- স্বাবলম্বী তিন শতাধিক পরিবার
একসময় দেখা যেতো কৃষাণীরা দুপুরে কাপড়ে বেঁধে স্বামীর জন্য গরম গরম দুপুরের খাবার, পানির জগ, মগ আর হাতে একটা ‘হাত পাখা’ নিয়ে মাঠে যেতো। স্বামী খাবার সময় তার গায়ে ”হাত পাখা” দিয়ে বাতাস করতো। যুগের পরিবর্তনে হাত পাখারও পরিবর্তন এসেছে। তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে আমরা পেয়েছি বৈদ্যুতিক পাখা। যেখানে কষ্ট করে হাত নাড়িয়ে বাতাস করতে হয় না। এক চাপে সুইচ দিলেই চলতে থাকে বন্ধ না করা অব্দি।
বর্তমানে গরমের তীব্রতা আর ঘন ঘন লোডশেডিং এর কারণে কদর বেড়েছে হাতপাখার। হাতপাখার কদর বেড়ে যাওয়ায় ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার প্রায় তিন শতাধিক পরিবারে ফিরে পেয়েছে কর্মচঞ্চলতা। হাতপাখা তৈরি করে জীবিকা নির্বাহের আশায় উপজেলার পাড়াডাংরি গ্রামের তিন শতাধিক পরিবার প্রতি বছরের এ সময় নিয়োজিত হয় পাখা তৈরির কাজে। যত গরম তত কদর। আর এ কদর থেকেই ব্যাপক সাড়া পাচ্ছে পাখা তৈরির কারিগররা।
বাড়ির উঠানে পাটিতে বসে কেউ বাঁশ কাটার কাজ করছে, কেউ কাপড়ে রং দিচ্ছে, কেউ কাপড় শুকাচ্ছে, কেউ আবার পাখায় নকশার কাজ করছেন। উঠানে বিশ্রামের সময় গল্প করতে করতেও চলে বিভিন্ন রকমের আকর্ষণীয় এসব পাখা তৈরির কাজ। পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে শেখা এসব কাজে তাদের নেই কোন প্রশিক্ষণ।
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে বড়হিত ইউনিয়নে অবস্থিত বড়ডাংরি গ্রাম। কৃষি কাজের পাশাপাশি হাতপাখা তৈরি ও বিক্রি করে স্বাচ্ছন্দ্যে চলছে এ গ্রামের মানুষগুলো। এ গ্রামের গৃহবধূরাও রান্নার পাশাপাশি সারাক্ষণ ব্যাস্ত থাকে নজরকাঁড়া এসব হাতপাখা তৈরির কাজে। এখানকার প্রায় ৩ শতাধিক পরিবারের হাজার খানেক সদস্যদের জীবন-জীবিকা উন্নত করছে কাপড় ও বাঁশের তৈরি এ হাতপাখা। গরমের সময় প্রতিটি বাড়িতেই ধুম পরে পাখা তৈরির। এ সময়গুলোতে তাদের ফুরসত নেই। পাখা তৈরি ও সুতা দিয়ে বাঁধাইয়ের কাজটি বাড়ির মেয়েরাই করে থাকে। আবার বিভিন্ন স্থান থেকে কাপড় কিনে বাঁশ সংগ্রহ করে, বাঁশ ছাঁটাই ও তৈরি পাখা বিক্রির কাজ করেন বাড়ির পুরুষরা।
জাহাঙ্গীর আলম জানান, আমরা পাইকারদের কাছে আগে ১শ পাখা ১ হাজার টাকা করে বিক্রি করলেও বর্তমানে চাহিদা ও উপকরণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ১শ পাখা ২ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন। পাইকাররা এই পাখাগুলো চিটাগাং, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দেন।
ঐতিহাসিক এ হাতপাখার প্রচলন গ্রামের এই মানুষরাই টিকিয়ে রেখেছে। এখানকার নারী-পুরুষ কেউ বেকার বসে থাকেন না। অনেকেই আবার পাখা তৈরি করে আলোর মুখ দেখছেন।