ঢাকা | শনিবার
২৪শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
১০ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এলপিজি ডিলারদের ধর্মঘটে ভোগান্তি

এলপিজি ডিলারদের ধর্মঘটে ভোগান্তি

সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রির সুযোগ নেই: জেলা প্রশাসক

কুড়িগ্রামে বেশি দামে গ্যাস বিক্রির দাবিতে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে এলপিজি গ্যাস বিক্রি বন্ধ রেখেছেন ডিলাররা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন গৃহস্থালী কাজে গ্যাস ব্যবহারকারীরা। লোকসানের অজুহাত তুলে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে গ্যাস বিক্রির দাবিতে গত শুক্রবার থেকে এলপিজি গ্যাস ডিলাররা ধর্মঘট পালন করছেন। এ প্রতিবেদকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন একাধিক এলপিজি গ্যাস বিক্রির ডিলার।

তবে জেলা প্রশাসন বলছে, গ্যাস ডিলারদের এমন দাবি অনৈতিক। কোনোভাবে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে গ্যাস বিক্রির সুযোগ নেই। এটা লাইসেন্সের শর্ত ভঙের শামিল।

গতকাল সোমবার সকাল ৯টার পর জেলা শহরের ত্রিমোহনী বাজারের কাছে ওমেরা গ্যাস ডিলার পয়েন্ট মেসার্স সাহা ফিলিং স্টেশনে হাবিবুর রহমান নামে স্থানীয় একজন শিক্ষক খালি সিলিন্ডারসহ গ্যাস কিনতে গেলে তার কাছে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রিতে অপারগতা জানায় ডিলারের প্রতিনিধি। এসময় তারা ওই গ্রাহককে জানান যে তাদের ধর্মঘট চলছে।

ওই গ্রাহক বলেন, বাড়িতে গ্যাস শেষ। খালি সিলিন্ডারসহ নতুন গ্যাস সিলিন্ডার নিতে এসে দেখি কেউ বিক্রি করছেন না। তিনি বলেন, আমি রিকশাযোগে ত্রিমোহনী থেকে শাপলা পর্যন্ত সব দোকানে গিয়েছি। কিন্তু কেউ আমার কাছে গ্যাস বিক্রি করে নাই। অথচ সব ডিলারের কাছে গ্যাস মজুত আছে। সব ভোগান্তি আমাদের মতো গ্রাহকদেরকেই সহ্য করতে হবে কেন বলে প্রশ্ন রাখেন তিনি।

ওমেরা গ্যাস ডিলারের প্রতিনিধি রুবেল জানান, সরকার নির্ধারিত মূল্যে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করলে তাদের সিলিন্ডার প্রতি অন্তত ষাট টাকা লোকসান গুনতে হয়। আবার বেশি দামে গ্যাস বিক্রি করলে মোবাইল কোর্টে জরিমানা দিতে হয়। বিষয়টি নিয়ে গত বৃহস্পতিবার তাদের একটি প্রতিনিধি দল জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করে বেশি দামে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির অনুমতি চাইলে জেলা প্রশাসন থেকে সে অনুমতি দেওয়া হয়নি। ফলে তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য গ্যাস বিক্রি বন্ধ রেখেছেন।

সদর উপজেলার জয়বাংলা মোড়ের খুচরা বিক্রেতা ভাই ভাই বেকারি এন্ড কনফেকশনারীর ম্যানেজার বিশু চন্দ্র বলেন, আমরা ডিলারদের কাছ থেকে গ্যাস সিলিন্ডার কিনে এনে বিক্রি করি। চাহিদাও ভালো। কিন্তু ডিলাররা সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে আমাদের নিকট গ্যাস বিক্রি করে। ম্যামো চাইলে ম্যামো দেয় না। ম্যামো চাইলে বলে ম্যামো ছাড়া নিলে নেন, না নিলে যান। আর ম্যামো না থাকলে ভ্রাম্যমাণ আদালত এসে আমাদের জরিমানা করেন। আমরা পড়েছি উভয় সংকটে। এখন আবার ডিলাররা গ্যাস বিক্রি বন্ধ রেখেছেন। এতে গ্রাহকরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।

কুড়িগ্রামে যমুনা গ্যাসের ডিলার বদরুল আহসান মামুন বলেন, আমাদের উপায় নাই। আমরা জেলা প্রশাসকের কাছে গিয়ে মূল্য সমন্বয় করে গ্যাস বিক্রির অনুমতি চেয়েছি। কিন্তু তিনি মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের বাইরে কোনো সিদ্ধান্ত দিতে রাজি হননি। সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে আমাকে অন্তত পঞ্চাশ টাকা বেশি দিয়ে গ্যাস কিনতে হয়। সে হিসেবে আমাদের প্রতি সিলিন্ডার কমপক্ষে ১ হাজার ৩৯০ টাকায় বিক্রি করতে হয়। আমরাতো লোকসান করে বিক্রি করতে পারবো না। এজন্য নতুন করে মাল তুলছিও না, বিক্রিও করছি না।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ডিলাররা আমার কাছে এসেছিলেন। আমি বলেছি সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রির অনুমতি দেওয়ার সুযোগ নেই। এজন্য তারা যদি বিক্রি বন্ধ রাখেন সেটা কোনো সমাধান নয়। তারা সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার শর্তে লাইসেন্স নিয়েছেন।

করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক বলেন, এভাবে চলতে থাকলে আমাদের আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। আমি প্রত্যাশা করবো তারা (ডিলাররা) নির্ধারিত মূল্যে গ্যাস বিক্রি করবেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন