- অবাধে বাঁশ গাছ নিধন
আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের ঐতিহ্যবাহী মাচাং ঘর। বাঁশ, কাঠ, টিন ও ছন দিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি মাচাং ঘর পাহাড়ে বসবাসকারী প্রতিটি সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী ঘর। আধুনিকতার ছোঁয়া এবং পাহাড়ে অবাধে বন উজারের কারণে বাঁশ-কাঠের দাম বেড়ে যাওয়ায় মাচাং ঘরের প্রচলন দিন দিন কমে আসছে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে জানা যায়, বাঁশ কাঠ ও ছন দিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি এক ধরনের ঘরকে বলা হয় মাচাং ঘর। বংশ পরম্পরায় পাহাড়ে বসবাসকারি প্রতিটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস ছিল মাচাং ঘরে। ভূমি থেকে উচুঁতে খুঁটির উপর নির্মিত এ মাচাং ঘরে একদিকে যেমন পোকা মাকড় ও বন্যপ্রাণীর আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায় তেমনি রয়েছে নিজেদের পালিত পশুর থাকার ব্যবস্থাও। শুধু তাই নয় বিশ্রাম নেয়া, ধান শুকানো থেকে শুরু করে গৃহস্থালির নানা কাজে ব্যবহৃত হয় মাচাং ঘর। তবে, বর্তমানে দূর্গম পাহাড়ি এলাকায় কিছু কিছু মাচাং ঘর দেখা গেলেও বেশীরভাগ পাড়াতেই গড়ে উঠেছে আধা পাকা ঘর। আধুনিকতার ছোঁয়ায় পাহাড়িদের শহরমুখী হওয়ায় এবং বন উজারের ফলে বাঁশ কাঠের দুস্প্রাপ্যতা ও খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণে মাচাং ঘরের প্রচলন দিন দিন কমে আসছে। এরফলে বিলুপ্তির পথে পাহাড়িদের ঐতিহ্যবাহী দৃষ্টিনন্দন এ মাচাং ঘর।
পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য ও বান্দরবান ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট এর কনভেনার সিং ইয়ং ম্রো বলেন, আগে আমাদের স্বল্প খরচের মধ্যে মাচাং ঘর তৈরি করা যেতে। বর্তমানে অবাধে পাহাড়ে বন উজাড় হয়ে যাওয়ার কারণে আগের মত বাঁশ-গাছ পাওয়া যায় না। যা পাওয়া যায় তাও অধিক দামে কিনতে হয়। যার ফলে এক একটি মাচাং ঘর তৈরি করতে অনেক টাকা প্রয়োজন। অন্যদিকে একই টাকা দিয়ে পাকা ঘর বা সেমি পাকা ঘর তৈরি করা যায়। তাই বলা যায় পাহাড়ে অবাধে বন উড়াজ ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় মাচাং ঘর প্রায় বিলুপ্তির পথে। তবে যদি সরকারিভাবে বনাঞ্চল রক্ষা ও বনায়নের উদ্যোগ নেয়া হয় তাহলে আমাদের পাহাড়িরা আবারো মাচাং ঘর তৈরিতে আগ্রহ বাড়বে।
উল্লেখ্য, পাহাড়িদের তৈরি এসব মাচাং ঘর একদিকে যেমন স্বাস্থ্য সম্মত ও নিরাপদ অন্যদিকে দৃষ্টি নন্দনও। প্রতিটি মাচাং ঘর তৈরিতে খরচ হয় এক থেকে দেড় লাখ টাকা।