ঢাকা | শুক্রবার
২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১২ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ট্রেনে ভয় পাথর নিক্ষেপ

ট্রেনে ভয় পাথর নিক্ষেপ

তেলবাহী ট্যাংকার ট্রেনের চালক মনোয়ার হোসেন সিলেট থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার উদ্দেশ্যে যাওয়ার পথে কুমিল্লার ময়নামতি রেল স্টেশন এলাকায় পৌঁছেন। এমন সময় হঠাৎ করেই একটি পাথর এসে লাগে তার গায়ে। এতে তিনি আহত হন। চলতি বছর ৬ এপ্রিল এ ঘটনা ঘটে। এমন ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটছে। সাধারণ যাত্রীদের পাশাপাশি রেলেও কর্মকর্তা, পুলিশ রেলওয়ে নিরাপত্তাকর্মীরা রেহাই পাচ্ছেন না পাথর নিক্ষেপ থেকে।

২০২১ সালের বছরের ১৫ আগস্ট নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলায় চলন্ত ট্রেনে ছোড়ার একটি ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় পাঁচ বছর বয়সী শিশু আজমির ইসলামের একটি চোখ নষ্ট হয়ে যায়। ২০১৩ সালে চট্টগ্রামে ভাটিয়ারী এলাকায় চলন্ত ট্রেনে দুর্বৃত্তের ছোঁড়া পাথরের আঘাতে নিহত হন প্রকৌশলী প্রীতি দাশ (২৪)।

হতাহত ও ট্রেনের জানালা ভাঙার এমন অসংখ্য ঘটনা। চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ করে পালিয়ে যায় বিপথগামী শিশু ও কিশোর গ্যাং, দুর্বৃত্ত, বখাটেরা। বিকৃত আনন্দ পেতে এ সব ঘটনা ঘটিয়ে থাকেন তারা। কিন্তু এ কাজে প্রাণহানীর মতো ঘটনাও ঘটছে। নষ্ট হয় সরকারের মূল্যবান সম্পদও।

২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত রেল গাড়ি লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে ৭৪টি। ওই সব ঘটনায় ১৯ জন যাত্রী ও রেলের কর্মচারী আহত হয়েছেন। যার মধ্যে শিশু আছে এক জন। রেলের কর্মচারী আছেন ৬ জন। অন্যরা সবাই যাত্রী।

২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত চলন্ত রেলে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে ৮২টি। ওই সব ঘটনায় আহত হয়েছেন ২১ জন। তাদের মধ্যে রেলের কর্মচারী ৫ জন। অন্যরা সবাই যাত্রী। এসব পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় চলন্ত রেলেই প্রচুর ক্ষতি হয়। বিশেষ করে লুকিং গ্লাস ও জানালা ভেঙে যায়।

বাংলাদেশ রেলওয়ে ‘ট্রেনে পাথর ছোঁড়া হতে বিরত থাকুন, ভ্রমনরত স্বজনদের নিরাপদ রাখুন।’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে নানান প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। রেলওয়ে আইনের ১২৭ ধারা অনুযায়ী, ট্রেনে পাথর ছোড়া হলে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান আছে। ৩০২ ধারা অনুযায়ী, পাথর নিক্ষেপে কারও মৃত্যু হলে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। যদিও এসব আইন সম্পর্কে অনেকেই অজানা। অপরাধিদের শাস্তির বিষয়ে এই আইনগুলোর প্রয়োগও দেখা যায় না।

ইতোমধ্যে পাথর নিক্ষেপপ্রবণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। পশ্চিমাঞ্চলের ১০টি জেলার ১৫টি এলাকা পাথর নিক্ষেপপ্রবণ এলাকা। এসব এলাকা হলো, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলার কিসমত-রুহিয়া, পাবনার ভাঙ্গুরা রেলওয়ে স্টেশন, বগুড়ার ভেলুরপাড়া রেলওয়ে স্টেশন, গাইবান্ধার বামনডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশন, জয়পুরহাটের আক্কেলপুর রেলওয়ে স্টেশন, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া রেলওয়ে স্টেশন, সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী রেলওয়ে স্টেশন, বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম রেলওয়ে স্টেশন, সলপ রেলওয়ে স্টেশন, জামতৈল রেলওয়ে স্টেশন, চুয়াডাঙ্গার চুয়াডাঙ্গা আউটার, নাটোরের আব্দুলপুর রেলওয়ে স্টেশন, পাবনার মুলাডুলি রেলওয়ে স্টেশন, পাবনার বড়ালব্রিজ রেলওয়ে স্টেশন এবং খুলনার ফুলতালা রেলওয়ে স্টেশন এলাকা।

বাংলাদেশ রেলওয়ের ডেপুটি অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট (পশ্চিম) হাসিনা খাতুন জানান, প্রতিনিয়ত পাথর নিক্ষেপপ্রবণ এলাকা সনাক্ত করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন, মসজিদের ঈমাম ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তাছাড়া পাথর নিক্ষেপ প্রতিরোধে জনসচেতনতা তৈরিতে উদ্বুদ্ধকরণের পাশাপাশি পাথর নিক্ষেপ বিরোধী স্লোগান সম্বলিত লিফলেটও বিতরণ করা হচ্ছে।

হাসিনা খাতুন আরো বলেন, রেলে পাথর নিক্ষেপ করা একটি জঘন্য কাজ। এমন কাজে মানুষের প্রাণও যেতে পারে। পাশাপাশি সরকারের কোটি কোটি টাকার অর্থ নষ্ট হয়। যারা এধরনের কাজ করে তাদের এমন কাজ করা থেকে বিরত রাখতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

পশ্চিম রেলের মহা ব্যবস্থাপক (জিএম) অসীম কুমার তালুকদার বলেন, পাথর নিক্ষেপ বন্ধে রেলওয়ে নানান ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। লিফলেট দিয়ে এবং পাথর নিক্ষেপের স্পট চিহ্নিত করে প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করে ওই সব এলাকায় দেখানো হয় প্রায়। মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে।

জিএম অসীম কুমার তালুকদার আরো বলেন, এ ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও দেশের জন্য ক্ষতিকর। এ অপরাধ রোধে সমাজের পাশাপাশি পরিবারেরও সচেতনতা বাড়াতে হবে। তাই পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণে চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা রোধ পরিবার, প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধি, সাধারণ মানুষসহ সবাইকে এগিয়ে আসবে হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন