শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রঙিন মাছে স্বপ্নপূরণ

রঙিন মাছে স্বপ্নপূরণ

বাণিজ্যিকভাবে রঙিন মাছ চাষ করে সফলতা পেয়েছেন বিশ্বজিৎ নামের এক যুবক। বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ অফিস আদালতের অ্যাকুউরিয়ামে যারা মাছ রাখেন তারা বিশ্বজিতের কাছ থেকে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। নিজ বাড়ির পাশে লিজ নেওয়া একটি পুকুরে এই মাছচাষ করছেন বিশ্বজিৎ।

বিশ্বজিৎ ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার মালিয়াট ইউনিয়নের পাঁচকাহুনিয়া গ্রামের শিবু মন্ডলের ছেলে। গত এক মাসে প্রায় ২০ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করেছেন। পুকুরে এখনো লক্ষাধিক টাকার মাছ রয়েছে। বেকার জীবনের অভিশাপ কাটিয়ে বিশ্বজিৎ এখন রঙিন মাছে নতুন স্বপ্ন দেখছেন।

বিশ্বজিৎ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স শেষ করে কর্মজীবন শুরু করেন একটি বেসরকারি কোম্পানিতে। সিলেটে কর্মরত অবস্থায় বিয়ে করেন। বিয়ের ২১ দিনের মাথায় ২০১২ সালে তার ব্রেইনস্ট্রোক হয়। এরপর শরীরের ডানপাশ অবস হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে চাকরি ছেড়ে বাড়িতে চলে আসেন। দু’বছর বিছানা ছেড়ে উঠতে পারেননি। তিনভাই এক বোনের সবার ছোট বিশ্বজিৎ।

ভাইদের সহযোগিতায় চলতে থাকে চিকিৎসা। এখনো পুরোপুরি সুস্থ হননি। কিছুটা সুস্থ হলে একটি টোং দোকান দেন। কিন্তু সেখান থেকে উপার্জন ভালো না হওয়ায় রঙিন মাছচাষ শুরু করেন। অল্প পুঁজিতে স্বল্প সময়ে কিছু একটা করার কথা ভাবছিলেন।

তিনি জানান, প্রথম দিকে বাড়িতে কয়েকটি ড্রামে এ মাছ চাষ শুরু করেন। সেখানে মাছ বড় হতে থাকে। কয়েক মাস পর বিক্রিও করেন। এরপর চলতি বছরের মে মাসে পুকুরে বিদেশি জাতের রঙিন মাছ চাষ শুরু করেন। মাছগুলো আকারে ছোট হলেও বেশ সতেজ ও বাহারি রঙের। পুকুরে ৬ থেকে ৭ প্রজাতির মাছ রয়েছে। মাছগুলোকে অনেকে অর্নামেন্ট ফিসও বলে থাকেন।

আরও পড়ুনঃ  ‘হামলাকারী যেই হোক, আইনের আওতায় আনা হবে’

বিশ্বজিৎ জানান, তার বাবা একজন কৃষক। মাঠে তাদের চার বিঘা চাষযোগ্য জমি নেই। তার আরো দুই ভাই ও এক বোন রয়েছে। অভাবের সংসার হলেও বাবা আমাদের লেখাপড়াা শেখাতে কার্পণ্য করেননি। আমি মাস্টার্স শেষ করেছি। চাকরিও শুরু করেছিলাম। কিন্তু স্ট্রোক আমার জীবনে ঘোর অন্ধকার নিয়ে আসে।

কিছুটা সুস্থ হলে চলতি বছরের মে মাসে যশোরের চৌগাাছায় মাছ ব্যবসায়ী সালমান সর্দারের কাছ থেকে গাপ্পি মলি, গোল্ডফিস, কমেন্ট, রেডটিকা, কইকাপ এবং প্লাটি জাতের মাছ কিনে আনি। এ পর্যন্ত পরিচর্যা ও মাছ ক্রয় বাবদ প্রায় ১৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেছি। এরমধ্যে মা মাছগুলো ডিম ছেড়ে রেনু পোনার জন্ম দিয়েছে। গত একমাসে প্রায় ২০ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করেছি। এখনও যে পরিমাণ মাছ রয়েছে তা কমপক্ষে এক লাখ টাকার হবে বলেও জানান এ উদ্যোক্তা।

মালিয়াট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমাান খা জানান, বিশ্বজিৎ লেখাপড়া শেষ করে চাকরি করছিল। বিয়েও করেছিল কিন্তু অসুস্থতার জন্য তার জীবনে অন্ধকার নেমে আসে। বর্তমানে রঙিন মাছ চাষ শুরু করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সৌখিন মানুষেরা যদি তার কাছ থেকে মাছ কেনেন তাহলে বিশ্বজিৎ বেঁচে থাকার লড়াইয়ে সফল হবে।

কালীগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. হাসান সাজ্জাদ জানান, শিক্ষিত বেকার যুবক বিশ্বজিৎ বাড়িতে একটি পুকুরে রঙিন মাছের চাষ করছেন। তার মাছচাষ পরিদর্শন করেছি। এলাকায় এ মাছচাষ অনেকটা নতুন হওয়ায় মৎস্য অফিসের পক্ষ থেকে তাকে সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন