প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ দিয়ে রাবনাবাদ নদীর জোয়ারের পানি ঢুকে গ্রামের পর গ্রাম পানিতে ডুবে যায়। এসময় ডুবে যায় বসত ঘর, রান্নার চুলা, গোয়াল ঘর, স্কুল, মসজিদ, সড়ক। আবার নদীতে ভাটা এলে ভেসে ওঠে সবকিছু। এছাড়া ঝড়-জ¦লোচ্ছাসে খরস্রোতা রাবনাবাদ নদীতে ভেসে যায় নদী পাড়ের মানুষের স্বপ্ন। এমন দৃশ্য পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া, ধানখালী ও চম্পাপুর ইউনিয়নের রাবনাবাদ নদী পাড়ের গ্রামগুলোর।
উপজেলার রাবনাবাদ নদী পাড়ের বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ কোথাও কোথাও মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। এতে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে অনেকের বসতঘর ভেসে গেছে। ছেলে-মেয়ে নিয়ে অনেক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে অন্যের জায়গায় কিংবা বেড়িবাঁধের ওপর। ধানখালী ও চাম্পপুর ইউনিয়নের দেবপুর ও নিশানবাড়িয়া এলাকায় এমন দৃশ্য দেখা গেছে। মানুষ এখন বসবাসের অবস্থাও হারিয়ে ফেলছে।
গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি পালন তো দূরের কথা, কৃষিকাজ করা দুস্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখনও এসব গ্রামের কৃষকরা বীজতলা করতে পারেনি। ছেলে মেয়েদের স্কুল, মাদ্রাসায় যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। অমাবস্যা-পূর্ণিমা এলেই জোয়ারের পানিতে ভাসতে থাকে ওইসব গ্রামের মানুষ। অথচ পানি উন্নয়ন বোর্ড সেখানে নতুন করে বাঁধ নির্মাণ কিংবা পুরনো বেড়িবাঁধ মেরামত করছে না, পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ ভূমি অধিগ্রহণ করায়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে কৃষক, এমনটাই জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
রাবনাবাদ নদী পাড়ের চর চান্দুপাড়া গ্রামের গৃহবধু রওশনারা বেগম বলেন, জোয়ারের সময় পানিতে বসতবাড়ি তলাইয়া যায়। এসময় ঘরে থাকা তো দুরেরকথা চুলাও জ্বালানো দায়। দেবপুর গ্রামের সত্তরোর্ধ বৃদ্ধ মো. বজলু হাওলাদার বলেন, গত জোয়ারের পানিতে ঘরের মালামাল ভাসাইয়া লইয়া গ্যাছে। আমি বুড়া মানু, দিন রাইত চহির উপর উইড্ডা বইয়া থাহি। কবে যে বানডা ঠিক অইবে। কইতে পারিনা।
একই গ্রামের শাহিনুর বেগম বলেন, জোয়ারের পানি বাড়লেই বাড়ি-ঘর ডুইব্যা যায়, ভাডার সময় হুগায়। ধানখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রিয়াজ তালুকদার জানান, দেবপুরের বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত থাকায় নিশানবাড়িয়া, পাঁচজুনিয়া, লোন্দা গ্রাম জোয়ারের পানিতে ভাসে। ভাটার সময় পানি কমে গেলেও ফের জোয়ারের সময় ডুবে থাকে। এ তিন গ্রামের কৃষকের চাষাবাদ তো দূরের কথা, তাদের দূর্ভোগের সীমা নাই।
লালুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শওকত হোসেন তপন বিশ্বাস জানান, রাবনাবাদ নদী পাড়ের দীর্ঘ ছয় কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত রয়েছে। মানুষের বাড়িঘর অস্বাভাবিক জোয়ারে প্লাবিত হচ্ছে।
ভুক্তভোগীরা জানায়, দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের হাতে ১০-২০টি শুকনো খাবার কিংবা রান্না করা খিঁচুড়ি পলিথিনে করে দিয়ে ছবি তুলে ফেসবুকে পোষ্ট দিচ্ছেন কেউ কেউ। এছাড়া পাউবো কর্তৃপক্ষ সহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে গণমাধ্যমের শিরোনাম হলেও ভাঙ্গা বেড়িবাঁধে আটকে গেছে রাবনাবাদ নদী পাড়ের মানুষের দুঃখ, কষ্ট গাঁথা। ঠিক যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা বিধ্বস্ত গ্রাম ও নিরন্ন মানুষের প্রতিচ্ছবি।