ হাজার ৩২৮ জন গর্ভবতী নারীর সন্তান প্রসবের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে।

বক্তারা বলেন “আমাদের দেশে সিজার ইস্যুতে চিকিৎসকদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা প্রয়োজন। কেন সিজার করা হচ্ছে তার যৌক্তিকতা বের করতে হবে।”

গ্রামে সিজারের হার ২৯ শতাংশের উপরে হলেও শহরে এই হার ৪৪ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এ হার বৃদ্ধির বিষয়ে গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, শহুরে নারীর খাদ্যাভাস ও জীবন যাপনের কারণে সন্তান প্রসবে অনেক সময়ে জটিলতা দেখা দেয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সিজারের মাধ্যমে জন্ম দিতে বেসরকারি হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় হয় সিলেটে এবং সবচেয়ে কম ব্যয় হয় রংপুর বিভাগে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, দেশের আট বিভাগের মধ্যে ঢাকা বিভাগের সরকারি হাসপাতালে সি-সেকশনে গড়ে ১৩ হাজার ৩৮৩ টাকা, চট্টগ্রামে ১৫ হাজার ৮৩১, বরিশালে ১৬ হাজার ৮৪৬, খুলনায় ১১ হাজার ৮৯৩, রাজশাহীতে ১০ হাজার ৯৪১, সিলেটে ১৭ হাজার ৮৩৭, রংপুরে ৭ হাজার ৩১, ময়মনসিংহে ১১ হাজার ৫১৬ টাকা খরচ হয়।

বেসরকারি হাসপাতালে গড়ে দিতে হয় ঢাকা বিভাগে ২৩ হাজার ১৬৮, চট্টগ্রামে ২৫ হাজার ৫০৭, বরিশালে ২৮ হাজার ৯৫৯,খুলনায় ১৫ হাজার ৭২৯, রাজশাহীতে ১৫ হাজার ৭০৫, সিলেটে ৩০ হাজার ৫৫৭, রংপুরে ১৮ হাজার ২৩০, ময়মনসিংহে ১৯ হাজার ৯৭৩ টাকা।

বিআইডিএসের গবেষক ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “সরকারি ডাক্তাররাই দিন শেষে বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি করছেন, অপারেশন করছেন।ডেলিভারিতে ধনী-গরিব সকলের সমান অর্থ ব্যয় হয়। কেননা প্রত্যেকেই নিজের সবকিছু বিক্রি করে হলেও সন্তানকে বাঁচাতে যায়।”

আনন্দবাজার/কআ

সংবাদটি শেয়ার করুন