ইন্দুরকানীর সাবেক ইউএনওর বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ
ফিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলায় মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য বরাদ্দকৃত ঘর বরাদ্দে অনিয়মের সত্যতা পেয়েছে জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দেওয়া প্রতিবেদনে ইন্দুরকানী উপজেলার সাবেক ইউএনও বর্তমানে ঢাকায় প্রশিক্ষণে থাকা হোসাইন মুহাম্মদ আল মুজাহিদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার আমিন উল আহসান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর শুপারিশ করেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভূমিহীন ও গৃহহীনদের গৃহ প্রদান বিষয়ে গত ২৩ জুন গণমাধ্যমে ‘আশ্রয়ণের ঘরে এসি’ শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের বিষয় সরেজমিনে তদন্ত করা জন্য পিরোজপুর জেলা প্রশাসক তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য গৃহ প্রদানের লক্ষ্যে ভূমিহীন পরিবার বাছ্ইায়ের ক্ষেত্রে গৃহ প্রদান নীতিমালা বাছাই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি। ‘আশ্রয়ণের ঘরে এসি’ লাগানো ইকবাল সেপাই তিনি ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত প্রকৃত ভূমিহীন নন মর্মে প্রতীয়মান হয়। ইকবাল সেপাইয়ের ঘরটি অনুমোদিত নকশা ও প্রাক্কলনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে নিজেই নিজের ইচ্ছামতো নির্মাণ করেছেন। যা সঠিক মতো পর্যবেক্ষণ করা হয়নি। এ ক্ষেত্রে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেছেন মর্মে পিরোজপুর জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি উল্লেখ করা হয়।
এ ব্যাপারে বিভাগীয় কমিশনারের শাস্তি সুপারিশের বিষয় স্বীকার করে বর্তমানে ঢাকায় অবস্থানরত (প্রশিক্ষণ) সাবেক ইউএনও হোসাইন মুহাম্মদ আল-মুজাহিদ বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য মহোদয়ের প্রেরিত আধা সরকারি পত্র, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রদত্ত ভূমিহীন সনদপত্র, আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন সংক্রান্ত উপজেলা টাস্কফোর্স কমিটির সভায় সর্ব সম্মতভাবে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুসারে ইকবাল সেপাইর ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়।
স্থানীয় বালিপাড়া ইউনিয়ান পরিষদের চেয়ারম্যান কবির হোসেন বয়াতি বলেন, ভূমিহীন হিসেবে ইকবাল সেপাইকে সনদপত্র দেওয়া হয়েছে।
তবে এ বিষয় ইন্দুরকানী উপজেলার বর্তমান ইউএনও লুৎফুনেসা খানম এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
উল্লেখ্য, মুজিববর্ষ উপলক্ষে দেশের সব ভূমিহীন ও গৃহহীনের জন্য গৃহ প্রদান নীতিমালা ২০২০-এর অনুচ্ছেদ ৫ (ক) অনুযায়ী ‘ক’ শ্রেণির ভূমিহীন পরিবার বলতে যাদের জমি ও ঘর কিছুই নেই তাদের বুঝাবে। কিন্তু তদন্ত প্রতিবেদন হতে দেখা যায় যে, স্থানীয় ছাত্রসমাজের সভাপতি ইকবাল সেপাইয়ের পিতা স্থানীয় জাতীয় পার্টি-জেপি’র সদস্য মো. আলমগীর সেপাই ২০১৯-২০ অর্থবছরে একটি দুর্যোগসহনীয় ঘর বরাদ্দ পেয়েছিলেন। রেকর্ড অনুযায়ী এবং মাতার ওয়ারিশ সূত্রে মো. আলমগীর সেপাই মোট ০.৩০৩৫ একর সম্পত্তিতে স্বত্ববান। ওই সম্পত্তি অবণ্টনকৃত অবস্থায় রয়েছে। ওই সম্পত্তি বণ্টন করা হলে উল্লিখিত উপকারভোগী ইকবাল সেপাই ০.০৫৯০ একর সম্পত্তি ওয়ারিশ সূত্রে প্রাপ্ত হবেন। অর্থাৎ তিনি ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত প্রকৃত ভূমিহীন নন মর্মে প্রতীয়মান হয়।