ঢাকা | শুক্রবার
৩রা জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
১৯শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চলে গেলেন রণেশ মৈত্র

চলে গেলেন রণেশ মৈত্র

ভাষা সংগ্রামী মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও পাবনা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক সাংবাদিক ও কলামিস্ট রণেশ মৈত্র গতকাল সোমবার ২৬ সেপ্টেম্বর ভোর ৩:৪৫ মিনিটে ঢাকার পপুলার হাসপাতালে পরলোকগমন করেছেন। তিনি স্ত্রী বীরমুক্তিযোদ্ধা পুরবী মৈত্র দুই ছেলে ও তিন মেয়েসহ অসখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯০ বছর।

রণেশ মৈত্র ১৯৩৩ সালের ৪ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। পৈত্রিক নিবাস পাবনার সাঁথিয়া থানার ভুলবাড়িয়া গ্রামে।  অতি শৈশবে বাবার হাত ধরে চলে আসেন বামপন্থি অধ্যুষিত পাবনা শহরে। ভর্তি হন জিসি ইনস্টিটিউশনে। সেখানে ভর্তি হয়ে বামপন্থায় দীক্ষা নেন স্কুলশিক্ষক জ্যোতিভূষণ চাকীর কাছে। পাবনা শহরে বসবাসসূত্রে সান্নিধ্য লাভ করেন ছাত্র ফেডারেশন কর্মী আমিনুল ইসলাম বাদশা, সেলিনা বানু, প্রসাদ রায়, আবদুল মতিনসহ অনেকের। ডানপিঠে কিশোর যুক্ত হন ভাষা-আন্দোলনে। ছাত্র ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠিত হলে তাতে যোগ দেন।

অল্প বয়সেই প্রগতিশীল রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে নেতৃত্বের সামনের কাতারে চলে আসায় পাকিস্তানি গোয়ান্দোরা তাঁকে সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখতো। প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পাদিত ‘ঝবপৎবঃ উড়পঁসবহঃং ড়ভ ওহঃবষষরমবহপব ইৎধহপয ড়হ ঋধঃযবৎ ড়ভ ঞযব ঘধঃরড়হ ইধহমধনধহফযঁ ঝযবরশয গঁলরনঁৎ জধযসধহ, ঠড়ষ-৩, (১৯৫৩)’, ঠড়ষ-৩ (১৯৫৩), গ্রন্থের ৫৫ পৃষ্ঠায় দেখা যাচ্ছে, ১৯৫৩ সালের ২৮ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী ও শেখ মুজিবের জনসভা উপলক্ষ্যে সকাল ৯টায় পাবনা থেকে রণেশ মৈত্রসহ কজন ছাত্রনেতা ও একদল ছাত্রকে নিয়ে ঈশ্বরদীর পথে রওয়ানা হন। পুরো সময় তাঁরা গোয়েন্দা নজরদারিতে থাকেন। 

পরবর্তী সময়ে শিক্ষকতা, রাজনীতি এবং সাংবাদিকতা করতে গিয়ে পাকিস্তান সরকারের  সন্দেহের তালিকায় থেকেছেন। ফলে প্রতি মুহূর্তে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হতো। এমনকি তাঁর বিয়ের দিন পর্যন্ত কঠোর নজরদারিতে রাখে গোয়েন্দারা। ছদ্মবেশে বরযাত্রীদের সঙ্গে তারা মিশে যায়, যা এক পর্যায়ে জানাজানি হয়। এসব কথা তাঁর ‘আত্মজীবনী’তে বারবার এসব প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন।

রণেশ মৈত্র ছিলেন সেই সংগ্রামী মানুষ, যিনি পাকিস্তানি দুঃশাসনের কালে এক যুগের বেশি সময় কারাগারে কাটিয়েছেন। আজীবন লিখেছেন শোষিত-বঞ্চিত মানুষের পক্ষে। ছিলেন বঙ্গবন্ধুর কারাসঙ্গী। ‘কারাগারের রোজ নামচা’য় বঙ্গবন্ধু ছয় বার তাঁর কথা উল্লেখ করেছেন।

রণেশ মৈত্র ছিলেন সাহসী সাংবাদিক ও কলামিস্ট। লেখক হিসেবেও পরিচিতি লাভ করেন। তাঁর গ্রন্থগুলো হলো – ‘রুদ্র চৈতন্যে বিপন্ন বাংলাদেশ’, বাংলাদেশ কোন পথে?’, ‘আত্মজীবনী’, ‘আঁধার ঘোঁচানো বঙ্গবন্ধু’, ‘প্রবন্ধ সংগ্রহ’। তাঁকে নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে ‘নিঃসঙ্গ পথিক রণেশ মৈত্র’ সম্মাননাগ্রন্থ উল্লেখযোগ্য।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার তাকে ২০১৮ সালে একুশে পদকে ভূষিত করেন এই মহান মানুষের  মৃত্যুতে পাবনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে, তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন পাবনা প্রেসক্লাব এর সভাপতি এবিএম ফজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক সৈকত আফরোজ, পাবনা জেলা প্রাশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন, পাবনা পুলিশ সুপার আকবর আলী  মুন্সীসহ আরও অনেকে।

সংবাদটি শেয়ার করুন