- ২৩ জনের মৃত্যু
কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে এইডসের পর এবার ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গু। এক বছরে সংখ্যায় তা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। পর্যটন নগরী কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ও স্থানীয় মিলে এক বছরে ১১ হাজারের বেশি মানুষ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছে ২৩ জন। অর্ধশতেরও বেশি হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। সবশেষ গত ৩১ আগস্ট কক্সবাজার শহরে মারা গেছে তানভির আহমেদ নামের এক স্কুলছাত্র।
ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যার বিচারে সারা দেশের মধ্যে ঢাকার পর কক্সবাজারেই বেশি সংখ্যক ডেঙ্গু রোগী রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে সাধারণ মানুষ। প্রথম দিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও টেকনাফ কেন্দ্রিক ডেঙ্গুর বিস্তার থাকলেও ক্রমান্বয়ে তা কক্সবাজার শহরসহ আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ছে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে বিস্তার হয়ে প্রথমে টেকনাফে ছড়িয়েছে ডেঙ্গু। এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও টেকনাফ ডেঙ্গুর হটস্পট হয়ে আছে। এর মধ্যে নতুন করে ডেঙ্গুর হটস্পটে রূপ নিয়েছে কক্সবাজার শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ড। এই এলাকায় এখন ঘরে ঘরে রয়েছে ডেঙ্গু রোগী।
স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর আকতার কামাল জানিয়েছেন, পৌরসভার ১নম্বর ওয়ার্ডের সমিতি পাড়া, কুতুবদিয়া পাড়া, ফদনারডেইলসহ পুরো এলাকায় এখন ঘরে ঘরে ডেঙ্গু রোগী রয়েছে। কোনো কোনো ঘরে দুই-তিনজন পর্যন্ত রোগি রয়েছে একজন সুস্থ হয়ে উঠতেই আক্রান্ত হয় পরিবারের অন্য সদস্যরা। কাউন্সিলর আকতার বলেন, এ এলাকায় ডেঙ্গু ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে গেছে। বলা যায় এ এলাকা এখন ডেঙ্গুর হটস্পট। শিগগিরই এখানকার ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে পর্যটন শহরের অবস্থা অতি খারাপ হবে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, এই বছরে কক্সবাজারে ১২ হাজার ২৪৬ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তার মধ্যে ১১ হাজার ৬৫৮ জন রোহিঙ্গা অধিবাসী। স্বাস্থ্য বিভাগের পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, চলতি বছর ডেঙ্গুর যে প্রকোপ সৃষ্টি হয়েছে তার অধিক প্রভাব পড়েছে রাজধানী ঢাকায়। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে কক্সবাজার জেলা। ঢাকা থেকে বিভিন্ন সংস্থার আসা-যাওয়ার ফলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ডেঙ্গু ছড়িয়েছে। কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয় শিবিরে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গার বসবাস। ঘনবসতিপূর্ণ এ রোহিঙ্গা বসতিতে এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র বেশি হওয়ায় সম্প্রতি ডেঙ্গু ভয়াবহ বিস্তার করেছে। কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) আশিকুর রহমান জানিয়েছেন, এই পর্যন্ত সদর হাসপাতালে ৭১২ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় এই হাসপাতালে মারা গেছেন ৮ জন। সর্বশেষ ১ সেপ্টেম্বর ৫৮ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন।
আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) আশিকুর রহমান বলেন, চলতি বছরের শুরু থেকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী বেড়ে গেছে। পুরোটা সময় প্রতিদিন ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ছিলো এই হাসপাতালে। এতে চিকিৎসা দিতে গিয়ে চিকিৎসক ও নার্সদের হিমশিম খেতে হয়েছে।
কক্সবাজারের সিভিল সার্জন মো. মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, মূলত রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকেই কক্সবাজারে ডেঙ্গু ছড়িয়েছে। কোনো কারণে ক্যাম্পে ডেঙ্গু বিস্তার হলে সেখানকার নালা-নদর্মা থেকে এডিস মশা বৃদ্ধি পেয়ে তা ক্রমান্বয়ে ছড়িয়ে পড়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং কক্সবাজার শহরসহ আশেপাশের এলাকাগুলো এখন বেশ ডেঙ্গু ঝুঁকিতে রয়েছে। ডেঙ্গুর বিস্তার রোধে এখনই সকলকে সজাগ হতে হবে। এডিশ মশার বিস্তার হওয়া নালাসহ কোথাও যাতে পানি জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। একই সাথে প্রশাসনিকভাবেও সচেতনতা বৃদ্ধিসহ অন্যান্য পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।