ঢাকা | সোমবার
২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তাল সম্রাজ্যে পিঠার মেলা

তাল সম্রাজ্যে পিঠার মেলা

বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে তালগাছের সর্ম্পক বহুদিনের। এক সময় তালপাখার বাতাস না হলে মন জুড়াতো না। তালের ডিঙি ছাড়া চলাচল করা যেত না। বর্তমানে এসবের ব্যবহার কমেছে। তবে, আজও তালের পিঠা, তালের গুড়ের পায়েস কিংবা তালের রুটি না খেলে বাঙালির মন জুড়ায় না। আর বজ্রপাতের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে তালগাছের তো বিকল্প নেই।

তাই এখনো বিভিন্ন সড়কের পাশে, বাড়ির পাশে লাগানো হচ্ছে তালগাছ। এর ধারাবাহিকতায় সবুজ মাঠের বুক চিরে নওগাঁ নিয়ামতপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে হাজ্বীনগর ইউনিয়নের তালতলী মোড় থেকে ঘুঘুডাঙ্গা মোড় পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার গ্রামীণ পথের দুইপাশে রয়েছে সারি সারি তালগাছ। এ সৌন্দর্য উপভোগে প্রতি বছর আয়োজন করা হয় তাল পিঠার মেলা। এবারও তিন দিনব্যপী আয়োজন করা হয়েছে পিঠা মেলার। এ মেলায় হাজারও মানুষের সমাগম ঘটেছে। আগতরা সড়কটির সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি স্বাদ নিতে পারছেন বাহারি তাল পিঠার। এ বছর তালের পাটিসাপটা, তালে জিলাপি, তালের বড়া, তালের ঘীর, তালের কফি, তালের আমতা, তালের নাড়ুসহ অন্তত ২০ ধরনের পিঠা মিলছে এ মেলায়। এখানে হরেক রকমের তাল পিঠার পসরা সজিয়ে বসেন বিভিন্ন জেলা থেকে আসা দোকানিরা।

নওগাঁ সাপাহার উপজেলা থেকে আসা মীনা পিঠা ঘরের মালিক মীনা জানান, প্রতিবছরের মতো এবারও বিভিন্নরকম তালের পিঠা দিয়ে দোকান সাজানো হয়েছে। এবারে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী তালের প্রায় সব ধরনের পিঠাই রাখার চেষ্ঠা করেছি এই আয়োজনে। প্রতিবছরের তুলনায় এ বছর বেচাকেনা অনেকটাই বেশি হচ্ছে। মেলাকে ঘিরে নওগাঁ ছাড়াও বেশ কয়েকটি জেলা থেকে দোকানিরা এসেছেন। তিন দিনের এ তাল পিঠার মেলায় প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষের সমাগম হয়। জেলার বাইরে ও বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ আসেন এখানে।

মেলায় পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা চাপাইনবাবগঞ্জ এর সবুজ হোসাইন বলেন, ঘুঘুডাঙ্গা তাল সড়কের ছবি ফেসবুকে অনেক দেখেছি। এবার সরাসরি দেখার জন্য পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে চলে এসেছি। তাল গাছের এমন লম্বা সারির মনোরম দৃশ্য সত্যি আমাদের মুগ্ধ করেছে। পাশাপাশি মেলাতে বিভিন্ন প্রজাতির তালের পিঠার সঙ্গে পরিচিত হতে পারলাম। তালের যে এত রকম পিঠা হয় এর আগে জানা ছিল না। এখানে এসে খুব ভালো লাগছে।

১৯৮৬ সালের দিকে এ তালগাছগুলো রোপণ করেছিলেন বর্তমান খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। তখন তিনি ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। উদ্দ্যেশ্য ছিলো বজ্রপাত থেকে রক্ষার পাশাপাশি যোগ হবে বাড়তি সৌন্দর্য। এ পিঠা মেলার আয়োজনও তিনিই করেন।

একটা সময় আমি থাকবো না, তবে এমন আয়োজন যুগের পর যুগ থাকবে এমনটাই প্রত্যাশা করে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, প্রতি বছর ভাদ্র-আশ্বিনে বর্নিল এ আয়োজন বসানো হয়। মেলাকে উপলক্ষ করে বাড়িতে বাড়িতে জামাই-মেয়ে আর স্বজনরা বেড়াতে আসেন। মূলত নতুন প্রজন্মের কাছে বিভিন্ন প্রজাতির গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী তালের পিঠা পরিচিত করে দিতেই এমন আয়োজন।

সংবাদটি শেয়ার করুন