ঢাকা | সোমবার
১৯শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কক্সবাজারে মামলাজটের কারণ রোহিঙ্গারা

কক্সবাজারে মামলাজটের কারণ রোহিঙ্গারা

এবার আদালতে মামলাজটের কারণও হয়ে উঠছে রোহিঙ্গারা। এতদিন কক্সবাজারে জন জীবনে অস্বস্তির মূল কারণ ছিল রোহিঙ্গারা। সম্প্রতি এ অস্বস্থিকর পরিস্থিতি নিয়ে নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিচারিক প্রশাসন। এ অস্বস্থিকর পরিবেশ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য জেলা আইনজীবী সমিতি ও আইনজীবীদের সহযোগিতা চেয়েছেন জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন।

সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক সূত্রে জানা যায়, রোহিঙ্গাদের কারণে পুরো কক্সবাজার জেলায় দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে অপরাধেরর মাত্রা।  রোহিঙ্গারা ক্যাম্প ছেড়ে ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে। অনেকে বিদেশ ও পাড়ি জমাচ্ছে। কেউ যাচ্ছে সাগর পথে মালেশিয়া, থাইল্যান্ডও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। কেউ আবার বাংলাদেশী এনআইডি ও পাসপোর্ট ব্যবহার করে যাচ্ছে বিদেশে।   কক্সবাজার শহর ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় এখনো লক্ষাধিক রোহিঙ্গা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তাদের কারণে জেলাবাসী আজ চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন বলে মনে করেন রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটি ।

রোহিঙ্গা শিবিরে ক্রমাগত বাড়ছে মাদক, হুন্ডি, খুন, অগ্নিসংযোগও অস্ত্রের ঝনঝনানি। প্রতিদিন কোনো না কোনো ঘটনা ঘটাচ্ছে তারা। ক্যাম্পগুলোতে সশস্ত্র তৎপরতা, মানবপাচার, চাঁদাবাজি, অপহরণের মতো ঘটনা ঘটছে প্রতিদিন। ক্যাম্পে বসেই ইয়াবা ব্যবসা করে কোটি পতির খাতায় নাম লিখাচ্ছেন নতুন নতুন রোহিঙ্গারা। তাদের কারণে  কক্সবাজার পর্যটন খাত আজ হুমকির সম্মুখীন।

এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সম্প্রতি জেলা বিচারিক প্রশাসন পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। সেই পর্যবেক্ষণ নিয়ে সিনিয়র জেলা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন  স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা মাদক কারবার, হত্যা, গুম, ধর্ষণ, মানবপাচার, ডাকাতি, অপহরণসহ নানা অপরাধমূলক কাজে লিপ্ত হচ্ছে। এতে ওই এলাকার পাশে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতিসহ জনজীবনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে শৃঙ্খলা রক্ষায় ও অপরাধ দমনে হিমশিম খাচ্ছে। দিনদিন তাদের অপরাধের মাত্রাবৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব অপরাধ আমলে নিয়ে কোথাও না কোথায় মামলা হচ্ছে।

আদালত আরও জানিয়েছেন রোহিঙ্গাদের নামীয় হত্যা, অপহরণ, মাদক, ডাকাতি মামলাসহ অন্যান্য মামলায় তদন্তের নির্ধারিত সময়ের আগে জামিনের বিষয়ে তদবির না করে তদন্ত কার্যে সহযোগিতা করা সংশ্লিষ্ট সবারই  নৈতিক দায়িত্ব। উল্লেখিত মামলাগুলোয় আসামির পক্ষে ফৌজদারি মিস মামলা মূলে জামিন বিষয়ে কোনো আদেশ প্রচারিত হলে তারপরবর্তীকালে একই আসামির জামিনের জন্য চার মাসের মধ্যে ভিন্ন কোনো ফৌজদারি মিস দরখাস্ত দাখিল করা থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। যদি করা হয় তাতে বিচারকের শুনানি কাজে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়ে স্বাভাবিক মামলা নিষ্পত্তিতে বিঘ্ন ঘটছে।

এ বিষয়ে সবার জ্ঞাতার্থে ও কার্যার্থে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ, প্রথম ও দ্বিতীয় আদালত, কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অনুলিপি দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিটি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত এবং জেলা বারের নোটিশ বোর্ডেও টানানো হয়েছে।

জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী গৌতম দে বলেন, বিচারিক প্রশাসনের নোটিসের আগেই বিষয়টি নিয়ে আমাদের সচেতন হওয়া উচিত ছিল। লোভের কারণে রোহিঙ্গাদের জামিনে আমরা প্রতিযোগিতামূলক ভাবে দৌড়াই। এ অবজারভেশন সেটাই স্পষ্ট করে দিয়েছে। এর পর ও যদি আমাদের  শিক্ষা না হয় তাহলে বুঝতে হবে আমরা আদালতকে অসযোগিতা করছি।

সচেতন নাগরিক সমাজের দাবি, রোহিঙ্গারা পরিবেশ প্রতিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। সেই রোহিঙ্গাদের অপকর্মের মারাত্মক প্রভাব এসে পড়লো এবার আদালত পাড়ায়ও। একজন সিনিয়র আইনজীবী এ প্রতিবেদককে বলেন, রোহিঙ্গারা রাজকীয় সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন। কারণ তারা জামিন পাওয়ার পর রিজার্ভ গাড়িতে করে জেল কর্তৃপক্ষকে যে ক্যাম্পে বসবাস করে সেখানে পৌঁছে দিয়ে ক্যাম্প ইনচার্জের কাছে হস্তান্তর করতে হয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন