- গুরুদাসপুরে আক্রান্ত ১২০০ গরু
যে সকল এলাকায় লাম্পি স্কিনে গরু বেশি আক্রান্ত হয়েছে সে সব এলাকায় টিকা দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত এ রোগে কোনো গরু মারা যায়নি। তাই খামারি ও কৃষক পর্যায়ের সকলকে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসা করালে এক থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যেই আক্রান্ত গরু সুস্থ্য হয়: ডা. আলমগীর হোসেন, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, নাটোর
নাটোরের গুরুদাসপুরে ভাইরাসজনিত চর্মরোগ লাম্পি স্কিন ডিজিজে (এলএসডি) আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ১২শ গরু। এতে বিপাকে পড়েছেন খামারিসহ গরুর মালিকরা।
এদিকে রোগ মোকাবিলায় উপজেলাব্যাপী ভ্যাকসিন কার্যক্রম শুরু করেছে উপজেলা প্রাণি সম্পদ কার্যালয়। ইতোমধ্যেই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ক্যাম্প করে ৬শ গরুকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা, পৌর সদর ও ইউনিয়নের খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেশ কিছুদিন যাবৎ তাদের খামারের ও ব্যক্তি পর্যায়ের গরুগুলো চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছে। প্রথমে চামড়ার উপরি ভাগে টিউমারের মত উপসর্গ দেখা দিয়ে পক্সের মত বের হয়ে ঘাঁ হয়ে যায়। অতপর গরুর সারা শরীরে গুটি গুটি হয়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং প্রতিটি গুটি লাল বর্ণ ধারন করে রক্তাক্ত ক্ষত হয়ে যায়। ক্ষত সৃষ্টি হওয়ার পর মাংস পঁচে খসে পড়ে। এছাড়াও এ রোগে আক্রান্তের পর থেকে গরুগুলো ঠিক মত খাবার খেতে পারে না। ফলে পর্যায়ক্রমে দুর্বল হয়ে পড়ে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলাব্যাপী ছোট বড় মিলে ৮২টি খামার ও গার্হস্থ্য পর্যায়ে ১ লাখ ২০ হাজার ১১৪টি গরু রয়েছে। এর মধ্যে উপজেলার উদবারিয়া, ধারাবারিষা, যোগেন্দ্রনগর, দূর্গাপুর, চাপিলা, সাবগাড়ী, বিলহরিবাড়ীসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় গরুর ভাইরাসজনিত রোগ লাম্পি স্কিন ডিজিজের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। অফিস থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
সরেজমিনে আক্রান্ত এলাকায় গিয়ে জানা যায়, প্রায় ১২০০ মতো গরু লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। গরুর ভাইরাসজরিত এ রোগের নির্দিষ্ট কোন টিকা বা ওষুধ নেই। তবে এলাকার গরু মালিকরা জানান এ রোগ নিরাময়ে আক্রান্ত এলাকায় গোটাপক্স নামের টিকা দেয়া শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত ধারাবারিষা ইউনিয়নের উদবাড়িয়া, বিয়াঘাট ইউনিয়নের দূর্গাপুর ও যোগেন্দ্রনগর এলাকায় ৬০০ গবাদিপশুকে ওই টিকা দেওয়া হয়েছে। আক্রান্ত বাকি গরুগুলোকে পর্যায়ক্রমে চিকিৎসা দেওয়া হবে বলে প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তারা তাদের জানিয়েছেন।
সাবগাড়ী গ্রামের খামারি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমার ছোট খামার। খামারের পাঁচটি গরুর মধ্যে দুইটি বাছুর গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। গরুর পায়ে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুটি গুটি হয়ে ফুলে আছে। তবে পায়ের অংশে রক্তাক্ত হয়ে মাংস পঁচে যাচ্ছে। পশু চিকিৎসকের পরামর্শে ইনজেকশান, অ্যান্টিবায়োটিক ও ব্যাথানাশক ওষুধ দিয়েছি। পাঁচটি গরুর মধ্যে তিনটি গরু এখনো সুস্থ রয়েছে। আক্রান্ত দুই বাছুর গরুকে পৃথক করে রাখা হয়েছে।
উপজেলার উদবাড়িয়া গ্রামের খামরি আব্দুর রশিদ বলেন, আমার ১০টি গরুর মধ্যে ৪টি গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়া প্রতিবেশি অনেকের গরু আক্রান্ত হয়েছে। উপজেলা প্রাণি সম্পদ কার্যালয় থেকে বলেছে দু-একদিনের মধ্যে তারা ভ্যাকসিন দিয়ে যাবেন। আপাত আক্রান্ত গরুর শরীরে নিমপাতা, কাঁচা হলুদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রকৃতিক ঔষধ ব্যবহার করা হচ্ছে।
পশু চিকিৎসক মাহাতাব উদ্দিন বলেন, বর্তমানে উপজেলাব্যাপি ভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে অনেক গরু। প্রাথমিকভাবে অ্যান্টিপাইরেটিক ও অ্যান্টিহিস্টামিন দিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। নডিউল বা গুটি ফেটে গেলে বা সেকেন্ডারি ব্যাক্টেরিয়াল ইনফেকশন দমন করার জন্য সিস্টেমিক অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হয়। এ ছাড়াও ফেটে যাওয়া গুটিতে যেন মশা-মাছি বসতে না পারে তার জন্য খামারে মশা- মাছি প্রতিরোধক স্প্রে বা মশারি ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কারণ মশা ও মাছি থেকে এ রোগ গরুর শরীরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া যেসব খামারে এ রোগের আক্রমণ হয়নি, সেখানেও প্রতিরোধে আগাম প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আলমগীর হোসেন বলেন, ইতিমধ্যেই যে সকল এলাকায় এ রোগে বেশি গরু আক্রান্ত হয়েছে সে সব এলাকায় টিকা দেওয়া হয়েছে। টিকা প্রদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এখন পর্যন্ত এ রোগে কোন গরু মারা যায়নি। তাই খামারি ও কৃষক পর্যায়ের সকলকে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। উপজেলার প্রতিটি এলাকায় গিয়ে ক্যাম্প করছি এবং গবাদিপশুর ভ্যাকসিন নিশ্চিত করছি। এ রোগে আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসা করালে এক থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যেই আক্রান্ত গরু সুস্থ্য হয়ে যায় বলেও তিনি জানান।