ঢাকা | সোমবার
২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নরসুন্দরদের পেশা বদল

নরসুন্দরদের পেশা বদল

বাংলার আবহমান ঐতিহ্যবাহী প্রাচীনতম পেশা নরসুন্দর  বা নাপিত আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে। সেলুনে এখন আর শান দেয়া ক্ষুর দেখাই যায় না। তার বদলে এসেছে ব্লেড লাগানো ক্ষুর। এসেছে শেভিং ক্রিম, লোশন, চুলের কলপ ও বিভিন্ন রকমের কালার। আগে এগুলো ছিল কল্পনার অতীত। দৈনন্দিন গ্রামীণ জীবনযাত্রার গুরুত্বপূর্ণ আনুষঙ্গিক বিষয়ের মধ্যে চুল কাটা-ছাটা, সেভ ইত্যাদি কাজে দীর্ঘকাল ধরে নিয়োজিত নরসুন্দর বা নাপিতদের বর্তমানে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আগেকার দিনে তাদের আয় দিয়ে সংসার ভালোভাবে চললেও এখন তারা আর্থিক সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারছে না। তাই দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী প্রাচীনতম পেশা নরসুন্দর বা নাপিত।

মানুষের চুলকে  সুন্দর করা যাদের কাজ, তারাই নরসুন্দর। আমরা যাকে বলি নাপিত। মানুষের সৌন্দর্যের অন্যতম উপকরণ চুল। এই চুল নিয়ে যুগে যুগে মানুষের ভাবনার অন্ত নেই। সেই কারণেই কেশবিন্যাসের কারিগর নাপিতের কদর ও প্রয়োজনীয়তা আজও ফুরিয়ে যায়নি।

মানুষ মাত্রই সৌন্দর্য পিয়াসী। আর এই সৌন্দর্যের অন্যতম উপকরণ হলো চুল। যুগে যুগে এই চুল নিয়ে মানুষের ভাবনার অন্ত নেই। চুল-দাড়ি কাটা-ছাটা, সেভ করা প্রাত্যহিক জীবনের প্রয়োজনীয় কাজের একটি অংশ। সেই কারণেই কেশবিন্যাসের কারিগর নাপিতের প্রয়োজনীয়তা। আগে হাট-বাজারের বট বৃক্ষের ছায়ায়, খেয়াঘাটে, ফুটপাতে কিংবা গ্রামগঞ্জের জলচৌকিতে বা ইটের ওপর সাজানো পিঁড়িতে বসে নাপিতরা গ্রামবাংলার মানুষের চুল-দাড়ি কাটতো। সেই আদি পরিচিত দৃশ্য এখন সচরাচর চোখে পরে না। কারণ আধুনিক সভ্যতার ক্রমবির্বতনে কেশ কারিগরদের গতিধারায় লেগেছে নতুনত্বের ছোঁয়া।যাদের শৈশব কেটেছে গ্রামে তাদের স্মৃতিতে আজও চোখের সামনে ভাসে সে স্মৃতিময় দিনগুলো। তবে এখনও গ্রামের কিছু হাট-বাজারে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। যদিও তা খুবই কদাচিৎ।গ্রাম-গঞ্জের হাটবাজারে গেলে এখনও কোথাও কোথাও চোখে পড়ে চিরচেনা সেই দৃশ্য। রাস্তার পাশে, হাটে-ঘাটে জলচৌকিতে বসিয়ে ও কাঠের বক্সে বসে ক্ষুর, কাঁচি, চিরুনি, সাবান, ফিটকারি, পাউডার ও লোশন নিয়ে প্রতিনিয়ত মানুষকে সুন্দর করার কাজ করে যাচ্ছেন এসব নরসুন্দর বা নাপিতরা।ইতোপূর্বে বছরের সেবার বিনিময়ে নাপিতদের ফসলের মৌসুমে নির্দিষ্ট পরিমাণ ধান, পাট, চাল, গম, সরিষা, ভুট্টা, আলু ইত্যাদি খাদ্যশস্য দিত। চালাকিপনা, রসিকতা, আড্ডাবাজি ও গল্প বলায় নাপিতদের বিশেষ দক্ষতা ছিল। প্রয়োজনীয় মানুষের খবর রাখি না, রাখার প্রয়োজনও অনুভব করি না।বর্তমানে চুল-দাড়ি কাটার সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতিতেও পরিবর্তন হয়েছে। সেলুনে এখন আর শান দেয়া ক্ষুর দেখাই যায় না। তার বদলে এসেছে ব্লেড লাগানো ক্ষুর। এসেছে শেভিং ক্রিম, লোশন, চুলের কলপ। আগে এগুলো ছিল কল্পনার অতীত।

নরসুন্দর সর্বত্রই বিরাজমান ছিলো, এদের সামাজিক অবস্থান মিশ্র ধরনের। বিভিন্ন ধর্ম বর্ণের লোকজন এ পেশায় সম্পৃক্ত থাকলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এরা নরসুন্দর সম্প্রদায়ভুক্ত। গ্রাম-গঞ্জের হাটবাজারে গেলে এখনও কোথাও কোথাও চোখে পড়ে চিরচেনা সেই দৃশ্য। রাস্তার পাশে, হাটে-ঘাটে জলচৌকিতে বসিয়ে ও কাঠের বক্সে বসে ক্ষুর, কাঁচি, চিরুনি, সাবান, ফিটকারি, পাউডার ও নিয়ে প্রতিনিয়ত মানুষকে সুন্দর করার কাজ করে যাচ্ছেন এসব নরসুন্দর বা নাপিতরা।

সরেজমিনে টাঙ্গাইল জেলার ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী বাজারে চরনিকলা গ্রামের চন্ডী দাসের সাথে তিনি বলেন, মানুষ আমাদের কাছে বসতে চায় না। আধুনিকতার ছোঁয়ায় সবাই উচ্চাভিলাষী হয়ে গেছে। গদির চেয়ারে বসে চুল কাটতে আধুনিক সেলুনে যায়। আমাদের কাছে আর কাঠের টুলে বসে চুল-দাঁড়ি কামাতে চাই না।

বুট্রো দাস বলেন , দিন দিন আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে সর্বত্র। তেমনি আমাদের পেশায় ও। এখন মানুষ আর কাঠের চেয়ার বা টুলে বসে চুল, দাঁড়ি কাটতে চাই না। শহরের বাজারে দোকান ভাড়া নিয়ে দোকান করার সাধ্য না থাকায় অনেকে এখন পেশা বদলে ফেলেছে।

আগের দিনে বিয়ে বাড়ি চুল কাটতে আমন্ত্রণ জানিয়ে নিয়ে যাওয়া হতো, বেশ ভালো লাগতো। সেখানে বেশ কিছু টাকা বকশিস ও পাওয়া যেতো। এখন আর বিয়ে বাড়িতে চুল কাটানোর জন্য কোনো নাপিত কে বিশেষ আমন্ত্রণ জানিয়ে ডাকা হয় না। আধুনিকতার ছোঁয়ায় দিন দিন সেসব পুরনো ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন