দুঃখজনক হলেও সত্য, ডিসি অফিসে সাধারণ মানুষ প্রবেশ করতে পারেন না। সাধারণ মানুষ তাদের সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলার সুযোগ পান না। আপনাদের অফিসের দরজা জানালা মোটা পর্দায় আবৃত থাকে। যার কারণে মানুষ আপনাদের ছবি পর্যন্ত দেখতে পায় না বলে বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি কে এম রবিউল হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. সাইদুল ইসলামকে কঠোরভাবে সতর্ক করেন।
গতকাল সোমবার আদালত অবমাননার মামলায় তাকে উদ্দেশ্য করে বিচারকদ্বয় বলেন, আমাদের অভিজ্ঞতায় জানি আপনারা কী ধরনের জীবন-যাপনে অভ্যস্ত; চাকচিক্যময় জীবন-যাপন করেন। কীভাবে ক্ষমতার প্রয়োগ করে থাকেন সেটাও জানি। হাইকোর্ট বলেন, আপনাকে সতর্ক করছি। এখন থেকে ডিসি অফিসের দরজা জানালা খোলা রাখবেন। যেন জনগণ আপনাদের চেহারা দেখতে পায়। আপনার দরজা-জানালায় ভারী পর্দা ব্যবহার করবেন না।
হাইকোর্ট বলেন, ডিসি হলো সরকারের হার্ট। আপনাকে জনগণের জন্য সেভাবে কাজ করতে হবে। অথচ ডিসি অফিসে সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার নেই। একটা দরখাস্ত পর্যন্ত রিসিভ করেন না। এখন থেকে কোনো ধরনের উন্নাসিক আচরণ করবেন না। নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভালো কাজ করলে দেশ ও জনগণ উপকৃত হবে। আদালত প্রশ্ন রেখে বলেন, কোথাও চুরি ডাকাতি হচ্ছে, সরকারি সম্পত্তি দখল হয়ে যাচ্ছে, অভিযোগ না পেলে কি আপনি বসে থাকবেন? বসে থাকার সুযোগ নাই।
পরে আদালত কুষ্টিয়ার ডিসি মো. সাইদুল ইসলামকে আদালত অবমাননার মামলায় ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেন। একইসঙ্গে আদালত অবমাননার ঘটনায় রুলের শুনানির জন্য আগামী ২৪ অক্টোবর দিন ধার্য করেন। ওইদিন কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার, ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি ও নিলাম করা সম্পত্তি গ্রহণকারী ব্যবসায়ীকে আদালতে হাজির থাকতে হবে।
করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় কুষ্টিয়ার সদর থানার ওসি মো. সাব্বিরুল আলমকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আদালতে ডিসি ও এসপির পক্ষে আইনজীবী মুন্সী মনিরুজ্জামান ও ইউসুফ খান এবং ব্র্যাক ব্যাংকের এমডির পক্ষে সৈয়দ মিনহাজুল হক এবং ব্যবসায়ী শফিকুলের পক্ষে রাগীব রউফ চৌধুরী শুনানি করেন।
গত ১১ আগস্ট আদালতের স্থগিতাদেশ থাকার পরও ১২৩ কোটি টাকার সম্পত্তি ১৫ কোটি টাকায় নিলামে বিক্রি করার ঘটনায় ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম আর এফ হোসাইন, কুষ্টিয়ার ডিসি মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম, এসপি মো. খায়রুল আলম, সদর থানার ওসি মো. সাব্বিরুল আলম ও নিলামে সম্পত্তি নেওয়া ব্যবসায়ী আব্দুল রশিদকে তলব করেন হাইকোর্ট।