ঢাকা | শুক্রবার
১১ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২৬শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কি দোষ ছিলো রানার?

কি দোষ ছিলো রানার?

গাজীপুরের শ্রীপুরে চুরির মিথ্যা অপবাদ দিয়ে যুবক রানা মিয়াকে (৩০) মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনে মৃত্যুর ঘটনায় এলাকাবাসী ফুঁসে উঠছে। তারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে বিচার দাবি করছে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর ময়নাতদন্ত শেষে রাত ৮টায় রানার লাশ বাড়িতে নিয়ে আসলে উপজেলার মাওনা উত্তর পাড়া গ্রামের মাওনা-ধনুয়া সড়কের নোমান কারখানা সংলগ্ন স্থানে বিক্ষোভ ও মানববন্ধনে তারা এ দাবি জানান। নিহত রানা উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের মুলাইদ গ্রামের আমিরুল ইসলামের ছেলে।

হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত আসামীরা হলো- শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া পশ্চিমখন্ড এলাকার আব্দুল করিমের ছেলে শিপন ও আকাশ, একই এলাকার মৃত খোকার ছেলে উজ্জ্বল, সিরাজুল ইসলামের ছেলে শওকত হোসেন, আবুল কাশেমের ছেলে ইমন, মৃত ওদর আলীর ছেলে মোশারফ হোসেনসহ অজ্ঞাত ৪-৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। রানার বাবা আমিরুল ইসলাম বাদী হয়ে রবিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) তাদের নামে মামলা দায়ের করে। আসামীদের বয়স ২৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে।

নিহত রানার বাবা আমিরুল ইসলাম জানান, শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাত আনুমানিক ১১টায় রানাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায় শিপন ও তার সহযোগীরা। পরে মুলাইদ (পশ্চিম পাড়া) গ্রামের পিয়ার আলী কলেজের পেছনে শিপনের ভাঙারি দোকানের সামনের রাস্তায় ফেলে রানাকে রাতভর মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করে। শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬টায় স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পারি শিপন ও তার লোকজন রানাকে মারপিট করছে। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে ছেলেকে উদ্ধার করতে চাইলে আমাকে ও আমার স্ত্রীকে মারপিট করে। এ সময় নির্যাতনকারী শিপন, তার ভাই ও অন্যান্য সহযোগীরা রানার মায়ের মাথার চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলে। উদ্ধারের পর রানাকে নিয়ে হাসপাতালে রওনা হলে শিপনসহ তার লোকজন হাসপাতালে যেতে বাধা দেয়। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় নির্যাতনকারীরা জোর করে একাধিক সাদা কাগজে টিপসই নিয়ে ছেড়ে দেই।

তিনি আরো জানান, রানা মারা যাওয়ার মুহুর্তে আসামীদের নাম ও তাকে নির্যাতনের কথা বলে গেছে। আসামীরা রানাকে মিথ্যা চুরির অপবাদ দিয়ে দোকানের সামনের রাস্তায় ফেলে সারারাত মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালিয়েছে। শিপন ও তার ভাই আকাশ রানার মুখে কাগজ গুজে দিয়ে পুরুষাঙ্গের ভেতর রড ঢুকিয়ে নির্যাতন চালায়। সে চিৎকার করলে আরো কাগজ মুখে গুঁজে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় বৈদ্যুতিক শক দেয়। একপর্যায়ে ড্রিল মেশিন দিয়ে পা ছিদ্র করে ফেলে এবং হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে দুই হাত-পা ও বুকের পাঁজর ভেঙে দেয়। প্রকাশ্যে রানাকে এভাবে নির্যাতন করলেও তাদের ভয়ে কেউ রানাকে উদ্ধার করতে এগিয়ে যায়নি। 

মানববন্ধনে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, আসামী শিপন তার ভাঙ্গারী ব্যবসার চোরের সিন্ডিকেট আড়াল করার জন্য নির্যাতন করে রানাকে হত্যা করেছে। ওই ব্যবসার আড়ালে তার একটি চোর সিন্ডিকেট রয়েছে। ওই সিন্ডিকেটের লোকজন রাত ১০ টার পর থেকে মাওনাসহ আশপাশের নির্মানাধীন বাসাবাড়ি ও কারখানা থেকে লোহার রডসহ মূলবান বিভিন্ন যন্ত্রাংশ চুরি করে এনে তার ভাঙ্গারি দোকানে বিক্রি করে। রানাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। অভিযুক্ত আসামীদের গ্রেফতার করে দ্রুত বিচার দাবী করেন তারা।

রানার মা রেহেনা আকতার জানান, শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকালে রানার বাবাকে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি শিপনসহ তার সহযোগীরা রানাকে পিটিয়ে শরীরে লাল দাগ ফেলে দিয়েছে। এসময় তাদের পায়ে ধরে মাফ চাইলেও তারা মাফ করেনি। এসময় শিপন ও তার ভাই আকাশ আমার চুলের মুঠি ধরে আমাকেও মারপিট শুরু করলে আমার মাথার চুল ছিঁড়ে যায়। বাধা দিতে গেলে তারা আমার স্বামীকেও মারধর করে। কী অপরাধ ছিল আমার রানার? ওরা আমার রানাকে পিটিয়ে মেরেই ফেললো।

প্রধান আসামী শিপনসহ তার সহযোগীরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে থাকায় এবং তাদের মোবাইল বন্ধ থাকায় অভিযুক্তদের বক্তব্য পাওয়া যায়ান।

শ্রীপুর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আজিজুল হক জানান, ঘটনার পর আসামীরা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। পুলিশের একাধিক টিম তাদেরকে গ্রেফতারে মাঠে রয়েছে। আমরা শীঘ্রই আপনাদেরকে গ্রেপ্তারের খবর জানাতে পারব।

সংবাদটি শেয়ার করুন