পটুয়াখালীর কলাপাড়া-কুয়াকাটা মহাসড়কের শেখ কামাল সেতু পারাপারে যানবাহন থেকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। সেতু পারাপারে সওজ’র নির্দেশনা না মেনে রশিদের উপর হাতে লিখে ইচ্ছেমত টোল আদায়সহ যানবাহনের বর্ণনা না থাকা এবং একই রঙের রশিদ সরবরাহের অভিযোগ রয়েছে টোল ইজারা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এছাড়া যানবাহন পারাপারের নির্ধারিত টোল রেট চার্ট প্রদর্শন করা নেই সেতুর কোনো প্রান্তে। এমনকি নির্ধারিত টোলের অতিরিক্ত টাকা প্রদানে অপরাগতা প্রকাশে প্রতিনিয়ত দুর্ব্যবহার করা হয় যান ড্রাইভারদের সঙ্গে, এমন অভিযোগ ভুক্তভোগী একাধিক যানবাহন ড্রাইভারের।
সওজ সূত্র জানায়, জুলাই’২০২২ থেকে জুন’২০২৫ পর্যন্ত কলাপাড়া-কুয়াকাটা মহাসড়কের শেখ কামাল সেতুর টোল আদায়ের ইজারা নেয় পটুয়াখালীর মেসার্স নাজমুস সায়াদাত ট্রেডার্স। কর, ভ্যাটসহ তিন বছরের ইজারা মূল্য নির্ধারণ হয় ১১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। সূত্রটি আরও জানায়, সেতুর এক পার হতে অন্য পারে কন্টেইনার, ভারি মালামাল পরিবহনে সক্ষম যান পারাপারের টোল ৫০০ টাকা, তিন বা ততোধিক এক্সেল বিশিষ্ট ট্রাক ৪০০ টাকা, দুই এক্সেল বিশিষ্ট ট্রাক ২০০ এবং এসব যানের জন্য টোল টিকেটের রঙ লাল। ৩১ অনুর্ধ আসন বিশিষ্ট মোটরযান ১৮০ টাকা, টিকেটের রঙ সবুজ। ৩ টন পর্যন্ত লোড ধারনে সক্ষম যান ১৫০ টাকা, পাওয়ার টিলার, ট্রাক্টর ১২০ টাকা এবং এসব যানের টোল টিকেটের রঙ লাল। অনধিক ৩০ যাত্রী বহনের উপযোগী মোটরযান ১০০ টাকা, টোল টিকেটের রঙ সবুজ। অনুন্য ৮ এবং অনধিক ১৫ যাত্রী বহনের উপযোগী মোটরযান ৮০ টাকা, পিকআপ, কনভারশনকৃত জিপ ৮০ টাকা, ব্যক্তিগত বা ভাড়ায় চালিত সকল সিডান কার ৫০ টাকা, অটো, সিএনজি ২০ টাকা, এসব যানের টোল টিকেটের রঙ হলুদ। দুই চাকা বিশিষ্ট মোটরযান ১০ টাকা, রিক্সা, ভ্যান ৫ টাকা এবং এসব যানের টোল টিকেটের রঙ সাদা।
ভুক্তভোগি পিকআপ (ঢাকা মেট্রো-ন-২০-৬২৩৩) ড্রাইভার হাসান বলেন, ৫ সেপ্টেম্বর-২০২২ আমি এক ব্যবসায়ীর কিছু অ্যাঙ্গেল, প্লেনশীট নিয়ে শেখ কামাল সেতু পার হই। এতে আমার কাছ থেকে পারাপারে ৪০০ টাকা করে মোট ৮০০ টাকা আদায় করা হয়েছে। আমি অতিরিক্ত টাকা দিতে না চাইলে টোল প্লাজা থেকে পরিমল ও নিতাই বিশ্বাস নামে দু’জন আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে।’ অটো ড্রাইভার সবুজ (পৌরসভার লাইসেন্স নং ১৩১) বলেন, আমি এক যাত্রীর খালি দু’টি ককসিড অটোর উপর নেয়ায় টোল প্লাজায় আমার কাছ থেকে ৩০ টাকা আদায় করা হয়েছে। আমি অতিরিক্ত ১০ টাকা দিতে না চাইলে শংকর ও স্বপন নামের দু’আদায়কারী আমাকে গালাগাল করে। এছাড়া টাকা নিয়েও কোন সময় আমাদের রশিদ দেয় না। সবুজ আরও বলেন, মহিপুর মৎস্যবন্দর থেকে আসা মোটাচাকার এক টম টম ড্রাইভারের কাছ থেকে আমার সামনে ১৫০ টাকা টোল নেয়া হয়েছে।
ব্যবসায়ী কেরামত খান বলেন, শেখ কামাল সেতুতে নিয়ম বহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত টোল নেয়া হয়। বিষয়টি সওজ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এ বিষয়ে এখনও তাঁরা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। শেখ কামাল সেতুর টোল প্লাজায় টোল আদায়কারী নিতাই বিশ্বাস বলেন, আমরা তিন বছরের জন্য শেখ কামাল সেতুর টোল ১১ কোটি ৮৮ লাখ টাকায় নিয়েছি। এছাড়া টোল ইজারা পেতে আমাদের ঢাকায় গিয়ে অবস্থান করে তদ্বিরে আরও ২০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এরপরও পদ্মা সেতুর উদ্বোধনে আমরা এত টাকায় সেতুর টোল ইজারা নিয়েছি। নিতাই আরও বলেন, ঝড়ে টোল ইজারা চার্ট ভেঙে গেছে। তাই সরিয়ে রাখা হয়েছে। যান ড্রাইভারের সঙ্গে দুর্ব্যবহার কিংবা অতিরিক্ত টাকা নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করলেও টোল টিকেট রঙের বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেন নি তিনি।
মেসার্স নাজমুস সায়াদাত ট্রেডার্স’র স্বত্ত্বাধিকারী নাজমুস সায়াদাত বলেন, আমি এখন ঠিকাদারী কাজের জন্য পিরোজপুর জেলায় অবস্থান করছি। বিষয়টি না জেনে কিছু বলতে পারছিনা।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের কার্য সহকারী হুমায়ুন কবির বলেন, আমার কাছে শেখ কামাল সেতুতে অতিরিক্ত টোল আদায়ের বিষয়ে মৌখিক ভাবে অভিযোগ এসেছে। রবিবার অফিস খুললে কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
সওজ’র নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ গিয়াস উদ্দীন বলেন, আমি বিষয়টি এখন পর্যন্ত অবগত নই। কেবল আপনার কাছে বিষয়টি জানলাম। খোঁজ খবর নিয়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।