ঢাকা | সোমবার
১৯শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গোলাগুলির শব্দে কাঁপছে সীমান্ত

গোলাগুলির শব্দে কাঁপছে সীমান্ত
  • নাইক্ষ্যংছড়িতে ভীতিকর পরিস্থিতিতে সরানো হলো এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র
  • ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্তে চরম উত্তেজনা

কক্সবাজারের উখিয়ার অতি নিকটবর্তী বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্তে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। মায়ানমার বাহিনীর যুদ্ধ বিমান থেকে ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে নিহত হয়েছে এক যুবক। উড়ে গেছে একজনের বাম পা। আহত হয়েছে ৫ জন। ভীতিকর পরিস্থিতিতে এবার সরানো হয়েছে এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র। গতকাল শনিবার সকাল থেকে গোলাগুলির শব্দে কেঁপে উঠছে নাইক্ষ্যছড়ির ঘুমঘুম, আষাঢ়বুনিয়া, বাইশ ফাঁড়ি ও তুমব্রু সীমান্ত। ভয়ে থরথর করে কাঁপছে নারী পুরুষ এবং শিশুরা। গ্রাম ছাড়ছে শত শত লোক। এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র উখিয়ায় সরিয়ে নিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

এদিকে গত শুক্রবার রাত ৮টার দিকে ঘুমঘুমের ঘোনারপাড়া সীমান্তে মায়ানমার বাহিনীর পাঁচটি মর্টার শেল এসে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলে ইকবাল হোসেন নামে এক রোহিঙ্গা যুবক নিহত হয়। আহত হয়েছে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ জন। আহত একজনের পা উড়ে গেছে। সে বাংলাদেশের নাগরিক।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে মিয়ানমার অভ্যন্তরে ব্যাপক গোলাগুলি শব্দ শোনা যাচ্ছে। রাত ৮টার দিকে ঘুমধুম ঘোনার পাড়া সীমান্তে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পরপর ৫টি মর্টার শেল এসে বিস্ফোরণ হয়েছে। এতে ঘটনাস্থলে একজন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন শূণ্যরেখায় বসবাসকারি রোহিঙ্গা কমিউনিটির নেতা দিল মোহাম্মদ। আহতদের কুতুপালং এম এস এফ হাসপাতাল, কক্সবাজার সদর হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে  চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

গ্রামবাসীরা জানান, শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গোলাগুলি, মর্টারশেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। রাত ৮টার দিকে শূন্য রেখায় বসবাসকারি রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পে এসে পড়ে ৩টি মর্টারশেল। ক্যাম্পের নিটকর্বতী এলাকায় এসে পড়ে আরও ২টি মর্টারশেল। ৫টি মর্টার শেল বিস্ফোরণ হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এতে ঘটনাস্থলে একজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে  অনেকেই।

অপর রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ আরিফ জানান, আহতদের মধ্যে ৪ জনকে উদ্ধার করে কুতুপালংস্থ এমএসএফ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। একজনকে প্রথমে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল পরে অবস্থার অবনতি হলে প্রেরণ করা হয় চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। নিহতের নাম মোহাম্মদ ইকবাল (১৮) বলে জানান তিনি। এর আগে সীমান্তে  মাইন বিস্ফোরণে’ বাংলাদেশি এক যুবক আহত হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত দেড়মাস ধরে মায়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে আরকান আর্মির সশস্ত্র যুদ্ধ চলছে। ইতোমধ্যে ৩০টির বেশি সেনা ঘাঁটি আরকান আর্মিরা দখলে চলে গেছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে। শতাধিক সেনা সদস্য নিহত হয়েছে আরকান আর্মির হাতে। এ পর্যন্ত ২৭ বার মর্টার শেল ও গোলাবারুদ পড়েছে বাংলাদেশ সীমান্তের অভ্যন্তরে। এতে একজন রোহিঙ্গা যুবক নিহত হয়। এক বাংলাদেশি তরুণের পা উড়ে যায়। সর্বশেষ আহত হয়েছে গত দেড় মাসে ১৭ জন। ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আজিজ জানান, সীমান্তের ওপার থেকে আসা গুলি মর্টার শেলের বিকট শব্দে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে সীমান্ত এলাকায়। ইতোমধ্যে শতশত গ্রামবাসী পার্শ্ববর্তী নিরাপদ এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে। শুধু তাই নয়, ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র গত শুক্রবারের ভয়াবহ ঘটনার পর তাৎক্ষণিক উখিয়ার কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয়ে সরিয়ে নিয়েছেন প্রশাসন।

স্থানীয় ঘুমধুম এলাকার নুর মোহাম্মদ জানিয়েছেন, সীমান্ত এলাকায় অতিরিক্ত বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। নো ম্যানস ল্যান্ডের কাছাকাছি কোনো লোককে প্রবেশ করতে দিচ্ছেনা বিজিবি। অন্যদিকে  নো ম্যানস ল্যান্ডে মংন্ডু থেকে প্রাণ ভয়ে পালিয়ে আসা শত শত রোহিঙ্গা নারী পুরুষ এবং শিশু আশ্রয় নিয়েছে। তারা চেষ্টা করছে বাংলাদেশে ঢোকার।

একটি অসমর্থিত সূত্র জানিয়েছেন, কুতুপালং ট্রানজিট ক্যাম্পে ৩০/৩৫ জন রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন কক্সবাজার  অতিরিক্ত শরনার্থী ত্রাণ প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ শামশুদ্দৌজা নয়ন।

সংবাদটি শেয়ার করুন