ঢাকা | সোমবার
১৯শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সাগরে প্রচুর পাতে নেই

সাগরে প্রচুর পাতে নেই

ইলিশ রপ্তানি বন্ধে লিগ্যাল নোটিশ

সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে টানা ৬৫ দিন বন্ধ থাকার পর গত ২৩ জুলাই মধ্যরাত থেকে সাগরে মাছ ধরা শুরু হয়েছে। শত শত জেল জাল নৌকা নিয়ে ছুটেছেন সাগরে। জেলেদের ভাষ্য, নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে জালে। গত বছরের একই সময়ে যে পরিমাণ ইলিশ পাওয়া গেছে, এবার সে তুলনায় চার থেকে পাঁচগুণ ইলিশ মিলছে। আবার সেসব ইলিশের আকারও অনেক বড়, ওজনও বেশি।

জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়া ইলিশ যাচ্ছে উপকূলের ফিশারিঘাটগুলোতে। সেখানে সরগরম অবস্থা। একইভাবে বাজারগুলোতেও ইলিশের ব্যাপক দাপট। তবে সেই দাপট শুধু বাজারেই, সাধারণ মানুষের পাতে নেই ইলিশ। ক্রেতারা বলছেন, সাগরে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। বাজারগুলোও ইলিশে ভরপুর। তবে একদমই চড়া দাম। নিম্ন আর মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে।

অবশ্য এক্ষেত্রে বিক্রেতাদের কথায় উল্টো সুর। তাদের দাবি, অন্যান্যবারের তুলনায় এবারে বাজারে ইলিশের সরবরাহ কম। অন্যদিকে ক্রেতা অনেক বেশি। যে কারণে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম বেড়েছে। তারা জানাচ্ছেন, বড় ইলিশের কেজি দেড় হাজার টাকারও বেশি। গত কয়েকদিনে মানভেদে কেজি প্রতি ইলিশের দাম বেড়েছে ২০০ টাকা করে।

এমন পরিস্থিতির জন্য ইলিশ রপ্তানিকে দায়ী করা হচ্ছে। এরই প্রেক্ষিতে গত রবিবার প্রতিবেশী দেশ ভারতে ইলিশ রপ্তানি বন্ধে সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন মো. মাহমুদুল হাসান নামে সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী। নোটিশ পাওয়ার সাতদিনের মধ্যে ভারতে ইলিশ রপ্তানি স্থায়ীভাবে বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে। অন্যথায় এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্টে রিট করা হবে বলেও নোটিশে উল্লেখ করেন ওই আইনজীবী।

ইলিশ রপ্তানি বন্ধের ওই নোটিশ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, বেসরকারি বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তর এবং বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যানকে বিবাদী করা হয়েছে।

নোটিশে বলা হয়েছে, দেশের জাতীয় মাছ ইলিশ। অথচ কিন্তু বর্তমানে ইলিশ মাছের অত্যধিক দামের কারণে দরিদ্র জনগোষ্ঠী এই মাছ কেনার চিন্তা করে না। দেশের মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠী ইলিশ কিনতে হিমশিম খাচ্ছে। বাজারে ইলিশ মাছের দাম গড়ে এক হাজার টাকা থেকে ১২শ টাকা কেজি। এছাড়া ইলিশের মধ্যে সবচেয়ে সুস্বাদু হলো পদ্মা নদীর ইলিশ। বাজারে পদ্মার ইলিশের দাম গড়ে ১২শ থেকে ১৫শ টাকা কেজি এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তার চেয়েও বেশি।

কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দেশের মানুষের চাহিদার কথা চিন্তা না করে ভারতে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। ভারতে রপ্তানির কারণে দেশের স্থানীয় বাজারে ইলিশের দাম বেড়েছে। আরও দুঃখের বিষয় হলো দেশের বাজারের চেয়ে কম দামে ভারতে ইলিশ রপ্তানি হচ্ছে।

নোটিশে আরও বলা হয়, ভারতে যে ইলিশ রপ্তানি করা হচ্ছে সেগুলো মূলত পদ্মার ইলিশ। এমনিতেই পদ্মা নদী থেকে সীমিত পরিমাণ ইলিশ পাওয়া যায়। এই পদ্মার ইলিশ ভারতে রপ্তানির ফলে বাংলাদেশের বাজারগুলোতে পদ্মার ইলিশ যথেষ্ট পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে না। বাংলাদেশের রপ্তানি নীতি ২০২১-২৪ অনুযায়ী ইলিশ মুক্তভাবে রপ্তানিযোগ্য পণ্য নয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পূর্ণ অনায্যভাবে, জনগণের স্বার্থ উপেক্ষা করে ভারতে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে।

সরকার যদি বিদেশিদের ইলিশের স্বাদ উপভোগ করাতে চায়, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন ‘ইলিশ উৎসব’ আয়োজন করতে পারে। যেখানে বিদেশিদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। এমনকি আসন্ন দুর্গাপূজায় ভারতীয়দের আমন্ত্রণ জানানো যেতে পারে বাংলাদেশে ভ্রমণ করে ইলিশের স্বাদ উপভোগ করার।

উল্লেখ্য, পর্যটন করপোরেশন আইন (বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন অর্ডার) এর ধারা ৫ অনুযায়ী, পর্যটনের উন্নয়ন, বিকাশ, বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করাসহ পর্যটনের সব উৎকর্ষসাধনের দায়িত্ব পর্যটন করপোরেশনের। আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে ৪৯ প্রতিষ্ঠানকে ভারতে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ৫০ টন করে মোট দুই হাজার ৪৫০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। গত ৪ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয়ের রপ্তানি-২ শাখার এক চিঠিতে এ অনুমতি দেওয়া হয়। আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রককে এ চিঠি পাঠানো হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঝাটকা ইলিশ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায়। ৪৫০ থেকে ৫৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ কেজি প্রতি ৭০০ টাকা দরে। ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ কেজি প্রতি ৯০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০০ টাকায় ওপরে। এক কেজি ২০০ গ্রাম থেকে এক কেজি ৪০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ এক হাজার ৭০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীর বাজারভেদে দামের পার্থক্য রয়েছে। অনেক জায়গায় ইলিশের কেজি দেড় থেকে দুই হাজার টাকাতেও বিক্রি হচ্ছে।

ইলিশের চড়া দাম প্রসঙ্গে কাওরান বাজারের একাধিক বিক্রেতা বলেন, নদীতে ইলিশ মাছ কম। ধরাও পড়ছে কম। বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহও কম। সব মিলিয়ে ইলিশের দাম কিছু বাড়তি। তবে সরবরাহ বাড়লে ইলিশের দাম কমবে। এদিকে, ইলিশের দাম বাড়ায় ক্ষুব্ধ নগর ক্রেতারা। শান্তিনগরের ক্রেতা সোহাগ বলেন, গনমাধ্যমে শুনি ঝাঁকে ঝাঁকে সাগরে ইলিশ ধরা পড়ছে। কিন্তু বাজারে নেই তার প্রভাব। বর্তমানে মাঝারি মানের ইলিশ কেজি প্রতি হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন