- সংসদীয় কমিটিকে বললো মন্ত্রণালয়
- বিশ্ববাজারে কমেছে ৪ দফায়, দেশে প্রভাব নেই
বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়ার কারণে গত ৬ আগস্ট হঠাৎ করেই বাড়ানো হয় তেলের দাম। তখন বলা হয়েছিল বিশ্ববাজারে দাম কমলে দেশেও সমন্বয় করা হবে। এ পর্যন্ত বিশ্ববাজারে প্রায় ৪ দফায় দাম কমেছে। তবে দেশে এখনও সমন্বয় হয়নি। এ নিয়ে ভোক্তা অধিকারও কয়েক দফা কথা বলেছে। গতকাল মঙ্গলবার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিষয়ক সংসদীয় কমিটির বৈঠকে শিগগির দাম সমন্বয়ের কথা জানানো হয়েছে।
গত ৬ আগস্ট প্রতি লিটার ডিজেল ৮০ টাকা থেকে ৩৪ টাকা বেড়ে ১১৪ টাকা, কেরোসিন ৩৪ টাকা বেড়ে ১১৪ টাকা, অকটেন ৪৬ টাকা বেড়ে ১৩৫ টাকা এবং পেট্রোল ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩০ টাকা করা হয়। সেদিন রাত ১০টায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাম বাড়ানোর কথা বলা হয়। এর আগে ২০২১ সালের ৪ নভেম্বর ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ানো হয়। সেই সময় এই দুই জ্বালানির দাম লিটারপ্রতি ৬৫ টাকা থেকে ১৫ টাকা বাড়িয়ে ৮০ টাকা করা হয়।
দাম বাড়ানোর সময় বলা হয়েছিল বিশ্ববাজারে দাম কমলে দেশেও সমন্বয় করা হবে। বিশ্ববাজারে গত ১৫ আগস্ট ব্রেন্ট ক্রুড ফিউচার্সের দাম কমেছে ৩ ডলার ৪৯ সেন্ট বা ৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ। প্রতি ব্যারেল বিক্রি হয় ৯৪ ডলার ৬৬ সেন্টে। গত শুক্রবার এ তেলের মূল্য ১ দশমিক ৫ শতাংশ নিম্নমুখী হয়। ইউএস ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট ক্রুডের দর পড়েছে ৩ ডলার ৩২ সেন্ট বা ৩ দশমিক ৬১ শতাংশ। প্রতি ব্যারেল এ তেল বিক্রি হয় ৮৮ ডলার ৭৭ সেন্টে। এর আগে এ তেলের মূল্য হ্রাস পায় ২ দশমিক ৪ শতাংশ।
এর আগে ১০ আগস্ট বিশ্ববাজারে জ্বালানি পণ্যটির দাম কমেছে। এদিন ব্রেন্ট ক্রুড ফিউচার্সের মূল্য হ্রাস পেয়েছে ৭৪ সেন্ট বা শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ। প্রতি ব্যারেল এ তেল বিক্রি হয়েছে ৯৫ দশমিক ৫৭ ডলারে। ইউএস ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট ক্রুড ফিউচার্সের দর কমেছে ১ দশমিক ১৩ ডলার। প্রতি ব্যারেল এ তেল বিক্রি হচ্ছে ৮৯ দশমিক ৩৭ ডলারে। তারও আগে ৪ ও ৫ আগস্ট আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমেছে।
গত ৮ আগস্ট ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৭৪ সেন্ট বা শূন্য দশমিক আট শতাংশ কমে ৯৪ দশমিক ১৮ ডলারে নামেছে, যা ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহের পর সর্বনিম্ন। তা ছাড়া সাপ্তাহিকভিত্তিতে ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ কমে ২০২০ সালের এপ্রিলের পর সর্বনিম্ন হয়।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটিকে এ তথ্য জানানো হয়। সংসদীয় কমিটির সভাপতি আ স ম ফিরোজের সভাপতিত্বে কমিটি সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান, ওমর ফারুক চৌধুরী, মো. মাহবুব-উল আলম হানিফ এবং মো. জিল্লুল হাকিম বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠকে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) নিয়েও আলোচনা হয়। বৈঠকে কমিটির পক্ষ থেকে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাওয়া হয়। জবাবে বৈশ্বিক মূল্য বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে পার্শ্ববর্তী দেশের সাথে সমন্বয় করতে এ দাম বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে কমিটির সভাপতি আ স ম ফিরোজ বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে। আমরা দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চেয়েছি। মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেছেন পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে সমন্বয় করে তারা দাম বাড়িয়েছে। না হলে তেল এদিক–সেদিক হওয়ার আশঙ্কা ছিল। দ্রুততম সময়ের মধ্যে মূল্য সমন্বয় করে দেওয়া হবে বলে মন্ত্রণালয় আমাদের জানিয়েছে।
রাশিয়া থেকে সরকারি পর্যায়ে জ্বালানি তেল আমদানির চিন্তা করা হচ্ছে উল্লেখ করে কমিটির সভাপতি জানিয়েছেন, মন্ত্রণালয় রাশিয়া থেকে তেল আমদানির বিষয়ে আলোচনা চলছে। বেসরকারি পর্যায়ে কিছু প্রস্তাব এসেছে। তবে সরকার চাচ্ছে জিটুজি পদ্ধতিতে আমদানি করতে। মন্ত্রণালয় আমদানির বিষয়ে ইতিবাচক অবস্থানে রয়েছে। রাশিয়ার ক্রুড অয়েল রিফাইন করার প্রযুক্তি আমাদের নেই। এ কারণে রাশিয়া থেকে রিফাইন অয়েল আমদানি করা হবে বলে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়- বৈঠকে বৈঠকে আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে দেশে জ্বালানি মূল্য সমন্বয় করার জন্য কমিটি কর্তৃক মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করা হয়।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) পরিশোধিত ও অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মজুদ সক্ষমতা বাড়ানোর নিমিত্ত দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং আপদকালীন সময়ে পর্যাপ্ত তহবিলের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাখার জন্য মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করা হয়।
বৈঠকে বিশ্বর বিভিন্ন উন্নত দেশের ন্যায় বাংলাদেশে জ্বালানি তেল অপারেশনে অটোমেশন পদ্ধতি দ্রুত চালু করার সুপারিশ করা হয়। এছাড়া, কমিটি প্রাতিষ্ঠানিক প্রভিশনাল ও চুড়ান্ত হিসাব যথা সময়ে প্রণয়নপূর্বক বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপনের জন্য মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করে।