সরকারি কোনো সুযোগ সুবিধা পাই না। কাজ না করলে খাবো কী? চুরিতো আর করতে পারবো না। যেই বয়স হইছে এবং কাউকে ঠকিয়েও চলতে পারবো না! সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দক্ষিণ আইচা বাজারে কলসিতে করে বিভিন্ন দোকানে দোকানে পানি দিয়ে যে টাকা পাই সেটা দিয়েই সংসার চালাই। কথাগুলো বলেছেন সোনা মিয়া। বয়স তার ৭৫ বছর।
এর আগে সোনা মিয়া কৃষি পেশা ও মানুষের বাড়িতে কাজকর্ম করে পরিবার নিয়ে কোনো রকম দিনযাপন করতেন। পরে বয়স বেড়ে যাওয়ায় কোনো কাজ না করতে পারায় পানি টেনেই সংসার চালানের পথ বেচে নেন সোনা মিয়া। দুর্যোগ উপেক্ষা করে অথবা প্রচন্ড কড়া রোদেও সকাল ৭ টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দক্ষিণ আইচা বাজারের বিভিন্ন দোকানে দোকানে ড্রাম ভর্তি করার লক্ষ্যে পানি টানেন।
দোকানদারের চাহিদা অনুযায়ী পানি সরবরাহ করতে হয়। কোনো দোকানে টিউবওয়েলের পানি আবার কোথাও পুকুরের পানি দেন। তাতে ৫ টাকা করে প্রতি কলসি পানি বিক্রি করে দৈনিক ৮০ থেকে ১০০ টাকা আয় হয়। তা দিয়েই মোটামুটি জীবন চলে সোনা মিয়ার পরিবারের। অসুস্থ থাকলে সেদিন পরিবার পরিজন নিয়ে না খেয়ে দিনযাপন করেন সোনা মিয়া।
সোনা মিয়া চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ আইচা থানার চরমানিকা ইউনিয়ন ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। স্ত্রী এবং ৩ ছেলে ৩ মেয়েসহ ৮ জনের পরিবার তার। ৩ ছেলে আলাদা আলাদা পেশায় কর্মরত থেকে বিয়ে করে স্ত্রী সন্তান নিয়ে আলাদা থাকেন। ৩ মেয়েকেও বিবাহ দিয়েছেন তিনি, মেয়েরা জামাই বাড়িতে আছেন। সোনা মিয়ার বসত ভিটা ছাড়া আর কোন জায়গা নেই। ওই বসতভিটাতে বসবাস করছেন তার পরিবার সহ তিনি।
সোনা মিয়া বলেন, ঝড়-বৃষ্টি, তুফান যতই প্রাকৃতিক দুর্যোগ হোক ঘরে বসে থাকার সুযোগ নেই, কারণ পানি না টানলে খাবো কি? ঘরে বসে থাকলেতো কেউ একবেলা খাওয়াবে না। চেয়ারম্যান-মেম্বাররা তো আর রিলিফ দিবে না। তাই যতক্ষণ পরিশ্রম করবো ততক্ষন খেতে পারবো। দোকানে দোকানে পানি দিয়ে সংসারের ঘানি টেনে কোনো রকমে বাকি জীবনে বেঁচে থাকতে চাই।
এ বিষয়ে চরফ্যাশন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মামুন হোসাইন জানান, বয়স্ক ভাতার বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা তালিকা করে। তবে, বৃদ্ধার বিষয়ে আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। তিনি আর জানান, ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের বরাদ্দ শেষ হয়ে গেছে, নতুন কোনো বরাদ্দ আসলে ওই বৃদ্ধাকে ভাতার আওতায় আনা হবে।