ঢাকা | শুক্রবার
২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১২ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জলবায়ুর থাবায় বিপর্যস্ত কৃষি

জলবায়ুর থাবায় বিপর্যস্ত কৃষি

বাড়ছে খরচ, কমছে উৎপাদন

  • বদলাতে হবে সনাতনী ধারা
  • জলবায়ু সহিষ্ণু কৃষি জরুরি

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দেখা দিয়েছে নানা ধরনের সংকট। অতিরিক্ত তাপমাত্রা,খরা, দাবানল ইত্যাদির ফলে তীব্র সংকটে পড়েছে মানুষ। যার প্রভাব সামাজিক, অর্থনৈতিকসহ সকল ক্ষেত্রে পড়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে কৃষিখাতে। এ খাতে কমে এসেছে উৎপাদন, বেড়েছে খরচ। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা পরিষদ (বিএআরকে) বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব, মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধি, সেচের পানির অভাবসহ বিভিন্ন প্রতিকূলতা বাড়তে থাকলে ২০৩০ সাল নাগাদ চাহিদার তুলনায় ৩৬ লাখ টন চালের উৎপাদন কম হবে। সে হিসেবে কৃষির অন্যান্য খাতগুলোর উৎপাদনেও পড়বে ব্যাপক প্রভাব।

গবেষণা পরিষদ বলছে, ২০২১ সালে চালের চাহিদা ছিল ৩ দশমিক ৫২ কোটি টন, যার বিপরীতে স্থানীয়ভাবে সরবরাহ পাওয়ার কথা ছিল ৩ দশমিক ৫৬ কোটি টন। কিন্তু সেখানে বন্যা সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সরবরাহ ছিল ৩ দশমিক ৪৫ কোটি টন। সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা পরিষদ (বিএআরকে) আয়োজিত এক গবেষণা প্রতিবেদনের ফলাফলে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০৩০ ও ২০৫০ সালে চালের চাহিদা তৈরি হবে যথাক্রমে ৩ দশমিক ৯১ কোটি ও ৪ দশমিক ২৬ কোটি টন। ‘ক্রপ কাটিং এরর’ বিবেচনায় নিয়ে উৎপাদন দাঁড়াবে ৪ দশমিক ১০ কোটি ও ৫ দশমিক ২১ কোটি টনে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব যা শুরু হয়েছে তা চলতে থাকলে এই উৎপাদন যথাক্রমে ৩ দশমিক ৫৪ কোটি এবং ৪ দশমিক ৬ কোটি টনে নেমে আসবে। অর্থাৎ ২০৩০ সালে প্রায় ৩৬ লাখ টন এবং ২০৫০ সালে ১৯ লাখ টন চালের সরবরাহ ঘাটতি তৈরি হবে। 

২০২১ সালে চালের চাহিদার বিপরীতে স্থানীয়ভাবে সরবরাহ পাওয়ার কথা ছিল ৩ দশমিক ৫৬ কোটি টন। কিন্তু সেখানে বন্যা সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সরবরাহ ছিল ৩ দশমিক ৪৫ কোটি টন। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, চাহিদার তুলনায় উৎপাদন ঘাটতির কারণে ২০২০-২১ অর্থবছরে সাড়ে ১৩ লাখ টন চাল আমদানি করতে হয়েছে।

কৃষিমন্ত্রী ড. মো আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ৪০ বছরের মধ্যে এবারে সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। যে কারণে আমনের উৎপাদন সিরিয়াস ট্রাবলের মধ্যে পড়েছে। তেলের দাম বৃদ্ধি ও লোডশেডিংয়ের কারণে সেচ পাম্প দিয়েও সেচকাজে সুবিধা করা যাচ্ছে না।

গবেষণায় দানাদার ফসল, ডাল, মশলা, তেলবীজ, সবজি, ফল সহ মোট ৩৫টি শস্যের ২০৩০ ও ২০৫০ সালে অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও সরবরাহ কেমন হবে সেটা তুলে ধরা হয়েছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে শুধু চাল থেকে মাথাপিছু ক্যালরি গ্রহণের হার ছিল ৮০ দশমিক ৪ শতাংশ, যা ২০২১ এ কমে ৭০ দশমিক ৫ শতাংশে নেমেছে। এটা ২০৩০ ও ২০৫০ এ যথাক্রমে ৭২ দশমিক ৬ ও ৭০ দশমিক ৪ শতাংশে আসবে।

গম থেকে বর্তমানে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ ক্যালরি ইনটেকের তথ্য তুলে ধরে বলা হয়েছে ২০৩০ ও ২০৫০ সালে এটা ৬ দশমিক ৭ ও ৬ দশমিক ৮ শতাংশে দাঁড়াবে। যে কারণে গমের চাহিদাও বাড়বে। দেশে বর্তমানে ৭০ লাখ টনের বেশি গমের চাহিদা রয়েছে। একইভাবে ২০২১ সালে ৫৭ লাখ টন ভুট্টার চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ ছিল ৪২ লাখ টন। ২০৩০ ও ২০৫০ সালে এই চাহিদা গিয়ে দাঁড়াবে ৫৮ ও ৮৭ লাখ টনে।

গবেষণার ফলাফলে বলা হয়েছে, আলোচিত সময়ে সরিষার তেলের চাহিদা ধীরে ধীরে বাড়লেও তা নিজস্ব উৎপাদন দিয়ে পূরণ করা যাবে না। মশলার মধ্যে এই সময়ে শুধু পেঁয়াজে উৎপাদন সারপ্লাস হলেও আদা, রসুন, মরিচ, হলুদে চাহিদার তুলনায় উৎপাদনে ঘাটতি থেকেই যাবে। একই অবস্থা থাকবে ডালজাতীয় ফসলে। তবে সবজির উৎপাদন চাহিদার তুলনায় বেশি থাকবে এবং ফলের উৎপাদন বাড়লেও চাহিদার সবটা পূরণ করা সম্ভব হবে না।

গবেষণায় কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। বিভিন্ন ফসলের উৎপাদন ঘাটতি পূরণ করতে উন্নত জাতের বীজের ব্যবহার বৃদ্ধি, জলবায়ু সহনশীল প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও ব্যবহার, ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সবসময় ১-২ মিলিয়ন টন চালের মজুদ রাখা, উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যনমূল্য নিশ্চিত করা, কৃষি প্রযুক্তি উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও বাজার ব্যবস্থার আধুনিকায়নে গুরুত্ব দেওয়ার পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন