ঢাকা | মঙ্গলবার
২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পর্যটনে লাল শাপলা বিল

পর্যটনে লাল শাপলা বিল

বরিশালের উজিরপুর উপজেলার হারতা, সাতলা ও আগৈলঝাড়ার বাঘদা গ্রামে লাল শাপলার বিল যেন রূপসী বাংলার অপরূপ সৌন্দর্য্য। সাতলা বিলে ফুটন্ত লাল শাপলা দর্শনার্থীদের মন কেড়ে নিয়েছে। ফলে দেশের গন্ডি পেরিয়ে এখন বিশ্বেও পরিচিত নাম লাল শাপলার বিল সাতলা। দূর দূরান্ত থেকে শাপলার মৌসুমে প্রচুর পর্যটক আসেন প্রাকৃতিক এ সৌন্দর্য্য উপভোগ করার জন্য। ফলে ওই অঞ্চলের মানুষ শাপলার মৌসুমে খানিকটা আয়ের পথও খুঁজে পান। তবে বছরে মাত্র ৩ মাস এ সৌন্দর্য্য থাকে বলে স্থায়ীভাবে গড়ে ওঠেনি পর্যটন কেন্দ্র কিংবা মান সম্পন্ন কোন হোটেল মোটেল।

বরিশাল নগরী থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে উজিরপুর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল সাতলা ইউনিয়নের উত্তর সাতলা গ্রাম। যা শাপলা রাজ্য হিসাবে পরিচিত। গ্রামের নামেই বিলের নাম সাতলা বিল। প্রায় ১০ হাজার একর জলাভূমির এ বিলে লাল আর সবুজের মাখামাখি দূর থেকেই চোখ পড়বে পর্যটকদের। কাছে গেলে ধীরে ধীরে সবুজের পটভূমিতে লালের অস্তিত্ব আরও গাঢ় হয়ে লাল শাপলার রাজ্য চোখ জুড়িয়ে দেয় জাতীয় ফুল শাপলার বাহারি সৌন্দর্য। শুধু সৌন্দর্যই নয় সুস্বাদু খাবার হিসেবেও শাপলার বেশ কদর রয়েছে। ওই এলাকার সাধারণ মানুষগুলো বিলের পানিতে জীবন সংগ্রামের আয়ের পথ হিসাবে বেছে নিয়েছে শাপলা তোলাকে। তারা সকালের সূর্যের আলো ফোটার আগেই ছোট ছোট নৌকা নিয়ে নেমে পড়ে শাপলা বিলে শাপলা তোলার জন্য। পানির মধ্য থেকে শাপলাগুলো তুলে এনে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছে শতশত পরিবার। প্রায়  দু’শত বছর ধরে সাতলার বিল গুলোতে শাপলা জন্ম হচ্ছে। ওই এলাকার প্রায় ৫০ভাগ অদিবাসী শাপলার চাষ ও বিপনন কাজের সাথে জড়িত রয়েছে। এক সময় শাপলার তেমন কোনো চাহিদা না থাকায় পানিতে জন্মে পানিতেই মরে পচে যেতো। দিনে দিনে শাপলার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় তা বাজারে বিক্রি করতে শুরু করে দিনমজুররা। এখন প্রায় সারা বছর ধরেই শাপলা পাওয়া যাওয়ায়। বিশেষ করে এ অঞ্চলের মানুষ খাদ্যের তালিকায় শাপলাকে প্রাধান্য দিচ্ছে। এ ছাড়া বিশাল এ বিলে প্রতি বছর মাছ চাষ করে আয় হচ্ছে কোটি টাকাও বেশি।

স্থানীয় মেম্বর আবু সাইদ আহমেদ জানান, এ বিলে প্রতি বছর বিভিন্ন প্রজাতির মাছ রুই, কাতল, বোয়াল, চিতল, গ্রাসকাপ ও সিলভারকাপ চাষ করা হয়। গত বছর এ বিল থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকার মাছ বিক্রি হয়েছে বলেও জানান তিনি। অবশ্য মাছ চাষের ব্যাপারে স্থানীয় জমি মালিকদের অভিযোগও আছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বাসিন্দা জানান, প্রভাবশালী মহল মাছ চাষের সুবিধা ভোগ করলেও তারা বঞ্চিত হচ্ছেন। স্থানীয় ৭নং ওয়ার্ডের মেম্বার মোনাফ্ফের হাওলাদার বলেন, মাছ চাষের ফলে পানি নেমে যাওয়ার পর এখানে কৃষকদের ধান চাষে অনেক সুবিধা হয়। তাছাড়া ধানের ফলনও অধিক হয়। প্রতি বছর শ্রাবন মাসের শুরুতে এ বিলে শাপলা ফুটতে শুরু করে। যার স্থায়ীত্ব মতভেদে ৩ থেকে ৪ মাস। তবে বছরের ৬ মাস বিলে পানি থাকে। শাপলা এবং বিলের পানি ওই অঞ্চলের মানুষের আয়ের পথ খুলে দেয়। বিশেষ করে লাল শাপলার সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে আসা পর্যটক, শাপলা তুলে বিক্রি করা, বিলে মাছ চাষ করা এবং পানি শুকিয়ে গেলে ফসল উৎপাদন পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম জানান, তিনি সারা বছর অন্যান্য পেশায় নিযুক্ত থাকলেও শাপলা মৌসুমে বিলে নৌকা চালান। পর্যটকদের জন্য এ বিলে প্রায় ৫০-৬০টি নৌকা চলাচল করে। এতে প্রত্যেক মাঝি গড়ে ৫শ’ থেকে ৭শ’ টাকা পর্যন্ত আয় করেন। আর বন্ধের দিনগুলোতে প্রত্যেকে প্রায় হাজার টাকাও আয় করে থাকেন।

সুদূর চট্টগ্রাম থেকে আসা ১০ জনের পর্যটক দলের প্রধান আফজাল হাবিব জানান, ইউটিউবে উজিরপুরের লাল শাপলার বিল দেখে তিনি স্বচক্ষে এ সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে মোটরসাইকেল নিয়ে এসেছেন তারা। তবে এ বিলের কাছাকাছি কোন আবাসিক হোটেল, উন্নতমানের রেস্তোরা কিংবা কোন বিশ্রামাগার না থাকায় বরিশাল শহরে হোটেলে উঠেছেন। মূলত খুব সকালে ফুটন্ত শাপলার যে মনোরম দৃশ্য তা উপভোগ করতে হলে সকাল ৬টার মধ্যে এখানে আসতে হয়। তাই তিনি ভোর ৫টায় বরিশাল থেকে এখানে এসেছেন। সাতলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ শাহিন হাওলাদার জানান, খুব শীঘ্রই এখানে পর্যটকদের জন্য বিশ্রামাগার ও ওয়াশরুম স্থাপন করা হবে। সাতলা বিলকে পর্যটনে রূপান্তরিত করতে পারলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি  হবে। তাছাড়া এ বিলকে কেন্দ্র করে বিশাল মৎস্য কেন্দ্র গড়ে উঠেছে এখানে বলেন তিনি।

উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারিহা তানজিন, এখানকার বিলে শাপলার সৌন্দর্য্য সর্বোচ্চ ৩ মাস থাকে। ফলে এটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত বা প্রস্তাবনা দেয়া যাচ্ছে না। উন্নয়ন কাজের মধ্যে রয়েছে রেস্টহাউজ নির্মাণ ও বিলের মধ্যে ডেক নির্মাণ। যেখান থেকে সমগ্র বিলের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে পারবেন পর্যটকরা।

সংবাদটি শেয়ার করুন