দেশেরএকমাত্র ডিজিটাল আইল্যান্ড মহেশখালী। কক্সবাজারে ভ্রমণে আসা পর্যটকদের আনন্দের খোরাক জোগায় মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, রাখাইন রমনীদের পরিচালিত হাতে বুনা বিচিত্র কাপড়ের মার্কেট ও বৌদ্ধ মন্দির এবং প্যাগোড়া।
উপজেলার ছোট মহেশখালী ইউনিয়নের ঠাকুরতলা গ্রামের মৈনাক পর্বতের চূড়ায় দেবাদিদেব মহাদেবের শিব লিঙ্গ ও সনাতনী সম্প্রদায়ের মা অষ্টভোজা আদিনাথ মন্দিরে অবস্থিত। সনাতন ধর্মালম্বিদের কাছে এ মন্দিরের রয়েছে আধ্যাত্মিক গুরুত্ব। হিন্দু সম্প্রদায়ের মহাদেবের নামানুসারে মন্দিরের নামকরণ করা হয়েছে আদিনাথ। আবার আদিনাথের অন্য নাম মহেশ, যা থেকে মহেশখালি নামের সৃষ্টি। মন্দিরটি সমুদ্রপৃষ্ট থেকে ৮৫.৩ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। বর্তমানে এ মন্দির কমপ্লেক্সের ভেতরে রাখাইন বৌদ্ধ বিহার রয়েছে। এর কাছাকাছি রয়েছে মসজিদ এজন্য অনেকে মন্দিরটিকে অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীক হিসাবে আখ্যায়িত করেন। প্রতিবছর ফালগুন মাসের শুক্লা তিথিতে বসে শিব চতুর্দশী পূজা ও মেলা। এ উপলক্ষে মাসব্যাপী মেলায় পুতুল নাচ, গান, যাত্রাপালা বসে। তখন ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে। তাই আদিনাথ মন্দির ও রাখাইন পল্লীতে পর্যটকের আনাগোনা থাকে সারা বছর।
আদিনাথ মন্দির যাওয়া যায় যেভাবে :
কক্সবাজার শহর থেকে যেতে হবে ৬নং জেটি ঘাট হয়ে। শহরের যে কোনো প্রান্ত থেকে থেকে অটো রিক্সা অথবা সিএনজি নিয়ে বাঁকখালী নদীর ৬নং জেটি ঘাটে এলে মিলবে স্পীড বোট অথবা যাত্রীবাহী কাঠের বোট। ৬নং জেটি ঘাট থেকে জনপ্রতি ১১০ টাকা ভাড়া স্পিডবোটে আর কাঠের বোটের জনপ্রতি ভাড়া ৫০/৬০ টাকা। স্পীড বোটে করে মহেশখালী জেটি অথবা আদিনাথ জেটিতে পৌঁছাতে সময় লাগে মাত্র ১৫ মিনিট। এছাড়া কাঠের ইঞ্জিন বোটে মহেশখালী পৌঁছতে সময় লাগে ৪০ থেকে ৫০ মিনিট। স্পিডবোটের যাত্রীর সংখ্যা ৮/১০ ইঞ্জিনবোটে ৬০ থেকে ৭০ জন। কাঠের বোটের ভাড়া ৫০ টাকা। আবার রিজার্ভেও যাওয়া যায় ।
মহেশখালী পৌঁছে যা খাওয়া যায় :
মহেশখালী জেটিতে পৌঁছানো মাত্রই ঘাটে পাওয়া যায় মহেশখালীর বিখ্যাত মিষ্টি পান, বিক্রেতারা ঘাটে টংয়ের দোকানে বসে বিক্রি করেন এসব পান। ঘাট থেকে রিক্সা বা টমটমে করে যাবেন গোরগঘাটা বাজারে। সেখানে গেলেই পাবেন রাখাইন পল্লী বৌদ্ধ মন্দির, বিহারও প্যাগোড়া। বাজারে রয়েছে মহেশখালীর বিশুদ্ধ শুঁটকির দোকান। বিভিন্ন ধরনের খাবার হোটেল রয়েছে। চাইলে হোটেলে বসে দামদর করে খেতে পারেন। গোরকঘাটা বাজার থেকে আবার রিকশা, টমটম বা সিএনজি নিয়ে সোজা চলে যাবেন আদিনাথ মন্দির। গাড়ি ভাড়া দরদাম করে নেওয়া ভালো। মন্দিরের সামনে পাবেন তরতাজা ডাব, কলা ও লোকাল বিভিন্ন ধরনের খাবার। তাছাড়া আদিনাথ মন্দিরের সিড়ি বেয়ে উঠার সময় দেখবেন রাখাইন রমনীরা হাতে বুনা কাপড়ের ফসরা সাজিয়ে রেখেছেন। পছন্দের বেড়সিট ও কাপড় অতি স্বল্প দামে কিনতে পাওয়া যায়। সেখান ও রয়েছে পছন্দের খাবারের দোকান।
মহেশখালীতে পর্যটকদের জন্য তেমন কোন এখনও আবাসন গড়ে উঠেনি। তাই মহেশখালিতে রাত্রিযাপন নিরাপদ নয়। রাতে কক্সবাজার কিংবা সুবিধাজনক স্থানে ফিরে যাওয়া যায়। তাই সাধারণত মহেশখালীতে পর্যটকেরা রাত্রিযাপন করেনা। যে কোনো সময় কক্সবাজার ফিরে আসা যায়।
মহেশখালী গিয়ে আদিনাথ মন্দির ছাড়া আরও যা দেখবেন :
ডিজিটাল আইল্যান্ড মহেশখালীর অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে আছে বৌদ্ধ বিহার, পরিপাটি রাখাইন পল্লী, স্বর্ণমন্দির, ঝাউবন ও চরপাড়া বীচ, পান বরজ, চিংড়িঘের, শুঁটকীপল্লী ও লবণের মাঠ। এছাড়া এ পাহাড়ি দ্বীপের চারপাশ ঘুরে দেখতে কে না চায়। ভোরে কক্সবাজার শহর থেকে রওনা দিলে চাইলে একদিনেও এসব স্থান ঘুরে দেখা যায়।
স্পীডবোট বা কাঠের বোটে উঠে যা দেখা যায় তা হচ্ছে প্রথমেই বাঁকখালী নদীর শীতল নোনাজল, চলতে চলতে হাতের বায়ে দেখা মিলবে দেশের সর্ববৃহৎ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র। ঘাটে শত শত ফিশিং বোট, বাঁকখালী নদীর মোহনা, হাতের ডানপার্শ্বে খুরুশকুল উপকূল তীরে দেশের সবচেয়ে বড় জলবায়ু উদ্বাস্তু দের জন্য তৈরি করা শেখ হাসিনা আশ্রয়াণ প্রকল্প। তারপর মাত্র কয়েক মিনিট সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের ভয়ে গা শিহরে উঠার অনুভূতি। মিনিট পাঁচেক পর সেই কাংখিত পাঁচ’শ ফুট লম্বা মহেশখালী জেটি ঘাট। জেটির দু’প্রান্তে বিশাল বিস্তীর্ণ ম্যানগ্রোভ ফরেষ্ট। দেখলেই মন জুড়িয়ে যায়। মানগ্রোভ ফরেষ্ট শেষ হতে না-হতেই জেটির বাঁধের দুই পার্শ্বে রাখাইন জেলেদের জনপ্রিয় নাপ্পি মহাল। সেখানে শত শত রাখইন জেলে পরিবারের রুটি রোজির ঠিকানা। পর্যটকেরা সে দৃশ্য দেখে আনন্দ উপভোগ করে। এছাড়া কক্সবাজার ট্যুর অপারেটরের সহায়তা নিতে পারেন পর্যটকেরা। জনপ্রতি ৫০০ টাকা দিলে সকালের ব্র্যাক ফাষ্টসহ সাগরকন্যা মহেশখালীর সৌন্দর্য উপভোগ করে দিনে দিনে কক্সবাজার ফিরে আসতে পারে।
কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর এসোশিয়েসন টুয়াক বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মফিজুর রহমান বলেন, কক্সবাজারের খুব কাছাকাছি হওয়ায় স্বল্প খরচে কম সময় ব্যয় করে পর্যটকরা ডিজিটাল আইল্যান্ড মহেশখালী ঘুরে আসতে পারেন। এ কারণে দিন দিন মহেশখালীতে পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে।
এদিকে ট্যুরিষ্ট পুলিশের এসপি জিল্লুর রহমান বলেন, কক্সবাজারের ন্যায় মহেশখালীতে ট্যুরিষ্ট পুলিশ পর্যটকদের নিরাপত্তায় সক্রিয় রয়েছে।