ঢাকা | সোমবার
২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পর্যটনশিল্পে সম্ভবনাময় বাগেরহাট

পর্যটনশিল্পে সম্ভবনাময় বাগেরহাট

দীর্ঘদিনেও নিশ্চিত হয়নি প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা

পর্যটনশিল্পে অপার সম্ভবনাময় জেলা বাগেরহাট। তবে, দীর্ঘদিনেও এখানে নিশ্চিত হয়নি প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা। সুন্দরবনের অপার সৌন্দর্য অপরদিকে ঐতিহাসিক ষাটগম্বুজ মসজিদ দেশের ৩টি বিশ্ব ঐতিহ্যের দুটিই বাগেরহাটে। পর্যটন শিল্পে এ জেলার অপার সম্ভবনা থাকলেও দীর্ঘদিনেও নিশ্চিত করা যায়নি প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা। এছাড়াও রয়েছে মানসম্মত খাবার হোটেল-আবাসন ব্যবস্থারও সংকট। সবকিছু মিলিয়ে নানা সংকটে দিন দিন সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ছে সম্ভাবনাময় এ জেলার পর্যটনশিল্প। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সুন্দরবন ও ষাটগম্বুজ  মসজিদসহ জেলাকে পর্যটনবান্ধব করে গড়ে তুলতে নেওয়া হচ্ছে নানা পদক্ষেপ।   

বাগেরহাটের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত সংরক্ষিত অধিকাংশ পুরাকীর্তি গুলো অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। স্থাপনা প্রাঙ্গনে বিচরণ করছে গরু-ছাগল। কয়েকটি স্থাপনার দেয়ালও ধ্বসে গেছে। সবকিছু  মিলিয়ে সংস্কার ও সংরক্ষণের অভাবে দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে প্রাচীন এসব স্থাপনা। 

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ও পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, হযরত খানজাহান আমলে নির্মিত ইসলামী স্থাপত্য রীতির মসজিদগুলোর ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনা করে ১৯৮৫ সালে বাগেরহাট জেলাকে ঐতিহাসিক মসজিদের শহর হিসেবে ঘোষণা এবং ৩২১তম বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত করে ইউনেস্কো। এর মধ্যে বাগেরহাটের ১৭টি স্থাপনাকে তালিকাভুক্ত করা হয়। তালিকাভুক্ত স্থাপনা ছাড়াও বাগেরহাটে আরও অনেক পুরাকীর্তি ও দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা রয়েছে। সম্প্রতি বাগেরহাটের বিভিন্ন এলাকায় আরও ১৬৩টি প্রত্নস্থান (সাইট) শনাক্ত করেছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। গত একবছরে সুন্দরবনের বাগেরহাট অংশে পর্যটক এসেছেন ১ লক্ষ ২০ হাজার জন। অন্যদিকে বাগেরহাটের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থি ষাটগম্বুজ মসজিদে এসেছেন ১ লাখ ৮০ হাজার দর্শনার্থী।

বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ-সুন্দরবন ট্যুরিজম ট্যুর অপারেটরের পরিচালক মীর ফজলে সাঈদ ডাবলু বলেন, বাগেরহাটে অনেক পর্যটন স্পট থাকলেও সুযোগ-সুবিধা খুবই কম। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের অভাবে পর্যটকদের সঙ্গে স্থানীয়দের আচার-ব্যবহারে ঘাটতি রয়েছে। এছাড়া ষাটগম্বুজ, মোংলাসহ বিভিন্ন স্থানের হোটেল-রেস্টুরেন্টের কর্মচারিদেরকেও প্রশিক্ষণ দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

সদর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রিজিয়া পারভীন বলেন, পদ্মা সেতুর ফলে বাগেরহাটের সঙ্গে সারাদেশের যোগাযোগ সহজ হয়ে গিয়েছে। জেলার প্রবেশপথে নির্দিষ্ট স্থানে ব্যানার বা বিলবোর্ড এর মাধ্যমে যদি এক নজরে বাগেরহাটের দর্শনীয় স্থাপনার বর্ণনা, যাতায়াত ব্যবস্থা, খাবার ও থাকার হোটেল লিখে রাখা যায় তবে দর্শনার্থীদের জেলায় ভ্রমণ আরও সহজতর হবে। 

বাগেরহাট প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কাস্টোডিয়ান মো. যায়েদ বলেন, পর্যটন নগরী বাগেরহাটে আগত দর্শনার্থীদের জন্য লোকালয়ে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা (হোমরেস্ট) করতে পারলে স্থানীয়রা বেশ লাভবান হবেন। এছাড়া দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে ষাটগম্বুজের সামনের বিশ্রামাগার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পাশাপাশি মসজিদ সংলগ্ন ঘোড়াদিঘিকে নান্দনিক করতে ওয়াক ওয়ে তৈরি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।  

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, সুন্দরবনে পরিবেশবান্ধব পর্যটন বা ইকো-ট্যুরিজম সুবিধা সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় আরও চারটি ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্র গড়ে তোলা হচ্ছে।  নতুন করে তৈরি হতে যাওয়া ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্রগুলো হচ্ছে সুন্দরবনের খুলনা রেঞ্জের শেখেরটেক ও কালাবগী এবং শরণখোলা রেঞ্জের আলীবান্ধা ও চাঁদপাই রেঞ্জের আন্ধারমানিক।

বাগেরহাট জেলা প্রশাসক আজিজুর রহমান বলেন, বাগেরহাটকে পর্যটনবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে সরকার নানা উদ্যেগ নিয়েছে। প্রত্যেকটি পর্যটন কেন্দ্রের শোভা বর্ধন, আবাসন ব্যবস্থা, মানসম্মত খাবার, বিপনন কেন্দ্র, সহজ যাতায়াত, সার্বিক নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। অচিরেই বাগেরহাটের পর্যটন শিল্প আরও বিকাশিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

সংবাদটি শেয়ার করুন