এক সময় চরের চাষাবাদ, কৃষিপণ্যের বিপননসহ সবকিছুতে চরবাসীর জন্য ছিল কষ্টসাধ্য। তবে সময়ের ব্যবধানে এবং সরকারি, আধাসরকারি ও বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করায় চরের মানুষের জীবনযাত্রার মান অনেক সহজ হয়েছে। কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদন বেড়েছে। চাষাবাদ হচ্ছে সব রকমের শস্যের, বিক্রিও হচ্ছে চর থেকে। যোগসূত্র সৃষ্টি হয়েছে কৃষক এবং ব্যবসায়ীর মাঝে।
বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমির এমফোরসি প্রকল্প এমন একটি প্রকল্প যেখানে চরের মানুষের বিভিন্ন শস্য উৎপাদনে পরামর্শ, ক্রেতাদের সঙ্গে উৎপাদিত শস্য শহরে বিক্রির যোগসূত্র তৈরি করে দেওয়া, চর থেকে শস্য বিক্রির ব্যবস্থা করে দেওয়া, প্রাণিসম্পদ এ উন্নয়নে গবাদি পশু পালনে প্রশিক্ষণ ও গবাদি পশু পালনে উদ্যোক্তা সৃষ্টি করা থেকে শুরু করে তাদের আত্ন নির্ভরশীলতা করে গড়ে তুলতে সাহায্য করে যাচ্ছে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ এবং সুইজারল্যান্ড সরকারের সুইজকন্ট্রাক, মেকিং মার্কেট ওয়ার্ক ফর দি চরস নামের একটি প্রকল্পের অধীনে চরাঞ্চলে দরিদ্রবান্ধব বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে ১০ জেলায় উত্তরাঞ্চলের রংপুর গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, লালমনিরহাট, বগুড়া সিরাজগঞ্জ পাবনা টাঙ্গাইল ও জামালপুর জেলার ৩২ উপজেলায় কাজ শুরু করে। প্রথম ধাপে ৫ বছরে ১ লাখ ২৪ হাজার পরিবারকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে খরচ করা হয় ৯৩ কোটি টাকা। পরিবারগুলি এখন অনেকটাই স্বচ্ছল। কৃষি আবাদের পাশাপাশি এসব পরিবারকে স্বাবলম্বী এবং পুষ্টির চাহিদা মানবাড়াতে এসব চরে গোবাদি পশুও দেওয়া হয়।
বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমির এমফোরসি প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের জুন থেকে শুরু হয়েছে একই প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপের কাজ। এমফোরসি-২ নামের এ প্রকল্পে ৬টি জেলা যথাক্রমে গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুর জামালপুর ও শরিয়তপুরে ব্রহ্মপুত্র, যমুনা ও তিস্তা নদীর প্রায় ১২৯ চরে কাজ শুরু করেছে। এতে চরবাসীর জীবন মানে ইতিবাচক ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। চরগুলিতে চাষ করা হচ্ছে মিষ্টকুমড়া, মরিচ, ভূট্টা চিনাবাদাম, সরিষা, শাকসবজির চাষ বেড়েছে পাশাপাশি এসব শস্য বিক্রির একটি যোগসূত্র সৃষ্টি হয়েছে ব্যবসায়ী কৃষকের মধ্যে। এতে করে দাম দর নিয়ে ব্যবসায়ী কৃষক উভয় লাভবান হচ্ছেন। উৎপাদিত ফসল বিক্রি নিয়ে কৃষকদের আর চিন্তা করতে হয়না।
গাইবান্ধা চরের রাজা মিয়া সুন্দরগঞ্জ উপজেলার রাজার চরে প্রায় ৫০ শতক জমিতে গ্রীষ্মকালিন তরমুজের চাষ করেছেন। চরের মাটিতে তরমুজের ফলনও ভালো হয়েছে। তিনি জানান, মাত্র ৮০ দিনে তার সমস্ত খরচবাদে ২০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। তার তিন সন্তান নিয়ে এখন ভালই আছেন। এমফোরসি প্রকল্প থেকে তিনি উন্নত জাতের বীজের সরবরাহ এবং তরমুজ বিক্রির জন্য পাইকারি ক্রেতা পেয়েছেন।
রংপুর জেলার গঙ্গাচরা উপজেলার নিলারপাড়া চরে ৩০ শতক জমিতে হাইব্রিড জাতের বিজলি মরিচ চাষ করেছেন মোহাম্মদ খলিল খরচ বাদ দিয়ে তার লাভ টিকেছে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। এমন করে চরাঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের চাকা ঘুরে দিয়েছে মেকিং মার্কেট ওয়ার্ক ফর দি চরস প্রকল্পটি।
বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমির যুগ্ম পরিচালক এবং প্রকল্প পরিচালক আব্দুল মজিদ আনন্দবাজারকে জানান, প্রকল্প শুরুর পর থেকে চরাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান অনেক পরিবর্তন হয়েছে। উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য দাম নিশ্চিত হয়েছে। ফসলের উৎপাদন বেড়েছে আগের তুলনায় ৩০ থেকে ৪০ ভাগ বেশী। আগামী বছরগুলোতে আরও ভালো ফলনের আশা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।
বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমির মহাপরিচালক অতিরিক্ত সচিব খলিল আহম্মদ জানান, এমফোরসি প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপে চরগুলোতে জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের জন্য গত বছরের শেষ থেকে কাজ শুরু হয়েছে এটি চলবে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এরমধ্যে চরের প্রতিটি মানুষকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণ, উন্নত বীজের সরবরাহ, কৃষি পণ্য ন্যায্যদামে বিক্রির সব ব্যবস্থা করা হচ্ছে। অপরদিকে প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনা যাতে এতটুকু পতিত জমি না থাকে তাতে ফসল ফলার কাজ আর ডিএ করছে।