- কৃষিশ্রমিকের মৃদু হাসি
সন্ধ্যা হলেই বাড়তে থাকে ভিড়। নিজের আসনটি দখলে চলে প্রতিযোগিতা। খোশ গল্প চলে ঘুমানো অবধি। এভাবেই মাত্র ১৫ টাকায় চলে রাত্রী যাপন। কৃষি শ্রমিকদের এই মেসে আছে আলো, বাতাস ও টয়লেট সুবিধা। বগুড়া সদরের বাঘোপাড়া বন্দরে ব্যক্তি উদ্যোগে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে প্রতি সন্ধ্যায়। তবে সরকারীভাবে এসব কৃষি শ্রমিকদের নিরাপদে রাত্রী যাপনের কোনো উদ্যোগ নেই।
বগুড়ায় কৃষি জমিতে দীর্ঘদিন যাবৎ কাজ করেন বিভিন্ন জেলা থেকে আগত কৃষি শ্রমিক। স্থানীয় ভাষায় কামলা নামে পরিচিত তারা। প্রতিদিন ভোরে বিভিন্ন বন্দরে চলে কামলা বাজার। গৃহস্থরা দিনব্যাপী কাজের জন্য চুক্তিভিত্তিক কামলাদের নিয়ে যায় নিজের জমিতে। গোসল এবং ৩ বেলা খাবারের ব্যবস্থা গৃহস্থই করেন। সন্ধ্যা হলেই আবারো ঐ বন্দরে ফিরতে হয় এসব কৃষিশ্রমিকদের। বন্দরের দোকনগুলোর বারান্দায় একসময় রাত্রী যাপন করতো তারা। থাকতো চুরি, ছিনতাই ও বৃষ্টি-বাতাসের ভয়। সদরের বাঘোপাড়ায় সম্প্রতি নেওয়া হয়েছে ব্যতিক্রম উদ্যোগ। মাত্র ১৫টাকায় তারা পেয়েছে রাত্রী যাপনের ব্যবস্থা। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এসব ব্যবস্থা করে নিজেরাও যেমন আয়ের উৎস বাড়িয়েছেন, তেমনই শ্রমিকরাও স্বল্পমূল্যে সুবিধা পেয়ে সাচ্ছন্দে রাত্রীযাপন করতে পারছেন। বন্দরের আব্দুল খালেক সরকার প্রায় ১৫বছর পূর্বে ২/৪জন দিনমজুর থাকার ব্যবস্থা করেন তার মার্কেটে নিরাপত্তার সুবিধা বাড়াতে। ধীরে ধীরে অন্য কৃষি শ্রমিক ও দিনমজুররাও আগ্রহবোধ করলে ১০টাকায় রাত্রী যাপনের সুযোগ দেন তিনি। সম্প্রতি বিভিন্নকারণে তার মার্কেটের পিছনে ১টি বড় কক্ষ এবং মুরগীর ফার্মের জন্য তৈরী টিনশেট ফাঁকা জায়গায় প্রতিরাতে প্রায় ৭০জন দিনমজুর রাত্রী যাপন করেন ১৫টাকায়। তাদের জন্য রয়েছে ১০টি ফ্যান এবং ৩টি টয়লেট সুবিধা।
আব্দুল খারেক বলেন, ‘একসময় দোকানের সামনে অনিরাপদ ভাবে তারা রাত কাটাতো। বৃষ্টি বাতাসে সমস্যায় পড়তো। তাদের এই অবস্থা দেখে আমার পড়ে থাকা ফাঁকা জায়গায় তাদের রাখার কথা চিন্তা করি। প্রতিরাতে ২টি রুমে ৩৫ ও ৫০ জন করে থাকে। প্রতিরাতের টাকা প্রতিরাতেই উত্তোলন করা হয়। সবমিলিয়ে গড়ে ১হাজার টাকা উত্তোলন করা সম্ভব হয় প্রতিদিন।’
এ অঞ্চলে কৃষি আবাদ বেশি হওয়ায় কিশোরগঞ্জ, ঠাকুরগাও, রংপুর, গাইবান্ধা ও নিলফামারী এলাকা থেকে দিনমজুররা আসেন এখানে। পরিবার ছেড়ে এতদুরে এসে অনিরাপদে ভাসতে হয় তাদের। সরকারী উদ্যোগ না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ জীবনের চেয়ে ১৫টাকায় রাত্রী যাপনের পথই তাদের অন্যতম ভরসাস্থল। গাইবান্ধা থেকে আসা একলাস জানান, প্রতিদিন গড়ে ৫০০টাকা উপর্জন করেন তিনি। প্রতিসপ্তাহে জমানো টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ে বাড়ি পাঠান। বাড়িতে যান দীর্ঘদিন পর।
গোলজার নামে আরেক দিনমজুর জানান, একসময় রাতের বেলা তাদের টাকা ছিনতাই হতো। এছাড়া ঝড়তুফানে দোনের সামনে থাকার পরিবেশ নষ্ট হতো। তবে বর্তমানে ১৫টাকার বিনিময়ে নিরাপদ একটি আশ্রয় পেয়েছেন। নিরাপত্তা নিয়ে আর দুশ্চিন্তা করতে হয় না।
বাঘোপাড়া বন্দর ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বলেন, কামলাদের জন্য থাকার ব্যবস্থা করায় বেশ উপকৃত হয়েছেন তারা। সারাদিন পরিশ্রম করে এসে আরামে ঘুমাতে পারে। এতে বন্দরের বিশৃংখলাও কমে গেছে আগের তুলনায়। তবে সরকারী উদ্যোগে কৃষিশ্রমিকদের জন্য কোনো থাকার ব্যবস্থা করা হলে আরো নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত হতে পারবে শ্রমিকরা।
এব্যাপারে বগুড়া সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহফুজ আলম বলেন, বগুড়ায় আগের চেয়ে কৃষি উন্নয়ন হচ্ছে। বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষি শ্রমিক বছরের বিভিন্ন সময়ে এসে অস্থায়ীভাবে অনেক বন্দরে রাত্রী যাপন করেন। তাদের থাকার জন্য কোনো উদ্যোগ নেওয়া যায় কিনা, উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের সাথে এবিষয়ে কথা বলবো।