ঢাকা | শনিবার
২৪শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
১০ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পেঁপে চাষে স্বপ্নপূরণ

পেঁপে চাষে স্বপ্নপূরণ
  • মাসে আয় ৫০ হাজার টাকা

গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার পলাশবাড়ী কালুগাড়ী গ্রামের মৃত আশেক মামুনের ছেলে আব্দুস ছামাদ পেঁপে চাষ করে এলাকায় হইচই ফেলে দিয়েছেন। পেঁপে বেচে তার মাসে আয় ৫০ হাজার টাকা। তার এ সাফল্য দেখে এখন  অনেকে পেঁপে চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। অন্যদিকে কৃষিবিভাগ বলছে, কৃষকদের পেঁপে চাষে উৎসাহিত করতে বিভিন্ন প্রণোদনাসহ সার বীজ দিয়ে সহযোগিতা অব্যাহত রাখা  হয়েছে।

গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার কালুগাড়ী গ্রামে সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত পেঁপের বাগানে কাজ করেন তিন জন মহিলা। আর তাদের হাতের যন্ত্রে প্রতিটা গাছে ঝুলছে পেঁপে। সারি সারি পেঁপে গাছে ঝুলছে কাঁচা-পাকা পেঁপে। গত দু’মাস ধরে গাছ থেকে পেঁপে তুলে বিক্রি করলেও গাছের পেঁপে যেন শেষেই হচ্ছে না। চার বিঘা জমিতে পেঁপে চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। ১৫ বছর আগে বাছাই করা সোনালি জাতের বীজ সংগ্রহ করে প্রথমে একবিঘা জমিতে পেঁপে চাষ শুরু করেন। এরপর আস্তে আস্তে পেঁপে চাষ বৃদ্ধি করতে করতে চার বিঘা জমিতে এখন পেঁপে চাষ করছেন তিনি।

পেঁপে চাষি আব্দুস ছামাদ বলেন, বারো মাস চাষ করা যায়। অন্যান্য ফসলের তুলনায় পেঁপে চাষ করে লাভ বেশি। রোগবালাই কম, চাহিদা বেশি থাকায় এ পেঁপের চাষ শুরু করি। প্রথমে এক বিঘা জমিতে চাষ শুরু করি। পরে আরও একবিঘা জমিতে পেঁপে চাষ বৃদ্ধি করি। ৬০ শতাংশ জমি থেকে খরচ বাদ দিয়ে ৪ লাখ টাকা আয় হয়। উৎপাদিত পেঁপে জমিতে কাঁচা ৪শ’ টাকা মণ আর পাকা  এক হাজার টাকা দরে বিক্রি করা যায়। পাশাপাশি গাইবান্ধা সদর উপজেলাসহ  গোবিন্দগঞ্জ, পলাশবাড়ীর বিভিন্ন বাজারে পাকা পেঁপে বিক্রি করি। আমার বাগানের একটি পেঁপে সাড়ে ৫ কেজি পযর্ন্ত হয়। একটি গাছ থেকে দুই আড়াই মণ ফলন পাওয়া যায়। এভাবে দুইবছর চলতে থাকে। ৬ থেকে ৭ মাস ফল রাখা হয়। এরপর পরবর্তীতে কাঁচা-পাকা উভয়ই বাজারে বিক্রি করা হয়।

স্থানীয় হোসেনপুর ইউনিয়নের দিগদারী গ্রামের ব্যবসায়ী মন্জু মিয়া বলেন, ১১শ টাকা মণ দরে পেঁপে কিনে নিয়ে গিয়ে ঢাকায় বিক্রি করি। একদিন পরপর ২৫ মণ করে পেঁপে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। গাছ থেকে প্রতি কেজি কিনি ৪৫ টাকা দরে আর বাজারে বিক্রি হয় ৫৫ টাকা দরে। পেঁপের চাহিদা থাকায় বিভিন্ন বাজার থেকে ফোন আছে।

জমিতে পেঁপে কিনতে আসা পলাশবাড়ীর ব্যবসায়ী আউয়াল হোসেন বলেন, আমরা বাগান থেকে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ মণ পাকা পেঁপে ক্রয় করে নিয়ে যাই। অন্যান্য জায়গার তুলনায় এখানকার পেঁপের মান ভালো হওয়ায় আব্দুস ছামাদ চাচার বাগান থেকে পেঁপে ক্রয় করে নিয়ে যাই। প্রতি মণ ১১-১২শ’ টাকায় কিনি।

গাইবান্ধার আধুনিক হাসাপাতালের আর এ ওম ডা .তানভীর হাসান কল্লোল বলেন, পেঁপে শরীরকে সুস্থ রাখতে ও শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করে। পাশাপাশি এটি জ্বর নিরাময়ে, পেটের সমস্যা দূর করে, গ্যাষ্টিক এবং  বদহজমের অনেক উপকারি, কাঁচা পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণে এনজাইম রয়েছে যা হজমশক্তিতে সাহায্য করে। এছাড়াও হাঁপানি, অষ্টিওআর্থ্রাইটিস, গাউট রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস রোগের উপকার হয় এবং  হার্ট ভালো রাখে। এর রয়েছে প্রচুর ঔষধিগুণ। কৃমি সংক্রমণ, আলসার, ত্বকে ঘা, একজিমা, কিডনী রোগ ও পাকস্থলির ক্যান্সার নিরাময়ে কাজ করে পেঁপে।

পলাশবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফাতেমা কাওসার মিশু বলেন, পেঁপে খুব সুস্বাদু একটি জনপ্রিয় ফল। পেঁপে উঁচু ও মাঝারি জমিতে চাষ করা যায়। পেঁপে চাষে অল্প পুঁজি খাটিয়ে বেশি লাভবান হওয়া যায়। বতর্মানে অনেকেই এখন পেঁপে চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। পেঁপে দ্রুত পচনশীল না হওয়ায় ব্যবসায়ীরা এটি অনেকদিন সংরক্ষণ করতে পারেন। বাজারে প্রচুর পেঁপের চাহিদা রয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুজ্জামান নয়ন বলেন, পলাশবাড়ী উপজেলার কৃষিবিভাগ ও প্রসাশনিক বিভাগ সব সময় আমরা কৃষকদের পেঁপে চাষে উৎসাহিত করতে বিভিন্ন প্রণোদনাসহ সার বীজ দিয়ে সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন