ঢাকা | শনিবার
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দক্ষিণ এশিয়ার বিস্ময়

কর্ণফুলী নদীতে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু টানেল

চট্টগ্রাম বন্দরের সন্নিকটে কর্ণফুলী নদীতে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু টানেল দক্ষিণ এশিয়ার নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন প্রথম টানেল। চীনা প্রতিষ্ঠান সিসিসিসি প্রকল্পটি জি-টু-জি ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করছে। চলতি বছরের ডিসেম্বর নাগাদ এই টানেল যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। তিন দশমিক ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই টানেল চালু হলে চট্টগ্রাম শহরের পশ্চিম অংশের সঙ্গে কর্ণফুলী নদীর পূর্ব অংশের সড়ক যোগাযোগ স্থাপন, চট্টগ্রাম শহরের যানজট নিরসন এবং ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ আরও উন্নত হবে।

তাছাড়া এটি এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে এবং চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে পণ্য পরিবহন সহজ হবে। এই টানেল জাতীয় জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। নির্মাণাধীন ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ এর রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায়ের জন্য সার্ভিস প্রোভাইডার বা অপারেটর হিসেবে টানেলটির নির্মাতা সংস্থা চীন সরকারের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ‘চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোম্পানিকে (সিসিসিসি) নিয়োগ দিয়েছে সরকার। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির (সিসিজিপি) ২৫তম সভায় এ প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডকে টানেলের রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায়ের জন্য প্রায় ৯৮৩ দশমিক ৮২ কোটি টাকায় পাঁচ বছরের জন্য সেবা প্রদানকারী হিসেবে নিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে।

মূলত, কর্ণফুলী নদীর উত্তর ও দক্ষিন দুইপাড়ে চীনের সাংহাইয়ের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে তুলতে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন টানেল প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে। নির্মাণ কাজ করছে চীনা কোম্পানি ‘চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন লিমিটেড’।

টানেল রক্ষণাবেক্ষণের উল্লেখযোগ্য কাজগুলো হলো- টানেল মেইনটেন্যান্স, ব্রিজ/ভাইয়াডাক্ট মেইনটেন্যান্স, উভয় পাশের অ্যাপ্রোচ রোড মেইনটেন্যান্স, ইনস্টল অ্যান্ড মেইনটেনিং টানেল হেলথ মনিটরিং সিস্টেম, পেট্রল অ্যান্ড রেসকিউ, অটোমেটিক ওয়েস্কেল ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড টোল কালেকশন, ইন্টেলিজেন্ট ট্রাফিক সিস্টেম (আইটিএস) সার্ভিল্যান্স সিস্টেম, টানেল ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড ড্রেইনেজ সিস্টেম, টানেল ফায়ার রেসকিউ সিস্টেম, টানেল এয়ার ভেন্টিলেশন অ্যান্ড লাইটিং সিস্টেম ইত্যাদি।

টানেলের রক্ষণাবেক্ষণে পারফরম্যান্স বেজড মেইনটেইন্যান্স পদ্ধতি অনুসরণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ পদ্ধতিতে আধুনিক প্রযুক্তি অর্থাৎ টানেলের বিভিন্ন অংশে সেন্সর ব্যবহারের মাধ্যমে স্ট্রাকচারাল হেলথ মনিটরিং সিস্টেম চালু করা হবে। এর ফলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে টানেলের বর্তমান অবস্থা মূল্যায়ন করে রক্ষণাবেক্ষণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সে অনুযায়ী রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

রক্ষণাবেক্ষণকারী সংস্থা টানেল বা এর আওতাধীন অন্য যেকোনো অবস্থানে বিদ্যমান যানবাহন সংক্রান্ত তথ্যাদি স্বয়ংক্রিয়ভাবে মোবাইল, বেতার বা অন্য কোনো ডিভাইসের মাধ্যমে জানার লক্ষ্যে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ট্রাফিক ইনফরমেশন অ্যাপ্লিকেশন চালু করবে। স্বয়ংক্রিয়ভাবে পেভমেন্টের ক্ষতির পরিমাণ ও অবস্থান জানার জন্য রেয়াল টাইম রোড পেভমেন্ট ড্যামেজ ডিক্টেশন সিস্টেম চালু এবং স্বয়ংক্রিয় ওজন নিয়ন্ত্রণ ও ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন (ইটিসি) সিস্টেম চালু করা হবে। টানেলের রক্ষণাবেক্ষণে সিসিসিসি কর্তৃক দেশীয় জনবল সমন্বয়ে গঠিত টিমকে টানেল রক্ষণাবেক্ষণ বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেবে।

কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’ নির্মাণের কাজ প্রায় শেষের পথে। আসছে ডিসেম্বরে খুলতে পারে টানেলের দুয়ার। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত হবে চট্টগ্রাম-কক্সাজার মহাসড়ক। টানেলের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী হারুনুর রশিদ চৌধুরী জানান, মূল টানেল এবং সংযুক্ত সড়ক তৈরিসহ সার্বিক কাজের অগ্রগতি ৮৬ শতাংশ। ডিসেম্বরের মধ্যে টানেলের কাজ শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি আগামি ডিসেম্বরে বঙ্গবন্ধু টানেল সর্ব সাধারণের জন্য চালু করা সম্ভব হবে।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন