রবিবার, ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গ্রামীণ জনপদের উন্নয়নে এলজিএসপি

গ্রামীণ জনপদের উন্নয়নে এলজিএসপি
  • ৬ অর্থ বছরে সাড়ে ৩২ কোটি টাকার উন্নয়ন
  • ডিসেম্বরে শেষ হচ্ছে প্রকল্পটি
  • জেলায় ২,৩৩০টি প্রকল্প বাস্তবায়ন
  • নতুন প্রকল্পের দাবি জনপ্রতিনিধিদের

শহরের সব ধরনের সুবিধা গ্রামে যেন পাওয়া যায় সে বিষয়ে বর্তমান সরকার গভীর মনোযোগ দিয়েছে। বর্তমান সময়ে প্রতিটি গ্রামের রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে অবকাঠামোগত উন্নয়ন চোখে পড়ার মতো। শহরে বসবাস করে একজন মানুষ যে ধরনের সুবিধা পায় ঠিক একই সুবিধা গ্রামে বসেও পাওয়া যায়। বিগত এক যুগের বেশি সময় ধরে গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়নে বড় ভূমিকা রেখে আসছে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্ব ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় লোকাল গভর্ন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্ট(এলজিএসপি)।

প্রান্তিক মানুষের সঙ্গে জুড়ে থাকা প্রকল্পের নাম এলজিএসপি। এ দেশের গ্রামীন জনপদের উন্নয়নে একটি সফল প্রকল্প। ইতোমধ্যে এর আওতায় যেসব উন্নয়ন কাজ হয়েছে তা প্রত্যক্ষভাবে সুফল পাচ্ছেন গ্রামীন জনপদের মানুষ।

সবুজ মাঠের বুক চিরে যাওয়া কাঁচা রাস্তা। যা নিয়ে যুগের পর যুগ কয়েক গ্রামের মানুষের ভোগান্তি। রাস্তার পাশে পুকুর। দীর্ঘদিন অল্প অল্প ভাঙনের কারণে রাস্তার অনেকাংশই গিলেছে পুকুর। ওই রাস্তা দিয়ে চলাচলে মানুষের চরম ভোগান্তি। এমন সব পুকুরের পাড় বাঁধাই। গ্রামের কোন বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও শহীদ মিনার নির্মান। এ রকম অসংখ্য গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়ন করে আসছে এলজিএসপি। তবে, ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসেই প্রকল্পটি সমাপ্ত হবে। এই প্রকল্পের ধারাবাহিক সাফল্যে আবারো নতুন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগণ সুপারিশ করেছে।

আরও পড়ুনঃ  ডেঙ্গুতে ১১ জনের মৃত্যু

স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়ে আসছে। এই প্রকল্পটি সাফল্যের সাথে বিগত ১৫ বছর ধরে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়ে আসছে। ২০০৬ সালে সিরাজগঞ্জে পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে যাত্রা শুরু হয়ে ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত ‘সেকেন্ড লোকাল গভর্ন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্ট (এলজিএসপি-২)’ এবং তারপর হতে অদ্যাবধি লোকাল গভর্ন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্ট-৩ (এলজিএসপি-৩)  সফলভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে।

এ প্রকল্পের অর্থ দিয়ে ওয়ার্ডভিত্তিক সভা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্থানীয় জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাদের চাহিদা অনুযায়ী উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাসস্তবায়ন করা হচ্ছে। এলজিএসপি প্রকল্প বাসস্তবায়নের মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রমের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণ থাকায় ইউনিয়ন পরিষদের জবাবদিহিতা ও কাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিত হচ্ছে।

জয়পুরহাট জেলায় এ প্রকল্পের আওতায় ৬ অর্থ বছরে ৩২ কোটি ৫২ লাখ ৯ হাজার ১৫৫ টাকা। এ সময়ের  মধ্যে জয়পুরহাট জেলায় মোট ২ হাজার ৩৩০টি প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। এরমধ্যে যোগাযোগের এক হাজার ২৭১টি, স্বাস্থ্য ৮৫টি, পানি সরবরাহ ৬৪টি, প্রকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা ১৬৮টি, শিক্ষা ১৬৮টি, কৃষি ও বাজার ১৬টি, পয়:নিষ্কাষণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ৪৪৯টি, উন্নয়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধি ৯৮টি, অন্যান্য ১১টি প্রকল্পের কাজ হয়েছে।

এলজিএসপি প্রকল্পের অর্থ নির্ধারিত বিভাজন অনুযায়ী সরাসরি ইউনিয়ন পরিষদের ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করা হয়। এ প্রকল্পের মাধ্যমে দুই ধরনের অর্থ বরাদ্দ প্রদান করা হয়ে থাকে মৌলিক থোক  বরাদ্দ (বিবিজি) ও দক্ষতা ভিত্তিক বরাদ্দ (পিবিজি)। ইউনিয়ন পরিষদের নিরীক্ষা সংক্রান্ত কোন আপত্তি না থাকলে বিবিজি বরাদ্দ সকল ইউনিয়ন পেয়ে থাকে এবং যে সকল ইউনিয়ন এর কার্যক্রম তুলনামূলক ভাল সে সকল ইউনিয়ন পরিষদ পুরস্কার হিসাবে দক্ষতা ভিত্তিক বরাদ্দ (পিবিজি) পেয়ে থাকে।

আরও পড়ুনঃ  পাইকগাছায় সাংবাদিককে জীবন নাশের হুমকি

বর্তমান সরকারের ডিজিটাল কার্যক্রমের বড় সাফল্য হচ্ছে মোবাইল ফোনের ক্রমবর্ধমান ব্যবহার।  বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপে গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে প্রতিটি ক্ষেত্রে ইন্টারনেট ব্যবহারকে অবশ্যই সবার জন্য সহজলভ্য করতে হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ায় ভূমিকা রাখতে এলজিএসপি-৩ প্রকল্প ইউনিয়ন পরিষদ সহ সকল জনগণের ব্যবহারের জন্য মোবাইল ভিত্তিক এ্যান্ড্রুয়েড এ্যাপ খএঝচ এড় প্রবর্তন করেছে। যার মাধ্যমে সমগ্র বাংলাদেশের ইউনিয়ন পরিষদের এলজিএসপি-৩ এর অর্থ বরাদ্দ, প্রকল্প বাস্তবায়ন অবস্থা ইত্যাদি জানা যাবে। ইউনিয়ন পরিষদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করণে উক্ত এ্যাপটি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করবে। এলজিএসপি-৩ প্রকল্প সারা বাংলাদেশের গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে।

জয়পুটহাট জেলা স্থানীয় সরকার উপ পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো: আনোয়ার পারভেজ জানান, স্থানীয় সরকারের সর্বনিম্ন স্তর হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ। এই ইউনিয়ন পরিষদ প্রান্তিক মানুষের সবচেয়ে কাছে থাকে। ইউনিয়ন পরিষদ এ এলজিএসপি প্রকল্পের মধ্যে এলাকার উন্নয়ন করে থাকে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রকল্প। প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয়ে এসেছে। বিগত সময়ে এলজিএসপি প্রকল্পের সাফল্য বিবেচনা করে প্রান্তিক জনপদে উন্নয়নে এরকম প্রকল্প চলমান থাকা প্রয়োজন।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন