- দেশে উৎপাদিত-আমদানিকৃত জাতসহ মোট ১০৫ জাতের সবজি বীজের জাত উদ্ভাবন
- ৯ জাতের হাইব্রিড ভুট্টা ও ৩টি জাতের হাইব্রিড ধান ও ৫টি জাতের ঊফশী জাতের ধান বীজের বাজারজাত
নীলফামারীর ডোমারে তরুণ কৃষি-উদ্যোক্তা বন্ধন সীডস্ এর প্রতিষ্ঠাতা আনোয়ার হোসেন বীজ উৎপাদনে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছেন। কৃষকের সাথে সংযোগ স্থাপন করে বীজ ব্যবসায় স্থান অর্জন করাই প্রধান লক্ষ্য এই তরুণ কৃষি উদ্যোক্তার।
বর্তমানে তার হাতে গড়া কোম্পানি বন্ধন সীডস্ দেশীয় উৎপাদিত ও আমদানিকৃত জাতসহ মোট ১০৫টি জাতের সবজি বীজ বাজারজাত করেছে। এছাড়াও মোট ৯ জাতের হাইব্রিড ভূট্টা , ৩টি জাতের হাইব্রিড ধান এবং ৫টি জাতের ঊফশী জাতের ধান বীজ বাজারে নিয়ে এসেছে।
২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানটির সূচনা লগ্ন থেকেই বাংলাদেশে কৃষি ও কৃষি প্রযুক্তির উন্নয়ন, পরিবর্তন, সম্প্রসারণ এবং সর্বোপরি বীজের আধুনিকায়নে কাজ করে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালে বন্ধন সীডস্ থেকে আর জেএসসিতে লিমিটেড কোম্পানী হিসাবে রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে বন্ধন জেনেটিকস লিমিটেড নামে শুরু করে। যার মূল শ্লোগান হল “বন্ধন সীডস্-বন্ধন চিরদিনের”। এই শ্লোগানকে ধারণ করে কৃষি ও কৃষকের মাঝে অটুট বন্ধন স্থাপন করে চলেছে।
কোম্পানির রয়েছে দুটি বীজ ও উন্নয়ন গবেষণা কেন্দ্র। আরএন্ডডি-১ (খানাবাড়ী, ডোমার, নীলফামারী) এবং আরএন্ডডি-২(দেবীডুবা, দেবীগঞ্জ, পঞ্চগড়) সমন্বিত জমির উপর প্রতিষ্ঠিত । যেখানে একদল অভিজ্ঞ কৃষি বিজ্ঞানীদের নিরলস পরিশ্রমের ফলস্বরুপ ২০২১ সাল পর্যন্ত বন্ধন সীডস্ কে বিভিন্ন সবজি ফসলের মোট ১৯টি উন্নতমানের হাইব্রিড জাত উপহার দিয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-লাউ, মিষ্টি কুমড়া, ধুন্দল, ঝিঙ্গা, করলা ইত্যাদি। উদ্ভাবিত এ জাতগুলো দেশের কৃষকদের মাঝে ইতোমধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এছাড়া বিভিন্ন সবিজ ফসলের আরও ২০টি হাইব্রিড জাত আগামী দু-এক বছরের মধ্যে উন্মুক্ত হবে বলে কর্তৃপক্ষ আশাবাদ ব্যক্ত করছেন। ক্রমবর্ধমান চাহিদার কথা মাথায় রেখে উন্নত প্রযুক্তির ৪০০ মেট্রিকটন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি বীজের ডিহিউমিডিফাইয়ার কোল্ড ষ্টোরেজ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। শিগগিরই নিজস্ব জায়গায় উন্নত বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র-২ এর কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানান বন্ধন সীডস্। দেশীয় প্রযুক্তিতে উৎপাদিত বীজ ছাড়াও ভারত, চীন, জাপান, ইতালি, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, আমেরিকার স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান থেকে বীজ আমদানি করে-বাজারজাত করে থাকে এ প্রতিষ্ঠানটি।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রয়েছে বন্ধন সীডস্ এর ট্রায়াল ফার্ম যা অঞ্চল ভিত্তিক জাত নির্বাচনে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। এরমধ্যে ময়মনসিংহের বোরোর চর, নাটোরের রাজাপুর অন্যতম। বন্ধন সীডস্ ২০১৪ সাল থেকে নবাব নামে একটি করলার জাত বাজারজাত শুরু করে। যার ফলে দেশের উত্তরবঙ্গ তথা সারাদেশের করলা চাষীদের ভাগ্য উন্নয়নে বিশেষ অবদান রেখেছে। একটা সময় উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় অধিকাংশ করলা চাষীরা স্থানীয় রাণীপুকুরী জাতের উচ্ছে টাইপের করলা চাষাবাদ করত। নবাব করলা চাষাবাদ শুরুর পর থেকে ধীরে ধীরে এই এলাকার ৮০ থেকে ৯০ ভাগ কৃষক এখন নবাব করলা চাষাবাদ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে।
বন্ধন সীডস্ এর কর্নধার তরুণ উদ্দোক্তা আনোয়ার হোসেন বাংলাদেশ সীড এসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী কমিটির (২০১৯-২১) প্রচার সম্পাদক ছিলেন এবং বর্তমান (২০২১-২৩) কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আনোয়ার হোসেন বলেন, কোম্পানির মূল চালিকা শক্তি উন্নত গবেষণা ও সঠিক মান নিয়ন্ত্রণ। আমাদের রয়েছে উন্নত বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র। ২০১৮ সাল থেকেই প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় ও খাদ্য নিরাপত্তায় বায়ো-পেষ্টিসাইড নিয়ে কাজ করছে। বায়ো-পেষ্টিসাইডকে স্বতন্ত্রভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ২০২২ সালে এসে বন্ধন বায়োটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এর যাত্রা শুরু করা হয়েছে। বন্ধন সীডস্ এর প্রতিষ্ঠাতার প্রধান লক্ষ্যই হল-ধান, ভূট্টা ও সবজি চাষি কৃষকের সাথে সংযোগ স্থাপন করে সঠিক পরিকল্পনায়, প্রচার ও প্রসারে বীজ ব্যবসায় স্থান অর্জন করা।