ইচ্ছা পূরণে জীবন সায়াহ্নে এসে আবুল কালাম আজাদ (৬৭) বসেছেন পরীক্ষার আসনে। এবার তিনি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্থানীয় একটি বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন। ছেলেদের সহযোগিতায় শুরু করেছেন পড়ালেখা। তিনি শেরপুর জেলার শ্রীবরদীর খড়িয়াকাজীরচর ইউনিয়নের লংগরপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল রশিদ মন্ডলের ছেলে। পরিবারে অনটনের কারণে নিজে তেমন পড়ালেখা করতে না পারলেও তিন ছেলেকে বানিয়েছেন উচ্চ শিক্ষিত। বড় ছেলে ইংরেজির শিক্ষক, মেঝ ছেলে কামিল পাশ ও ছোট ছেলে প্রকৌশলী।
আবুল কালাম আজাদ বলেন, ছোট থেকেই তার ইচ্ছা ছিল পড়ালেখা করার। ১৯৭৫ সালে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। অনটনের কারণে তার পড়া হয়নি। পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে ঢাকায় চলে যান। ঢাকায় এসেও পড়ালেখা করতে চেয়েছেন।
নানা কারণে তা আর হয়ে উঠেনি। পরে ঢাকা থেকে সৌদি আরব চলে যান। ১৮ বছর থাকেন প্রবাসে। সেখান থেকে ফিরে ব্যস্ত হয়ে পড়েন সাংসারিক কাজে। শুরু করেন লেখালেখি। ইতোমধ্যে তিনি লিখেছেন অসংখ্য কবিতা, ছড়া, উপন্যাস ও গান।
প্রকাশিত হয়েছে দেহদাহ ও দেশরত্ন নামে দুটি কবিতার বই। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ২৭টি কবিতা লিখেছি। আর বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লিখেছি পাঁচটি কবিতা। আমার লেখা কবিতাগুলো প্রধানমন্ত্রীর হাতে পৌঁছানোর সুযোগ চাই। দেশের উন্নয়ন নিয়েও আমি কবিতা লিখেছি।
নতুন করে পড়ালেখা করার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে আবুল কালাম আজাদ বলেন, এলাকার অনেকেই প্রথম হাসাহাসি করলেও এখন আর কেউ এমন করে না। আর শিক্ষার কোনো বয়স নেই। মহানবী (সা.) শিক্ষা গ্রহণে সুদূর চীন দেশে যেতে হলেও যেতে বলেছেন। তাই আমার ইচ্ছাটা শেষ বয়সে হলেও পূরণ করতে চাই।
আবুল কালামের মেঝ ছেলে আরিফুল ইসলাম বলেন, বাবা আমাদের জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। আমাদের তিন ভাইকে পড়ালেখা করিয়ে ভালো চাকরির ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন। তার নিজের ইচ্ছা ছিল পড়ালেখা করার। আমরা এখন তার ইচ্ছাপূরণের জন্য কাজ করছি। বাবা যতটুকু পড়তে চান আমরা পড়াব।
লংগরপাড়া গ্রামের রতন মিয়া বলেন, আমরা আনন্দিত আমাদের কবি কালাম চাচা শেষ বয়সে পড়ালেখা করছেন ও এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন। দোয়া করি তার পড়ালেখার ইচ্ছা যেন পূরণ হয় । তার কবিতাও আমরা পড়ি। ভালো লাগে কবিতাগুলো।
খড়িয়াকাজীরচর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান দুলাল মিয়া বলেন, ‘গ্রামে তিনি কবি কালাম নামে পরিচিত। তিনি যে শেষ বয়সে এসে ধৈর্য ধরে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন, এতে আমরা আনন্দিত। তাকে আমার ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে অভিনন্দন। ’