ফুলের রাজ্যে অর্কিড অন্যতম। অর্কিড তার সৌন্দর্য, অপূর্ব, রং সুবাসে যেমন আকর্ষণীয় তেমনি বিচিত্র এর ব্যবহার। অর্কিড পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাইতো পাহাড়ে ছোট-বড় অর্কিড চাষ হচ্ছে এখন। আবার কেউ শখ করে বাড়ির আঙিনায় চাষ করছেন। দেশে ১৭৮ প্রজাতির অর্কিড রয়েছে যেগুলো বিভিন্ন উচ্চতায় জন্মায়।
শহরের রাজ্যমুনিপাড়া, নয়নপুর এলাকার অর্কিড বাগান ঘুরে দেখা যায়, নারকেলের খোসা, টবে, কাঠে যে যেভাবে পারছে লালন-পালন করছেন অর্কিড প্রেমীরা। প্রতিদিনই অর্কিড প্রেমীরা বাগানটি দেখতে ভিড় জমায়। খন্ডখন্ড জায়গায় ফুল ফোটে আছে। বাগান ঘুরা শেষে হলে পছন্দ করে সঙ্গে চারা নিযে যান।
তিন পার্বত্য জেলায় যেসব অর্কিড পাওয়া যায়, খাগড়াছড়িতে সিম্বিডিয়াম, পিয়েরাড্ডি, ডেন পারিশি, বাল্বোফাইলোম, এরাইডিস, ওডোরাটা, একেম্পে, ও ফক্সটেইল প্রজাতির অর্কিড হয়ে থাকে।
রাঙামাতিতে দেখা মিলে ফার্মেরী, ফরমোসাম, লিন্ডলে, ফিম্ব্রিয়াথাম ও টরটাইল প্রজাতি। এদিকে বান্দরবানে এরাইডিস মাল্টিফ্লোরা, ডেন ফিম্ব্রিযাথাম, ডেন্সিফ্লোরাম, অরুন্ধিনা ক্রিপিডেটামমত প্রজাতির অর্কিড দেখা যায়। চাবাই সড়কের মাধুরী মারমা বলেন, যত্নে রাখা গাছে যখন অর্কিড ফুল ফুটে তখন মনের আনন্দটায় বেশি ফুটে উঠে। অর্কিড ফুল আনন্দিত। কাজ না থাকলে অর্কিড নিয়ে সময় পার করি।
শহরের রাজ্যমুনি পাড়ার অর্কিড সংরক্ষণের জন্য কাজ করছেন সাথোয়াই মারমার। তাঁরা সংগ্রহে বিলুপ্ত প্রায় ষাট প্রজাতির অর্কিড রয়েছে। তিনি বলেন, প্রায় পঞ্চাশ হাজারের মতো অর্কিড রয়েছে। সব বাড়ির আশেপাশে, বারান্দা, বিভিন্ন গাছে লাগিয়েছি। পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চল থেকে কেটে ফেলা গাছগুলো থেকে অর্কিড সংগ্রহ করি। অর্কিডের কান্ডের ভেষজ গুণাগুন টিস্যু কালচারের মাধ্যমে অর্কিড বৃদ্ধি করে বেকারের কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। ভবিষৎ একটা অর্কিড জার্মপ্লাজম সেন্টার করার চিন্তা আছে। দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে বিভিন্ন প্রজাতির অর্কিডের কারেক্টররাইজেশন, প্রপাগেশন নিয়ে গবেষণা করছি। তাছাড়া জঙল থেকে অর্কিড সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করছে অনেকে। এ রকম হলে পাহাড়ে আর অর্কিড দেখা যাবে না। তিনি বলেন, হিল অর্কিড সোসাইটি নামের একটি সংগঠন আছে। অনলাইন ভিত্তিক সচেতনতা মূলক কার্যক্রম করি।
শহরের মিলনপুর এলাকার সাতশ চারা দিয়ে অর্কিড বাগান গড়ে তুলেছেন অংক্যছেন মারমা। তিনি বলেন, পাঁচ বছর ধরে সাতশ চারা দিয়ে অর্কিড ফুলের চাষ করছি। আমার দেশি বিশ প্রজাতির অর্কিড রয়েছে। ফেব্রুয়ারি থেকে ফুলে ফোটে। ফুল দীর্ঘস্থায়ী হয়। প্রচুর দামে বিক্রি হয়। অনেকে বাগান দেখতে আসে। ঘুরে যায়। ছবি তোলে। দেশিয় গাছ সহজেই চারা বংশবিস্তার করা যায়। তিনি বলেন, পাহাড়ের ভেতর অনেক বড় গাছ কেটে ফেলে। বড় গাছে অর্কিড জন্মায়। ওইখান থেকে সংগ্রহ করি। সংগ্রহ না করলে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। আমাদের গাছ কাটা বন্ধ করা প্রয়োজন।
অংক্যছেন মারমা বলেন, অনেকে বাগান করেন কিন্তু ফুল ফোটাতে পারে না। কারিগরি কিছু পরার্মশ দিয়। কোন জাতটা রোদে রাখতে হয় আবার কোন জাতটা ছায়ায় রাখতে হয়। কিভাবে চারা রোপণ করতে হয়। অনেকে চারা নিয়ে যায়। পাহাড়ে কোন ভ্রমণে গেলে চোখে পড়লে সংগ্রহ করি।
হর্টিকালচার সেন্টারের উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা জানান, ঘরের বারান্দায় অথবা নেট দিয়ে লালন-পালন করতে হয়। অর্কিডের ঘোড়া চারা গজাই। অথবা ব্রিজ থেকে চারা করা হয়। তখন আলাদা করে নারকেলের খোসায় ও টবে লাগানে হয়। গাছে পানি স্প্রে করতে হয়। উদ্ভিদের সাধারণ পুষ্টি আছে। অর্কিড মেইন খাবার পাই মূলত বাতাস থেকে। নাইট্রোজেন টেনে বেঁচে থাকে মূলত। বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে অর্কিড বাগান গড়তে হলে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে। তার বাণিজ্যিক লাইনে যাবে যুকরা। চারা উৎপাদন করতে হবে। ভালো ভাবে পরিচর্যা করতে হবে।
খাগড়াছড়ির সৌখিন ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার সবুজ চাকমা বলেন, পাহাড়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে অর্কিড ফুল। আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রচুর বন-জঙ্গল ছিল। এখন বনভূমি কমে যাওয়াতে দেশীয় অর্কিড আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। ফেসবুকের মাধ্যমে দেখা যায় কিছু দেশীয় অর্কিড বিক্রি করছে। পরিবেশের জন্য ভারসাম্য খুবই হুমকি।
খেজুরবাগান হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-সহকারী কর্মকর্তা সুজন চাকমা বলেন, অর্কিড ফুল সৌখিন মানুষদের নান্দনিক উদ্ভিদ। অকির্রেড দাম বেশি। অর্কিড অনেক প্রজাতির আছে। পার্বত্য অঞ্চলের বন-জঙ্গলে অনেক প্রজাতির অর্কিড দেখা যায়। স্থানীয়রা ওইসব স্থান থেকে সংগ্রহ করে চাষাবাদ ও শখে বাড়ির আঙিনায় সাজিয়ে রাখে। তিনি বলেন, থাইলেন্ডে বিরল প্রজাতির অর্কিড পাওয়া যায়।
তিনি বলেন, খাগড়াছড়িতে কয়েকটা অর্কিডের বাগান রয়েছে। এগুলো দেখে আমরা আগ্রহ দেখায় আবার অনেকে বাগান করতে চেষ্টা করছেন। আমাদের কাছে এসে পরার্মশ নিচ্ছে। আমরা সকল সহযোগিতা করি। হঠাৎ করে অর্কিড চাষারাদ করতে পারবে না। প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে। বাণিজ্যিকভাবে অর্কিড চাষ করে বেকারত্ব দূর করা সম্ভব।