ঢাকা | মঙ্গলবার
৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অ্যান্টিবডি ছয় মাসে কমে অর্ধেক

অ্যান্টিবডি ছয় মাসে কমে অর্ধেক

করোনা টিকার বুস্টার ডোজ গ্রহণের ছয় মাস পর শরীরের অ্যান্টিবডি কমে আসে। অ্যান্টিবডি শতভাগ টিকা গ্রহীতার শরীরে পাওয়া গেলেও তা কমে গড়ে ১০৬৭৫ দশমিক ৭ এইউ/এমএলে নেমে আসে। বঙ্গন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে। গতকাল সোমবার গবেষণার এ ফলাফল প্রকাশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।

শহীদ মিল্টন হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, টিকাদান এর উদ্দেশ্য হচ্ছে মানবদেহের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে শক্তিশালী করা। টিকা গ্রহীতার দেহে এন্টিবডি তৈরি হয় এবং কোভিড-১৯ আক্রান্ত হবার এবং আক্রান্ত হলে রোগের তীব্রতার সম্ভাবনা সাধারণত কমে যায়। এ প্রেক্ষিতে অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমাটোলজি বিভাগে এই গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে। এ গবেষণায় বুস্টার ডোজ গ্রহণের ৬ মাস পর শরীরে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে তৈরি এন্টিবডি এর মাত্রা পরিমাপ করা হয়।

শারফুদ্দিন আহমেদ জানান, গত এক মাস ১ম ও ২য় ডোজ করোনার টিকা গ্রহণকারী ২২৩ জনের ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় ৯৮ শতাংশের শরীরে অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে। তবে ৬ মাস পর অ্যান্টিবডি কমতে থাকে। তাদের মাধ্যে ৭৩ শতাংশের অ্যান্টিবডির মাত্রা ৬ হাজার ৭৯২ এইউ/এমএল থেকে ৩ হাজার ৯৬৩ এইউ/এমএল পর্যন্ত নেমে এসেছে। এ সময় ২ জনের শরীরে কোনো অ্যান্টিবডি পাওয়া যায়নি। বুস্টার ডোজ গ্রহীতাদের শরীরে অ্যান্টিবডি আবারও বৃদ্ধি পেয়েছে।

বিএসএমএমইউর উপাচার্য জানান, বুস্টার ডোজ নেওয়ার পর এতে অ্যান্টিবডির মাত্রা ২০ হাজার ৮৭৮ এইউ/এমএল পর্যন্ত উঠে এসেছে। তবে ৬ মাস পরে তা কমে ১০ হাজার ৬৭৫ দশমিক ৭ এইউ/এমএল পর্যন্ত নেমে এসেছে। যাদের করোনা আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস রয়েছে তাদের মধ্যে অ্যান্টিবডির মাত্রা বেশি। তাদের রক্তে হিমোগ্লোবিন ও প্লাটিলেটসহ অন্যান্যতে উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি।

শারফুদ্দিন আহমেদ আরো জানান, টিকার বুস্টার ডোজ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা, কার্যকারিতা এবং সময়ের সাথে এন্টিবডি কমে যাবার প্রমাণ এ গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যে পাওয়া যায়। যারা বয়স্ক বা দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অধিকারী তাদের ক্ষেত্রে এবং সাধারণ জনগণের ক্ষেত্রে পুনরায় ডোজ নেবার প্রয়োজন আছে কিনা তা সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষেত্রে এই ফলাফল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তবে কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য বিধির যথাযথ অনুসরণের কোন বিকল্প নেই।

বুস্টার ডোজের পরও চতুর্থ ডোজ বা দ্বিতীয় বুস্টার ডোজ প্রয়োজন কি না তা নিরূপণে এ গবেষণা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন গবেষণা দলের প্রধান ও হেমাটোলজি বিভাগের সভাপতি অ্যধাপক ডা. সালাহউদ্দিন শাহ। এসময় উপস্থিত ছিলেন- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদ হোসেন, উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, ডেন্টাল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী আসগর মোড়ল, সার্জারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন, বেসিক সাইন্স অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. শিরিন তরফদার, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল, গ্রন্থাগারিক অধ্যাপক ডা. মো. হারিসুল হক, হেমাটোলোজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. সালাহউদ্দীনসহ আরও অনেকে।

কোভিড-১৯ অভিমানীতে বিশ্বব্যাপী এ পর্যন্ত ৬০ কোটির বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। এ পর্যন্ত ৬৪ লাখের বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ২০ লাখের বেশি কোভিড-১৯ কেইস শনাক্ত করা হয়েছে এবং এই রোগে ২৯ হাজারের বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন। কোভিড-১৯ বিপর্যয় প্রতিরোধের লক্ষ্যে সারা বিশ্বব্যাপী টিকাদান কার্যক্রম চলমান আছে। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত প্রায় ১৩ কোটি টাকার প্রথম ডোজ এবং ১২ কোটিরও বেশি দ্বিতীয় ডোজ এবং ৪ কোটিরও বেশি মানুষ বুস্টার ডোজ নিয়েছেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন