বরিশাল আমড়ার সুখ্যাতি রয়েছে সারাদেশে। দিন দিন আমড়া চাষে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষকরা। জেলার ৪৭১টি গ্রামের মধ্যে তিন শতাধিক গ্রামে আমড়া গাছ লাগিয়ে অর্থনৈতিক সচ্ছলতার স্বপ্ন দেখছেন এলাকার চাষিরা।
এছাড়া অন্যান্য গ্রামগুলোতেও কম বেশি আমড়া গাছ রয়েছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় তিন ঘণ্টার ব্যবধানে বারিশাল মিষ্টি আমড়া এখন পৌঁছে যাচ্ছে রাজধানীতে। এছাড়াও সড়কপথে সিলেট, চট্টগ্রাম, যশোর, রাজশাহীসহ দেশের বড় বড় শহরে পাইকার-ফরিয়াদের মাধ্যমে পৌঁছে যাচ্ছে উপকূলীয় জেলা বারিশাল উৎপাদিত আমড়া। অন্যদিকে দেশের ভেতরসহ বঙ্গোপসাগর থেকে বড় বড় জাহাজে করে এখানকার আমড়া যাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এমনটাই দাবি আমড়া চাষিবরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ শাহাদাত হোসেন বলেন, বরিশাল জেলায় চলতি বছর ৬৪১ হেক্টর জমিতে আমড়ার চাষ হয়েছে। হেক্টরপ্রতি ১২ টন আমড়ার ফলন পাওয়া গেছে। অর্থকরী ফসল হওয়ায় কৃষকরা আমড়া চাষে দিন দিন আগ্রহী হচ্ছেন।
প্রতি বছরই আমড়ার ফলন বাড়ছে কবাই ইউনিয়নের বাকেরগঞ্জের আমড়া চাষি পঙ্কজ বড়াল ২০১৭ সালে এক একর জমি লিজ নিয়ে আমড়া গাছ লাগান। তিন বছরের মধ্যেই এসব আমড়া গাছে ফলন ধরতে শুরু করে। তিনি বলেন, এ বছর ৫০ মণের উপরে আমড়া বিক্রি করেছি। ভাদ্র-আশ্বিন মাস আমড়ার ভরা মৌসুম। তাই ওই সময়ে দামও ভালো থাকে। কিছু গাছে সারা বছর আমড়া ধরে। যেটাকে বারোমাসি আমড়া বলে।
তিনি আরও বলেন, ভীমরুলী, ডুমুরিয়া, বেতরা, জগদিশপুর, শতদশকাঠি, শিমুলেশ্বর, কুড়িয়ানা, আটঘর এসব এলাকায় বিপুল উৎপাদিত আমড়া সংগ্রহে আড়ৎদার পর্যাপ্ত নয়। প্রত্যন্ত এলাকার বাগান থেকে সংগ্রহ করা আমড়া প্রথম দিকে আকার ভেদে আটশ থেকে নয়শ টাকা মণ বিক্রি হয়েছে। এখন তা সাড়ে একহাজার থেকে ১২০০ টাকার কাছাকাছি বিক্রি হচ্ছে।
আমড়া পচনশীল নয় বলে এটি চাষে লোকসান হয় না। বাগান থেকে আমড়া সংগ্রহ করে এসব এলাকার মোকামে পৌঁছানোর প্রধান বাহন হলো নৌকা।
নৌকায় করে আমড়া নিয়ে ভীমরুলী ভাসমান হাটে বিক্রির জন্য যান মলয় হালদার। তিনি বলেন, বরিশালের আমড়া ভীমরুলী থেকে চলে যায় ঢাকাসহ বিভিন্ন বড় শহরে। পদ্মা সেতু হওয়ায় এখন আর বেশি দেরি হয় না, মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টার ব্যবধানে মোকাম থেকে ঢাকায় পৌঁছাতে পারেন পাইকাররা। এমনকি এখানকার আমড়া এখন দেশের সীমানা ছাড়িয়ে সড়ক ও নৌপথে বিদেশে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, গুণগত মান ভালো, খেতেও সুস্বাদু-মিষ্টি বলেই এখানকার আমড়ার চাহিদা আছে সারা দেশে। যারা আমড়া কিনেন তাদের সবারই চাহিদা এ অঞ্চলের আমড়ার দিকে। এ সময় কৃষক মলয় হালদার প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাদের আরও সহযোগিতা করার দাবি জানান।
ভীমরুলীতে ছোট-বড় সব মিলিয়ে ১০টি আড়ৎ রয়েছে। সবই মূলত পেয়ারার আড়ৎ, তবে পেয়ারার শেষ সময়ে শুরু হয় আমড়ার ভরা মৌসুম। এজন্য আড়ৎদাররা থেকে আমড়া কিনেন। চলে আমড়া ক্রয়-বিক্রয়ের ধুমধাম হাঁকডাক। ডুমুরিয়া, বেতরা, বারুহারসহবরিশালের বেশিরভাগ গ্রাম পাশাপাশি আমড়া চাষের জন্যও বিখ্যাত।
বর্তমানে এসব আমড়া বিক্রি হচ্ছে বরিশাল ভীমরুলী, শতদশকাঠি, ডুমুরিয়া, পিরোজপুরের আটঘর, কুরিয়ানাসহ পানিতে ভাসমান বাজারে। তবে সবচেয়ে বড় ভাসমান বাজার ভীমরুলী। সকাল ৮টার মধ্যে ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপস্থিতিতে বাজার বসে, বেচাকেনা চলে দুপুর পর্যন্ত।
ছোট ডিঙি নৌকায় করে চাষিরা আমড়া নিয়ে আসলে ট্রলারে করে আড়ৎদাররা তা কিনে নেন। পুরো ভাদ্র, আশ্বিন ও কার্তিক মাস জুড়েই আমড়া বিক্রিতে এসব হাট জমজমাট থাকে। তবে পেয়ারার মতো এতটা সরগরম না হলেও প্রায় ৮০ ভাগই জমে আমড়ার হাট।
ভীমরুলীর আড়ৎদার লিটন হালদার বলেন, এবছর ভাদ্র মাসের শেষের দিকে আমড়ার ভরা মৌসুম শুরু হয়েছে। প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ মণ আমড়া ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও চাঁদপুর যাচ্ছে বস্তা ভরে। বর্তমানে দাম মণপ্রতি একহাজার থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে।
কৃষকদের দাবি, ধান-চাল সংগ্রহের মতো সরকার থেকে যদি সরাসরি আমড়া কিনতো অথবা বড় ব্যবসায়ীরা এখান থেকে সরাসরি নিয়ে যেতেন তাহলে প্রান্তিক চাষীরা আরও ভালো দাম পেতো এবং এর প্রচার-প্রসারও বাড়ত। বিদেশে রপ্তানির পরিমাণও বৃদ্ধিতে বরিশালের পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার পুষ্টিবিদ আফরোজা রোজী বলেন, আমড়ায় রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম, ফসফরাসসহ অনেক পুষ্টিগুণ। আমড়াতে আঁশ থাকার কারণে হজমে সহায়তা করে। তাই মৌসুমের সময় নিয়মিত আমড়া খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ দূর হয়। আমড়া কাঁচা, সরষে মাখা, রান্না ও মোরব্বা করে খাওয়া যায়।
বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ শাহাদাত হোসেন বলেন, বরিশালে চলতি বছর ৬৪১ হেক্টরে আমড়ার চাষ হয়েছে। হেক্টরপ্রতি ১২ টন আমড়ার ফলন পাওয়া গেছে। অর্থকরী ফসল হওয়ায় কৃষকরা আমড়া চাষে দিন দিন আগ্রহী হচ্ছেন।